লভেরিয়ার বলিউড এখন ‘সেন্সরিয়া’য় ভুগছে। ‘সেন্সরাইটিস’ও বলা যেতে পারে। রোগের নামকরণ করেছেন কর্ণ জোহর। সেন্সর-আতঙ্কে মুম্বই ইন্ডাস্ট্রির মেজাজ এখন রণং দেহি।
কেন্দ্রীয় ফিল্ম সেন্সর বোর্ডের প্রধান পহলাজ নিহালনির সঙ্গে প্রথম থেকেই বারবার ঠোকাঠুকি লাগছে ইন্ডাস্ট্রির। কখনও জেমস বন্ডের চুমু ছেঁটে, কখনও পর্দায় গালিগালাজে রাশ টানতে চেয়ে, কখনও দেদার ‘এ’ সার্টিফিকেট বিলিয়ে নিহালনি লাগাতার বিতর্কে জড়াচ্ছেন। কিন্তু শাহিদ কপূর-আলিয়া ভট্ট-করিনা কপূর অভিনীত নতুন ছবি ‘উড়তা পঞ্জাবে’ কাঁচি চালিয়ে নিহালনি এ বার বলিউডকে একেবারে দ্বন্দ্বযুদ্ধে নামিয়ে দিয়েছেন। গত কয়েক দিন ধরে গরমাগরম তরজার পরে বুধবার ছবিটির প্রযোজক অনুরাগ কাশ্যপ সরাসরি আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন। পরিচালক-প্রযোজকরা একযোগে সাংবাদিক সম্মেলন করে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন। মহেশ ভট্ট, মুকেশ ভট্ট, কর্ণ জোহর, জোয়া আখতার, ইমতিয়াজ আলি, রামগোপাল বর্মারা সকলেই বলছেন, দেশে বাক্-স্বাধীনতা বিপন্ন।
এর আগে বিক্ষিপ্ত ভাবে সেন্সরের বিরুদ্ধে গলা তুলছিল বলিউড। অসহিষ্ণুতা বিতর্কে মুখ খুলেছিলেন শাহরুখ-আমির খানের মতো তারকারা। কিন্তু ‘উড়তা পঞ্জাব’কে ঘিরে এ বার সম্মিলিত প্রতিবাদ গড়ে উঠতে দেখা যাচ্ছে। মহেশ ভট্টর কথায়, ‘‘সমস্যাটা আর নেহাতই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির নয়। গোটা দেশের। এমন চললে, এ দেশে সিনেমা করাটাই লাটে উঠবে।’’ কর্ণ লিখেছেন, ‘‘আমি তো তাও হাসিখুশি ছবি তৈরি করি। তাতেও সেন্সরিয়ায় ভুগছি। এখন তো ‘বম্বে’ বললেও সেন্সরে আটকায়!’’ অমিতাভ বচ্চন কলকাতায় এসেছিলেন ‘তিন’ ছবিটির প্রচারে। সেখানেও ‘পঞ্জাব’ নিয়ে প্রশ্ন। অমিতাভ অবশ্য বিষয়টি খুব ভাল ভাবে জানেন না বলে দাবি করলেন। তবে তাঁরও আর্জি, ‘‘দয়া করে সৃষ্টিশীলতাকে খুন করবেন না।’’
পঞ্জাবে মাদক চক্রের রমরমা নিয়ে ‘উড়তা পঞ্জাব’-এর গল্প। তাতেই রাজ্যটির ভাবমূর্তি চুরমার হয়েছে বলে দাবি করে সেন্সর বোর্ড ছবিটির নাম থেকে ‘পঞ্জাব’ বাদ দিতে বলেছে। সুপারিশ করেছে ৮৯টি ‘কাট’। গত বছর থেকে নয়-নয় করে ১০-১১টি ছবি নিহালনির তোপের মুখে পড়েছে। একদা ‘মশলাদার’ ছবির জন্য পরিচিত নিহালনি বর্তমানে ‘সংস্কারী’ ভাবমূর্তি বানাতে ব্যস্ত। সমকামিতা আছে বলে ‘আলিগড়’-এর ট্রেলরকেও তিনি ‘এ’ তকমা দেন। বাচ্চারা ভয় পেতে পারে ভেবে ‘জাঙ্গল বুক’ও ‘ইউ এ’ পায়।
নিহালনি সরকারের সামন্তপ্রভুর মতো কাজ করছেন বলে অভিযোগ করছেন অনুরাগ। নিহালনির দিকে উড়ে এসেছে ‘মোদীর চামচা’ হওয়ার তকমা। মোদীর গুণকীর্তন করে তাঁর বানানো ভিডিও ছবিই এই আরোপ উস্কে দিয়েছে। নিহালনিও বুক বাজিয়ে নিজেকে মোদীর ‘গর্বিত চামচা’ বলে দাবি করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ছবিটিতে পঞ্জাবের কদর্য দানবিক ভাবমূর্তি পেশ করা হয়েছে।’’ এর পিছনে আপ-এর কারসাজি আছে বলে তাঁর অভিযোগ। অনুরাগ সে দাবি নস্যাত করে বলেছেন, ভদ্রলোক ঠিক করে মিথ্যেও বলতে পারেন না।
ছবির ভাগ্য এখন ঝুলে ফিল্ম সার্টিফিকেশন অ্যাপেলেট ট্রাইবুনাল (এফক্যাট)-এর রায়ের উপরে। কিন্তু সেন্সর বোর্ডের লিখিত সুপারিশ এখনও মেলেনি। তা না-পেলে এফক্যাট-এ যাওয়া যাবে না। এ দিকে ১৭ জুন ছবিটি মুক্তির কথা। এই পরিস্থিতিতে বম্বে হাইকোর্টের দ্বারস্থ প্রযোজক। আজ ফের শুনানি।
আরও পড়ুন
ভোটযাত্রার পঞ্জাবই কি উড়ানের কাঁচি