আশঙ্কা সত্যি হল!

কঙ্গনা রানাবতের ‘কুইন’ হিন্দি ছবির ইতিহাসে যুগান্তকারী হলেও সেই ছবির একটি বড় সমস্যা ছিল। শশাঙ্ক ঘোষের ‘বীরে দি ওয়েডিং’-এর ট্রেলারেও সেই সমস্যার আশঙ্কা ছিল। ছবিটি দেখার পরে ভয়টা সত্যি হল!

Advertisement

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৮ ০০:২৮
Share:

কঙ্গনা রানাবতের ‘কুইন’ হিন্দি ছবির ইতিহাসে যুগান্তকারী হলেও সেই ছবির একটি বড় সমস্যা ছিল। শশাঙ্ক ঘোষের ‘বীরে দি ওয়েডিং’-এর ট্রেলারেও সেই সমস্যার আশঙ্কা ছিল। ছবিটি দেখার পরে ভয়টা সত্যি হল!

Advertisement

ছবির শুরুতেই অষ্টাদশী কালিন্দী (করিনা), অবনী (সোনম), সাক্ষী (স্বরা) ও মীরার (শিখা) স্কুল-পরবর্তী পরিকল্পনার আড্ডা চরিত্রগুলির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে একটা আভাস দেয়। ঘড়ির কাঁটা যখন দশ বছর এগোয়, তখনও চরিত্রগুলি সেই আভাস দেওয়া পথের পথিক। মা-বাবার দাম্পত্য কলহের তিক্ততা ভুলতে না পারা কালিন্দী তিন বছরের লিভ-ইন-পার্টনার ঋষভকে (সুমিত) বিয়ে করতে ভয় পায়। অবনী সফল বিবাহবিচ্ছেদ আইনজীবী। কিন্তু মায়ের মন রাখতে কোনও পাত্রই তার পছন্দ নয়। বাবা-মায়ের তিন কোটি টাকা খরচ করে বিয়ে করলেও, এক বছরের মধ্যেই সাক্ষী ফিরে আসে বাপের বাড়িতে। আর দু’বছরের ছেলের মা মীরা বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করে এক সাহেবকে। কিন্তু-কিন্তু করেও বিয়েতে রাজি হয় কালিন্দী। তার বিয়ে ঘিরেই চার বান্ধবীর পুনর্মিলন, গল্পের এ দিক, ও দিক বিচরণ।

পশ্চিম দিল্লির উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারের চার স্বাধীনচেতা মেয়ে নিজেদের শর্তে জীবন বাঁচে: মদ খাওয়া, সিগারেট খাওয়া, কথায় কথায় ইংরেজি চার অক্ষর ও হিন্দি পাঁচ অক্ষর বলা, যৌন সম্পর্ক স্থাপন নিয়ে তাদের কোনও ছুতমার্গ নেই। এমনকী তাদের পরিবারেরও নেই। এই পর্যন্ত বিষয়টা মন্দ লাগে না। কিন্তু চারটি চরিত্রের মধ্যে অবনী ছাড়া বাকিরা অর্থ উপার্জনের জন্য কিছু করে না। কালিন্দী অস্ট্রেলিয়ায় লিভ-ইন করত। ছবিতে না দেখালেও ধরে নেওয়া যায়, জীবিকা নির্বাহের জন্য সে কিছু অন্তত করত।

Advertisement

যে ছবির মোদ্দা কথা, মেয়েদের নিজেদের শর্তে বাঁচা, সেখানে আর্থিক স্বাধীনতার প্রশ্নটিকে এড়িয়ে গেলে মেয়েদের অবাধ স্বাধীনতার প্রশ্নকেই প্রকারান্তরে পিছনে ঠেলে দেয় না? ‘কুইন’-এ রানি বিয়ে না করে প্যারিসে মধুচন্দ্রিমায় যায়। তবে সেখানে যাওয়ার জন্য ভরসা ছিল তার বাবার টাকা। উচ্চবিত্ত বাবার বীরেরাই কি তবে শুধু এমন স্বাধীনতার দাবি করতে পারে?

ছবিতে ফর্মুলামাফিক চার বান্ধবীর ফুকেত ভ্রমণও আছে। কিছু সংলাপে হাসি পেলেও মনে রাখার মতো সংলাপ কমই। সোনম কপূর অভিনয়টা এখনও শিখে উঠতে পারলেন না। করিনা কপূর খানকে দেখতে ভাল লাগে। তবে ওইটুকুই। স্বরা ভাস্কর ও শিখা তালসানিয়ার মুখে সংলাপের ঘনঘটা থাকলেও চরিত্র দু’টি উত্তরণের পথ দেখায় না। মেয়েপ্রধান ছবিতে জোরালো পুরুষ চরিত্র থাকবে না, এটাই ফর্মুলা। সুমিত ব্যাস, কালিন্দীর সমকামী কাকার চরিত্রে বিবেক মুসরানও তার ব্যতিক্রম নয়।

বীরে দি ওয়েডিং পরিচালনা: শশাঙ্ক ঘোষ অভিনয়: করিনা, সোনম, শিখা, স্বরা, সুমিত ৪.৫/১০

মেয়েদের জীবন রূপকথা নয়। তারা ভুল করে, ঠকে-ঠকায় এব‌ং শেখে। এই সত্যি প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে সব কিছু নিমেষের মধ্যে ঠিক হয়ে গেলে সেই ছবিও রূপকথাই হয়ে যায়! প্রবাসী বাঙালিকে নিয়ে ঠাট্টা করার জন্য ছবির আরও কিছু নম্বর কাটা গেল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন