বাংলা ছবির জন্য এখনও ভাল চিত্রনাট্য পাইনি

অকপট পরিচালক সুজিত সরকার। ‘অক্টোবর’ নিয়ে প্রমোশনে ব্যস্ত তিনি। ‘ভিকি ডোনার’ থেকে ‘পিকু’— তাঁর ছবির অপেক্ষায় সিনেমাপ্রেমী। অমিতাভ বচ্চন থেকে শাহরুখ খান, তাঁর ছবিতে অভিনয়ের জন্য মুখিয়ে। অথচ তিনি আজও নিজেকে প্রথমে ফুটবলার ভাবেন তার পর চলচ্চিত্র পরিচালক! মুম্বইতে টেলিফোনে তাঁকে ধরলেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়।অকপট পরিচালক সুজিত সরকার। ‘অক্টোবর’ নিয়ে প্রমোশনে ব্যস্ত তিনি। ‘ভিকি ডোনার’ থেকে ‘পিকু’— তাঁর ছবির অপেক্ষায় সিনেমাপ্রেমী। অমিতাভ বচ্চন থেকে শাহরুখ খান, তাঁর ছবিতে অভিনয়ের জন্য মুখিয়ে। অথচ তিনি আজও নিজেকে প্রথমে ফুটবলার ভাবেন তার পর চলচ্চিত্র পরিচালক!

Advertisement

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৮ ১৫:২৪
Share:

মুক্তির প্রতিক্ষায় সুজিতের পরবর্তী ছবি অক্টোবর।

তা হলে ফুটবল নিয়ে ছবি হবে না?
ফুটবল নিয়ে ছবি করার ইচ্ছে অনেক দিনের। ১৯১১-য় মোহনবাগান আর ব্রিটিশদের খেলা নিয়ে ছবি করার ভাবনা তো ভেবেই রেখেছি। দেখি কবে হয়?

সুজিত সরকারের ছবি দেখার জন্য এমনিতেই তো দর্শক হলমুখী, অথচ আপনি বছরে একটা ছবি করেন, বা হয়তো সেটাও না…
নাহ, আসলে আমার কোনও তাড়া নেই। লোকে যে কী ভাবে বছরে দু’তিনটে ছবি করে আমি তো অবাক হয়ে দেখি। আমার পক্ষে এ ভাবে ভাবাই অসম্ভব! আমার চিত্রনাট্য লিখতে দু’ থেকে তিন বছর লাগে।

সেকি!
হ্যাঁ। এই তো ‘অক্টোবর’ পিকুর আগে লেখা। ২০১৬-তে ছবিটা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ‘দান’-এর মতো চরিত্র পাচ্ছিলাম না তাই করিনি। এক দিন সকালে বরুণ আমার সঙ্গে চা খেতে এল। ওর ভাব-ভঙ্গি দেখে মনে হল এই তো ‘দান’। আসলে ছবিতে চরিত্ররা এ ভাবেই আসে। আমি এত সময় নিয়ে চিত্রনাট্য লিখছি আর সেখানে আগেই কাস্টিং হয়ে যাবে! আমি না এ ভাবে ভাবতে পারি না। চরিত্র আগে আমার কাছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: ‘টলিউডের কোন ক্যাম্পে কী ক্যাম্পেনিং করতে হয় সেটাই বুঝি না’

বরুণের ক্ষেত্রে আপনি নাকি ওঁকে বলেছিলেন কান্নার দৃশ্যে চোখে গ্লিসারিন দেওয়া যাবে না?
হ্যাঁ। বরুণ যে ভাবে নিজেকে আমার কাছে সারেন্ডার করেছে ভাবা যায় না। এখন যেমন অ সুই ধাগা ছবির শ্যুট করছে, কিন্তু ‘অক্টোবর’-এর গান রিলিজের জন্য শ্যুট ছেড়ে চলে এল। ইন ফ্যাক্ট, সকলে ট্রেলার দেখে বলছে বরুণের এটা প্রথম ছবি। ওকে ‘অক্টোবর’-এ এতটাই ফ্রেশ লাগছে। আসলে এত দিন বরুণ যে ধরনের ছবি করেছে তার সঙ্গে আমার সিনেমার কোনও মিল নেই, সেই কারণেই এটা ওর ক্ষেত্রে একটা নতুন শুরু।

Advertisement

এটা তো আপনার ছবির ইউএসপি। অমিতাভ বচ্চন-ও আপনার ছবিতে ‘ভাস্কর ব্যানার্জি’ হয়ে দর্শকদের মনে থেকে যান!
জানি না, তবে আমি আমার দেখা জীবন, সামনে চলা মানুষের শব্দ, গন্ধ, সময় নিয়ে কাজ করি। তাই চরিত্রগুলোকে জীবন্ত লাগে। দীপিকাকে পিকুতে দেখে যেমন সবাই বলেছিল পাশের বাড়ির মেয়ে।

ট্রেলারে তো দেখছি ‘অক্টোবর’ ভালবাসার ছবি নয়? এটা কোন জীবনের কথা?
‘অক্টোবর’ আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে লেখা।

‘অক্টোবর’য়ে বরুণ।

মানে আপনার প্রেম বা সম্পর্ক?
ছবিটা দেখুন, তার পর আবার আমরা কথা বলব। আগেই কিছু ভেবে বসবেন না প্লিজ। ‘অক্টোবর’ প্রেমের ছবি নয় কিন্তু প্রেম বিষয়টা নিয়ে ডিল করে। আসলে আমি সম্পর্কের সূক্ষ্ম বিষয়গুলো আমার ছবিতে ধরতে চাই। এই সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে যা হয়তো হারিয়েও যাচ্ছে। মানুষ দ্রুত সব কিছুতে পৌঁছতে চাইছে। আমি আমার ছবির মাধ্যমে গাড়িকে একটু ধাক্কা দিয়েই থামাতে চাই। আর সেই কারণেই ‘অক্টোবর’। ‘পিকু’ যেমন বাবা-মেয়ের সম্পর্কের ছবি ছিল। বয়সের সমস্যাকে বোঝানো গিয়েছিল।

পিকুর সিকুয়েল কি হবে?
সবাই খুব বলেছিল, তবে ব্যবসা বা বাজারের কথা ভেবে জোর করে ‘পিকু-২’ বানাব না। সে স্বভাব আমার নয়। আমি ছবিকে কমোডিটি বা প্রডাক্ট হিসেবে দেখি না। সেই কারণে নিজের ছবি নিজে প্রডিউস করি। আমার ছবি আমার কাছে আমার হৃদয়। আত্মা।

আপনার এই আত্মা বাংলা ছবিকে কবে সমৃদ্ধ করবে? ‘ওপেন টি বায়োস্কোপ’-এর পর সকলে ভেবেছিল আপনি বাংলা ছবির জন্য আরও কাজ করবেন।
দেখুন, আমার নিজের তাই ইচ্ছে ছিল। আজও আছে। আমি প্রচুর পরিচালকের সঙ্গে কথা বলেছি, চিত্রনাট্য বা গল্প শুনেছি। আমার কিন্তু পছন্দ হয়নি। আমারই যদি পছন্দ না হয় দর্শককে পছন্দ করাব কী করে? ভাল বাংলা স্ক্রিপ্টের অপেক্ষায় আছি আমি।

আরও পড়ুন: ‘টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারি না’

আগের সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, বাংলা সাহিত্য নিয়ে আপনার কাজ করার ইচ্ছে আছে...
আছে তো। আমার তো মনে হয় বাঙালিদের কাছে, বাংলা ইন্ডাস্ট্রির কাছে এত ভাল গল্প আছে, বাংলা সাহিত্য এত সমৃদ্ধ!

কিন্তু বাংলা ছবি তো হাতে গোনা হিট হয়!
হ্যাঁ, বাংলা ছবির যে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পৌঁছনর কথা ছিল সেটা কিন্তু হয়নি। হবে হয়তো। সময় লাগবে আরও। আমি মনে করি, ঋতুপর্ণ ঘোষের পর সেই জায়গায় বাংলা ছবিকে নিয়ে যেতে পারেনি কেউ। একটা স্পিরিটেরও ব্যাপার থাকে।

আপনার ফুটবল খেলার স্পিরিট এখন কী বলছে?
ওটা সকলের আগে। এখনও রোজ সকালে ফুটবল দিয়ে আমার দিন শুরু হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন