চিত্রা সেন।
আপনার এত দিনের অভিজ্ঞতা। আর অভিষেক নতুন পরিচালক। কেমন লাগল ওঁকে?
অভিষেক কম কথার মানুষ। কিন্তু যেটা চায় আদায় করে নেয়। ওর ভাবনাও খুব পরিষ্কার। তবে আমরা শিল্পীরা কোনও সিন করার পর পরিচালকের কাছ থেকে রিঅ্যাকশন আশা করি। ওর সেটা একেবারেই নেই। ও এমন একটা মুখ করে বসে থাকে, দেখে বোঝা যায় না। ও বলে, খারাপ হলে তো বলতাম। খুব ফ্লেক্সিবল। আমাদের অনেক স্বাধীনতাও দিয়েছে।
চরিত্রটা যখন পেলেন, কী মনে হয়েছিল?
স্ক্রিপ্ট পড়েছে যখন, তখনই আমার মনে হয়েছিল একেবারেই অন্য ধরনের। অন্য শেডস। প্রত্যেকটা লাইন পড়ছে আর মনে হচ্ছে এই জায়গাটা এ ভাবে করলে ভাল হয়। তখনই ভাবছিলাম চরিত্রটা কী ভাবে বিল্ড আপ করব।
আপনিই এখানে সবচেয়ে সিনিয়র। সুদীপ্তার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে। আর বাকি দু’জন রাজনন্দিনী এবং অমর্ত্য একেবারেই নতুন…
(প্রশ্ন শেষ করতে না দিয়েই) বাচ্চাদের কিন্তু আমার খুব ভাল লেগেছে। ওরা এত হোমওয়ার্ক করেছে, যেটা এই ছবির চরিত্রের জন্য ভীষণ দরকার ছিল। এই ছবিটায় কিন্তু ফ্লোরে গিয়ে ডায়লগ বলা যেত না। প্রিপারেশন দরকার ছিল। সেটা ওরা তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুন, ‘এখন তো শুক্রবার রিলিজ হলে রবিবারই সুপারহিট লেখা হচ্ছে’
পুরো ছবিটাই তো আউটডোর শুটিং?
হুম। লোকেশন ভয়ানক ছিল। ভয় পেয়েছি এমন নয়। চরিত্র যে সিচুয়েশন ডিমান্ড করে সেটাই রয়েছে ছবিতে। পুরোটা আউটডোরে। ফলে শুটিংটা নির্ভর করছিল আবহাওয়ার ওপর। যদি বৃষ্টি নামে, রোদ চলে যায়— এ সব নিয়ে ভাবতে হয়েছে। প্রচন্ড গরম। পুরুলিয়ার পাথুরে গরম। কষ্ট হলেও চরিত্রটা করে খুব আনন্দ হয়েছে। শুটিং হওয়ার পর কষ্টটা আর কষ্ট মনে হচ্ছিল না। মনে হয়েছিল এটাই দরকার।
এত দিন প্রসেনজিত্ চট্টোপাধ্যায়কে অন্য ভাবে চিনতেন। আর এই ছবিতে উনি প্রযোজক…
(হেসে) মজার কথা, বুম্বাকে এত ছোট থেকে দেখেছি…। আমার হাজব্যান্ড (শ্যামল সেন) একটা নাটক করেছিল টেনিদা সিরিজ নিয়ে। সেখানে বুম্বা ক্যাবলার চরিত্র করেছিল। আমার ছেলে (কৌশিক সেন) কম্বল হয়েছিল। ওর তখন পাঁচ-ছ’বছর। বুম্বাকে তখন থেকে দেখছি। ওর বড় হওয়া, ছবি করা…। ওর মায়ের সঙ্গে আলাপ…। ওর বাবার সঙ্গেও কাজ করেছি। তার পর ও প্রযোজক হল। এত সিনসিয়ারিটি, এত ধৈর্য্য না থাকলে একটা জায়গায় পৌঁছনো যায় না।
প্রযোজক প্রসেনজিতের সবচেয়ে ভাল লাগার জায়গা কোনটা?
আমার সবচেয়ে ভাল লাগছে ও নতুনদের নিয়ে কাজ করছে। নতুনদের সুযোগ করে দেওয়ার রিস্কটা অনেকে নিতে চায় না। সেটা একটা সাঙ্ঘাতিক গুণ। যার যে সম্মান প্রাপ্য তাকে সেই সম্মানটাও দেয় ও। ওর ভাবনার লেভেলটাও অন্য রকম। সেটা না হলে এই সাবজেক্টটা বাছতে পারত না। আফটার অল প্রযোজক। টাকা ফেরতের চিন্তা থাকে। ও কিন্তু সেই চাপটা নিয়েছে।
কিছু দিন আগেই আপনার নাতি (ঋদ্ধি সেন) জাতীয় পুরস্কার পেলেন। অনুভূতিটা কেমন?
ওর এই সাফল্য যে আমি দেখে যেতে পারলাম, এটাই আমার কাছে বড় কথা। আমার তো বয়স বাড়ছে। হাজব্যান্ডকে খুব মিস করি। ও থাকলে হয়তো আরও এনজয় করত। আমি দেখতে পারলাম এটাই বড় প্রাপ্তি। ও আরও বড় হোক।
আরও পড়ুন, আগের সম্পর্কের সব খারাপ লাগা মুছে ফেলেছি, বলছেন শ্রাবন্তী
আপনাদের অভিনয়ের পরিবার। বাড়িতে কাজ নিয়ে আলোচনা হয়?
হ্যাঁ, হয়। আমি অভিনয়ের ক্ষেত্রে ওদের সমালোচনাও করি। এই জায়গাগুলো এমন করলে ভাল হত। ছেলেকে বলি, এই জায়গাটা একটু কমপ্যাক্ট দরকার ছিল। অথবা এই শিল্পীকে এতটা মুভমেন্ট না করালেও হত। আমি দর্শক হিসেবে সমালোচনা করি, যাতে আরও ভাল হয়।
এত দিনের অভিজ্ঞতা, কী কী বদল দেখছেন ইন্ডাস্ট্রিতে?
ইয়ং জেনারেশনের সঙ্গে কাজ করতে আমার কিন্তু অসুবিধে হয় না। এটা কেন বল তো? আমি নাটক করি বলে। নাটকে প্রচুর নতুন ছেলেমেয়ে আসে। রিহার্সাল করে কাজ করি। এখন তো থার্ড-ফোর্থ জেনারেশনের সঙ্গে কাজ করছি। শুধু একটা কথাই বলব, যে কাজ করতে এসেছে সেই ভিতটা তৈরি থাকলে নিজেদেরই এগিয়ে যাওয়ার পথে সাহায্য করবে। হোমওয়ার্ক করা, চরিত্রের জন্য নিজেকে চেঞ্জ করার অভ্যেসটা দরকার।
‘উড়নচণ্ডী’র টিমে সবচেয়ে সিনিয়র চিত্রা।
নতুনদের মধ্যে কি সেই অভ্যাসের অভাব রয়েছে?
হুম। হোমওয়ার্কের একটু অভাব রয়েছে।
কেন বলুন তো?
সেটার কারণ হতে পারে, বেশি কাজ করা বা অন্য কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখা। এটা নিয়ে যদি একটু ভাবে, এরা ভবিষ্যতে খুব উন্নতি করবে। আমি এখনও কোনও চরিত্র পেলে তার কী কী ম্যানারাজিম, সে কী ভাবে বসতে পারে, কী ভাবে কথা বলতে পারে, সেটা নিয়ে সারাদিন ভাবতে থাকি। তবেই তো একটা পরিপূর্ণ চরিত্র তৈরি হয়। এটার একটা প্র্যাকটিশের দরকার। আমার নাতিও কিন্তু এই নতুনদের দলে। তবে ওর একটা সুবিধে আছে। কী বল তো? ওর একটা থিয়েটারের পরিবেশ আছে। একটা প্র্যাকটিস আছে। কোনও চরিত্র পেলে ও সেটা নিয়ে সারাক্ষণ পড়ে থাকে। সেটাতে ওর সুবিধে হয়।
আরও পড়ুন, কাস্টিং কাউচের জন্য কিছু বড় ব্যানারের ছবি চলে গিয়েছে, বিস্ফোরক সৌমিলি
দীর্ঘ কেরিয়ারে কোনও আক্ষেপ রয়েছে?
না! না পাওয়ার আক্ষেপ আমি করি না। তবে মনে হয়, আরও একটু ভাল চরিত্রের সুযোগ পেলে ভাল হত। কিন্তু ন্যাগিং করি না। যেটা পাই সেটাই ভাল করে করার চেষ্টা করি। অনেকে জিজ্ঞেস করে, আপনাকে ছবিতে দেখছি না কেন? আরে কাজ পাচ্ছি না, তাই দেখছ না। কাজ পেলেই করব। তবে কি জান, আমাকে কেউ ভাবে না, ভাববে না, এমন চরিত্র করতে ইচ্ছে করে।