প্রতীম ডি গুপ্ত।
হঠাত্ ‘মাছের ঝোল’ কেন?
বাঙালি খেতে ভালবাসে। খাবার নিয়ে প্রচুর ছবি বিদেশে হয়। এখানে কেন এত দিন হয়নি, সেটাই আমার কাছে সারপ্রাইজিং। ‘মাছের ঝোল’ এই ছবিতে একটা ক্যারেক্টার।
না, জানতে চাইছি, এটা তো আলুপোস্ত বা মিষ্টি দইও হতে পারত?
ক’দিন আগে ‘পোস্ত’ বলে একটা ছবি হয়েছে বলে আমার ছবির নাম ‘মাছের ঝোল’— এমন নয় কিন্তু (হাসি)।
আইডিয়াটা এল কী ভাবে?
ইতালিতে বেড়াতে গিয়ে দেখেছিলাম ওখানে লোকে রেস্তোরাঁতে গিয়ে পুরনো রেসিপি খোঁজেন। মা-ঠাকুমার হাতের রান্না খাওয়ার জন্য মানুষ রেস্তোরাঁতে যান। সেখান থেকেই এটা ভেবেছিলাম।
গল্পটা কেমন? যদি একটু শেয়ার করেন প্লিজ…
এই ছবিতে ঋত্বিক এক বিখ্যাত শেফ। প্যারিসে থাকে। অনেক বছর পর কলকাতায় ফেরে। তখন ওর মা অসুস্থ। মা ওর কাছে সেই মাছের ঝোলটা খেতে চান, যেটা তিনি তৈরি করতেন। সেই ঝোলটা বানানো নিয়েই গল্প। বাকি চরিত্রগুলোর সঙ্গেও খাবারের যোগসূত্র রয়েছে। খাবারই সকলকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়।
আরও পড়ুন, গৌরব আমার প্রথম প্রেম নয়, বললেন ঋদ্ধিমা
মা-ছেলের এই গল্পটা কি আপনার জীবনের?
আমার জীবনের সঙ্গে কিছুটা মিল রয়েছে। কিছুটা ফিকশন।
মিলটা বলুন…
স্কুলে আমার পরীক্ষা থাকলে মা একটা মাছের ঝোল রান্না করত। একদম সিম্পল। কোনও মশলাপাতি নেই। রোগীর পথ্যের মতো। এক দিকে পরীক্ষার টেনশন। আর এক দিকে ওই ঝোল…বিরক্তিকর লাগত। অনেক দিন ওই ঝোলটা খাইনি। তার পর হঠাত্ এক দিন ওই ঝোলটাই মিস করতে শুরু করি।
ঋত্বিককে ডি-গ্ল্যাম লুকেই কাস্ট করেন বেশির ভাগ পরিচালক। আপনিও করেছিলেন প্রথম ছবি ‘সাহেব বিবি গোলাম’-এ। এ বার একেবারে পলিশড লুক।
ঋত্বিকের ওই লুকটাকেই আমি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছি। ওর একটা হাল্কা টাক রয়েছে। ও নিজেই সেটা বদার করে না। এখানে আমি শুধু একটা চশমা পরিয়েছি।
ঋত্বিককে কাস্ট করার কথা নাকি গল্পের আগেই ভেবেছিলেন?
‘সাহেব বিবি গোলাম’ করার আগে ঋত্বিককে মিট করিনি। ওকে অনস্ক্রিন দেখে একটা আইডিয়া ছিল। কাজ করার পর মনে হয়েছে ও আরও অনেক কিছু পারে। ঋত্বিককে নিয়ে একটা গোটা ছবি করব এই ইচ্ছেটা ছিল। ‘সাহেব বিবি গোলাম’-এ আগে চরিত্র এসেছে। পরে ঋত্বিক। আর ‘মাছের ঝোল’-এ ঠিক উল্টোটা।
কয়েক বছর ধরে বাংলা ছবির বিষয় কি বদলাচ্ছে? যদি বদল হয়, আপনি কি সে বদলের শরিক?
বদল যে খুব হচ্ছে আমার তা মনে হয় না। আমার তো মনে হয় একই ধরনের ছবি হচ্ছে। ‘প্রাক্তন’— নতুন বিষয় কি? ফেলুদা, ব্যোমকেশ ভাঙিয়ে এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন ডিরেক্টররা। সৃজিতের মতো ভাল রাইটার-ডিরেক্টর মেনস্ট্রিম ছবি বানানো শুরু করেছে। মৈনাক নিজেকে রিপিট করছে। আসলে বক্স অফিসটা এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গিয়েছে যে সবাই ডেসপারেট হল ভরানোর জন্য।
আরও পড়ুন, ‘মন এবং শরীর থেকে মেদ সরানোর চেষ্টা করেছি’
বক্স অফিস সাফল্যের ব্যাপারে কি আপনি কনফিডেন্ট?
আমার ছবি বক্স অফিসে ভাল করুক আমি নিশ্চয়ই চাই। আমার গল্প বলা দর্শকের জন্য। তবে সাংঘাতিক হিট হতে হবে বলে তো আমি ছবি তৈরি করি না। ইন্ডাস্ট্রি কী করছে সেটা ভেবেও ছবি করি না। আমার ভাল লাগছে বলে ছবি তৈরি করি। দেখুন, আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে এমন কোনও সুপারস্টার নেই যাকে দেখতে লোকে হলে যাবে। সেটা হলে ‘চ্যাম্প’ বা ‘বস ২’ দারুণ হিট হত। আমাদের আইডিয়া বেসড ইন্ডাস্ট্রি। সেই আইডিয়া দিয়েই সারভাইভ করতে হবে।
আপনি ছাড়া আর কোনও পরিচালক নতুন সাবজেক্ট নিয়ে কাজ করছেন?
কৌশিকদা। সব সময় অন্য রকম চেষ্টা করেন। ‘বিসর্জন’, ‘ছোটদের ছবি’, ‘সিনেমাওয়ালা’ সব নতুন বিষয়। এখন অরিন্দমদাও নতুন সাবজেক্টে কাজ করছেন।
আর কোনও পরিচালকের কথা বলছেন না, ইন্ডাস্ট্রিতে আপনার অনেক শত্রু নাকি?
শত্রু হয়তো নেই। কিন্তু কেউ যে কারও ভাল চায় না, এটা বোঝা যায়।
কী ভাবে?
এতই যদি ভালবাসা থাকে তা হলে একই শুক্রবার একসঙ্গে এতগুলো ছবি রিলিজ করত না। পুজোতেও একসঙ্গে ৬-৮ টা ছবি রিলিজ করছে। সবাই ভাবছে আমি কেন সরে দাঁড়াব? আমি কেন পুজোর লাভটা নেব না? এখানেই তো সেলফিশ গন্ধ পাচ্ছি। ‘মাছের ঝোল’ ১১ অগস্ট রিলিজের কথা ছিল। কিন্তু ওই দিন আর একটা ছবি রিলিজ হয়েছে। ছবির প্রযোজক এবং আমাকে রিলিজ এক সপ্তাহ পিছিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করা হয়। আমার অনুরোধটা খুব লজিক্যাল মনে হল। আমি ১১ থেকে সরে গিয়ে ১৮ অগস্ট রিলিজ করছি।
শর্ট ফিল্ম নিয়ে আপনি কতটা আশাবাদী? এটাই কি ভবিষ্যত?
খুব খারাপ কোয়ালিটির প্রচুর শর্টফিল্ম অলরেডি ইউটিউবে রয়েছে। সেগুলো নিয়ে দর্শকের আগ্রহ আছে বলে মনে হয় না। এখন যদি ভাল প্রোডাকশন, পরিচালক, অভিনেতাদের নিয়ে শর্টফিল্ম তৈরি হয় তা হলে দর্শকের ভাল লাগতে পারে। তবুও বলব, বাংলার দর্শক পয়সা খরচ করে ইন্টারনেটে ছবি দেখছে— এই সিচুয়েশন আসতে এখনও দেরি আছে বলেই মনে হয়।
আরও পড়ুন, দেব, জিত্, প্রসেনজিতদের লড়াইয়ে জিতলেন কে?
আপনি নিজে শর্টফিল্ম করছেন?
পাওলি দামকে নিয়ে এক ঘণ্টার একটা হিন্দি থ্রিলার তৈরি করেছি। প্রথমে ওটা একটা চ্যানেলে দেখানো হবে। তার পর অনলাইন দেখতে পাবেন দর্শক।
ছবির নাম?
এই রে, এখন এর থেকে বেশি বলার পারমিশন নেই।
ছবি: প্রতীম ডি গুপ্তর ফেসবুক পেজের সৌজন্যে।
(ভ্রম সংশোধন: এই সাক্ষাত্কারের প্রথম সংস্করণে প্রতীম ডি গুপ্তর প্রথম ছবি হিসেবে ‘সাহেব বিবি গোলাম’ প্রকাশিত হয়েছিল। তথ্যটি ভুল। প্রতীমের প্রথম ছবি ‘পাঁচ অধ্যায়’। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী)