শান-টার মন খারাপ বছরেশষে

মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে সবার প্রিয়পাত্র। তার বাইরেও। কিন্তু সেই তিনিই বিস্ফোরক সাক্ষাত্‌কার দিলেন ইন্দ্রনীল রায়-কে। কেন এত উত্তেজিত শান? পড়ুন...মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে সবার প্রিয়পাত্র। তার বাইরেও। কিন্তু সেই তিনিই বিস্ফোরক সাক্ষাত্‌কার দিলেন ইন্দ্রনীল রায়-কে। কেন এত উত্তেজিত শান? পড়ুন...

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:০০
Share:

‘পিকে’ ছবিতে আপনার গান ‘চার কদম’ তো হিট। কলার টিউনও তাই... শান তা হলে ইজ ব্যাক...

Advertisement

হ্যাঁ। ভাল লাগছে। একটু সারপ্রাইজডও। আজকাল তো শুনি এ রকম গান চলে না, ও রকম গলা পাবলিকের পছন্দ নয়। তা সত্ত্বেও মানুষের ভাল লেগেছে। পুরো ক্রেডিটটাই সঙ্গীত পরিচালক শান্তনুু মৈত্র আর পরিচালক রাজকুমার হিরানির। আসলে আজকাল এত কম গান পাই যে হিট হলেই অবাক লাগে।

সবাই কি তা হলে এখন ইয়ো ইয়ো হানি সিংহ চাইছে....

Advertisement

হ্যাঁ, ওই আর কী! ‘চার বটল ভডকা’র যুগ এখন। খারাপ লাগে নতুন জেনারেশনের জন্য। ওরা তো ভাল গান শুনছেই না। এখন গান বানানো সহজ হয়ে গিয়েছে। ভডকা, হুইস্কির সঙ্গে কুড়ি, চক দে ফাট্টে-র মতো

কিছু শব্দ... ব্যস গান হয়ে গেল। তার পর একটা হট মিউজিক ভিডিও... ব্যস গান হিট।

আজ যখন কোনও মিউজিক ডিরেক্টর আপনাকে গান অফার করেন তখন কী ভাবেন? এটা ভাবেন কি, কিছু না ভেবেই গানটা গেয়ে দিই। চেকটা তো পেয়ে যাব...

(শানসুলভ হেসে) কিন্তু অনেস্টলি, আমাকে তো কেউ ভডকা, হুইস্কির গানও দিচ্ছে না। হয়তো আমার ভয়েসে একটা ভদ্রতা রয়েছে। একটা ডিসেন্সি রয়েছে।

এখন তো ইনডিসেন্ট ভয়েসের রমরমা। আর ধরুন একটা গান, লিরিকস হচ্ছে, ‘ম্যায় তুঝে চাহতা হুঁ....’। এটা তো ভাল কথা। কিন্তু আজকাল গান শুনলে দেখবেন, এই কথাটাই এমন ভাবে বলা হচ্ছে, যেন কেউ ঝগড়া করছে।

আজকাল তো অনেককেই বলতে শুনি, নতুন প্লেব্যাক সিঙ্গারের গান শুনে বোঝাই যায় না কার গলা।

তাও কিছু কিছু সিঙ্গারের গলা চেনা যায়। মিকা সিংহের গলা চেনা যায়। অরিজিত্‌ এখনও একটা মিস্ট্রি। কারণ ওর তিন-চার রকম টোন আছে গলার। তাও ওর গলা শুনে বোঝা যায়...

অরিজিত্‌ কি আজকে ভারতের এক নম্বর সিঙ্গার?

ইয়েস, অ্যাবসোলিউটলি। ওর যা ডিমান্ড, লাইভ শোয়ের বাজারে ওর যা ভ্যালু, তাতে কোনও সন্দেহ নেই অরিজিত্‌ এক নাম্বার। তবে ওকে আমি আগের জেনারেশনের সিঙ্গারদের সঙ্গে কমপেয়ার করব না। কিন্তু আজকে যারা গাইছে তাদের মধ্যে অরিজিত্‌ ইজ দ্য বেস্ট....

আজকে লোখান্ডওয়ালা কি ভারসোভাতে যখন আপনি, সোনু নিগম, উদিত নারায়ণ-রা আড্ডা মারতে বসেন, তখন কি অ্যানালাইজ করেন যে, কেন আপনারা গান পাচ্ছেন না...

না না। সেই রকম কোনও আলোচনা করি না। আর আমাদের বলে কী হবে? আপনি কুড়ি বছরের ছেলেমেয়েদের জিজ্ঞেস করুন না তারা কেন আমাদের গান শুনতে চাইছে না।

চাইছে না, কারণ ওদের সেন্স অব মিউজিকটা বদলে গিয়েছে। উদিতজি ২৫ বছর গেয়েছেন, শানুদাও তাই। আমি, সোনু আর কেকে নয় নয় করে ১৫ বছর কাটিয়ে দিলাম। তবে খারাপ লাগে, আমরা তো ট্রেন্‌ড সিঙ্গার, তাও কেন লোকে আমাদের গান শুনছে না...

আজকাল কী গানের অফার পান?

আজকাল ওই ছোট ছোট প্রোডাকশান হাউজের কিছু গান গাই। কিছু রিজিওনাল ছবির গান পাই। বড় প্রোডাকশন হাউজের কোনও ছবিতে আমার কোনও গান নেই। ‘চার কদম’ হিট হয়েছে, কিন্তু এ বছরে আপনি বিশ্বাস করবেন না, আমি একটাও গান রেকর্ড করিনি কোনও বড় ছবির।

কী বলছেন?

ইয়েস, একটাও গান রেকর্ড করিনি। কেউ ডাকেইনি। কে বলতে পারে ‘পিকে’ ছবির ‘চার কদম’ হয়তো আমার লাস্ট গান! যাকে বলে সোয়ান সং।

মানে কোনও রেকর্ডিং স্টুডিয়োতেও যাননি?

রেকর্ডিং স্টুডিয়ো! ও সব কথা আজকে নস্টালজিয়ার মতো শোনায়...

কিছু মনে করবেন না প্লিজ। একটা কথা আপনাকে জিজ্ঞেস করছি, আজকে কি সিঙ্গার শানের সংসার চলে শুধু লাইভ শো করে?

(মৃদু হাসি) লাইভ শো ছাড়াও টিভি রয়েছে। এ বছরেও ‘লিটল চ্যাম্পস্‌’ করছি আমি। আসলে এখন মার্কেটিংয়ের যুগ। পুরো মার্কেটিংয়ের টার্গেট অডিয়েন্সটার বয়স হল ১৭-২৫। ওদের কাছে টাকা আছে, ওরা অ্যাম্বিশাস, যা চাইবে মার্কেট সেটাই দেবে। এটা আমি মেনে নিয়েছি।

২০১০ কি ২০১১-তে একবার মনে হয়েছিল, কেন এ সব হচ্ছে?

স্লোলি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে কেরিয়ারটা। কিন্তু আজ মেনে নিয়েছি। আর আমি মিথ্যে বলতে পারব না...

কী রকম মিথ্যে?

অনেকেই বলে না, আমি চুজি হয়ে গিয়েছি। ও সব বললে মিথ্যে বলা হবে। কিছু চুজি নয়, গান নেই আমার কাছে। মাঝেমধ্যে প্রশ্ন করি, আমি কি আর ভাল গান গাইতে পারি না? লাস্ট গান বলতে তো সেই ‘বহেতি হাওয়া সা থা ও’। সেটাও ২০০৯-এ। পাঁচ বছর হয়ে গেল। আসলে পরিস্থিতি এতটাই বদলে গিয়েছে, আজকে মুম্বইতে যে কেউ সিঙ্গার হতে পারে।

তাই?

হ্যাঁ, আপনিও। আমি বলছি আপনি গাইলে আপনার গলাটা আমার থেকে ভাল শোনাবে।

ইয়ার্কি মারবেন না, প্লিজ...

না, কারণ আছে বলার। আপনি গাইলে কম্পিউটার আপনার গলাটা পিচ পারফেক্ট করে দেবে। তাই বেসুরো লাগবে না। কিন্তু আপনার টোনাল কোয়ালিটি খারাপ হবে। আজকাল এই খারাপ টোনাল কোয়ালিটিটাই চলছে।

এক্সপ্রেশনও আপনি দিতে পারবেন না। কিন্তু আজকাল তো এক্সপ্রেশন সব গুলিয়ে গেছে। তাই আপনার যে কোনও এক্সপ্রেশন, যে কোনও ‘হরকত’ ভাল লাগবে পাবলিকের।

‘পহেলি নজর মে ক্যায়সা জাদু কর দিয়া... ও জানে যা’ টাইপের গান শুনছে লোকে। দুঃখের, এই এক্সপ্রেশনটাই লোকে ভাল বলছে। অরিজিত্‌ সিংহের ‘আশিকি ২’-এর হিট গানটার কথাই ভাবুন না। ‘কিঁউকি তুম হি হো’।

টেকনিক্যালি কিন্তু ওটা খুব উইক একটা গান। যে কোনও এক্সপেরিয়েন্সড সঙ্গীত পরিচালক একই কথা বলবে। অরিজিত্‌ যা সেন্সিবল ছেলে, এটা সবার আগে স্বীকার করবে অরিজিত্‌ নিজেই। কিন্তু গানটা সুপার ডুপার হিট।

‘তেরি গলিয়া, ও তেরি গলিয়া...’ বলে একটা গান আছে। আপনার শুনে মনে হবে, মরে যাওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তের গান। আমি পারব না ভাই এ রকম গলা করে গাইতে। তাই কম্পোজার হয়ে গিয়েছি...

অনেকে তো জানেই না আপনি মিউজিক কম্পোজার হয়ে গিয়েছেন?

আরও কিছু কাজ করি, তারপর মানুষকে জানাব। যা বাজার আজকে, মনে হয় অনেক মিউজিক ডিরেক্টরের থেকে আমি বেশি কোয়ালিফায়েড। আরে গানটা তো রক্তে আছে, কিন্তু কুড়ি বছর আগে যদি বলতাম, আমি মিউজিক ডিরেক্টর, লোকে হাসত আমার উপর। আজ হাসে না।

তা হলে মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির বড় ক্ষতিটা কে করল? আইপড না গলা ঠিক করে দেওয়ার সফ্টওয়ার?

দু’টোই। সবচেয়ে ক্ষতি করল পুরো সঙ্গীতের ডিজিটালাইজেশনটা। আজ একজন ক্লাসিকাল শেখা নতুন গায়ক কি গায়িকার কথা ভাবলে কান্না পায়! ওরা সারা জীবনে দু’টোর বেশি ভাল গান পাবে না। ওদের গানের শিক্ষা, অধ্যবসায় দেখে ইন্ডাস্ট্রি মজা করবে। আই ফিল ভেরি ব্যাড ফর দেম।

আপনার সঙ্গে তো সব সঙ্গীত পরিচালকের দারুন সম্পর্ক। শঙ্কর-এহসান-লয় কি বিশাল-শেখর...

হ্যাঁ, সবার সঙ্গেই দারুণ সম্পর্ক। আমরা খেতে যাই, পার্টি করি...

তা ওদের জিজ্ঞেস করেন না, কেন ওরা আপনার মতো সিঙ্গারদের দিয়ে গাওয়াচ্ছেন না?

কী করে জিজ্ঞেস করব? ও রকম করে কাজ হয় নাকি! আসলে আজকে মুম্বইতে সম্মান জানানো, রেভারেন্স, সিনিয়র কেউ ঘরে ঢুকলে উঠে দাঁড়ানো— এগুলো আর কেউ করে না। ও সব পুরনো দিনে হত। আর চার বছর আগে হঠাত্‌ একদিন লক্ষ করলাম, বিশাল ভাই কি শঙ্করদের ফোন আসা বন্ধ হয়ে গেল...

একদম বন্ধ?

একদম। মাই ফোন জাস্ট স্টপড রিংঙ্গিং।

প্রীতম?

প্রীতমের সঙ্গে তবু ২০১২-১৩ অবধি কাজ করেছি। তার পর প্রীতমেরও ফোন নেই।

দেখা হলে প্রীতম বলে, ‘শান, আই মিস ইয়োর ভয়েস।’ কিন্তু গাইতে ডাকে না।

আমার বিশ্বাস এবং আমি এ ভাবেই ভাবতে চাই, ওরা আমাকে দিয়ে গাওয়াতে চায়। কিন্তু ওদেরও নিশ্চয়ই কোনও কম্পালশন আছে। জিত্‌ গঙ্গোপাধ্যায়...

জিত্‌ গঙ্গোপাধ্যায়ের ফোন আসে?

ফোন আসে। জিত্‌ সেই টোনে বলে, “গুরুদেব, কী খবর?” ও যখন স্ট্রাগল করছিল, তখন ওর পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। দেখে খারাপ লাগে, আজকে যখন ওর হাতে অনেক কাজ তখন একবার তো ফোন করে আমাকে একটা একটা গান দিতে পারত। রাগ হয় না, দুঃখ হয়।

কলকাতা থেকে এখনও যদিও ফোন আসে। ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত ফোন করে। হি ইজ আ ফ্যাবুলাস মিউজিক ডিরেক্টর। ও ‘চ্যাপলিন’ ছবিতে আমাকে আর কৌশিকীকে দিয়ে একটা অসাধারণ গান গাইয়েছিল... ‘পত্তো কা হ্যায়...’। আমার কেরিয়ারের খুব প্রিয় গান ওটা... ইন্দ্রদীপ মানুষটাও খুব ভাল।

আচ্ছা, একটু পলিটিক্সের কথায় আসি? আপনার সমসাময়িক সব বাঙালি প্লেব্যাক সিঙ্গারই তো আজকে রাজনীতিতে। বাবুল শুধু রাজনীতিতে নন, আজকে মন্ত্রীও।

(কথা থামিয়ে) আর বাবুলের জন্য আমি খুব গর্বিত। আই অ্যাম ভেরি হ্যাপি ফর হিম...

কুমার শানুও পলিটিক্সে?

(হেসে) অ্যান্ড আই অ্যাম ভেরি ওয়ারিড ফর হিম। শানুদা যা মনে আসে বলে দেয়। শানুদাকে নিয়ে আমার ভয় লাগে।

অভিজিত্‌ও তো রাজনীতিতে?

অভিজিত্‌দা ভাল করবে রাজনীতিতে। কিন্তু মাঝেমধ্যে পলিটিক্যালি এত ইনকারেক্ট কথা বলে দেয় না... সেটা হয়তো রাজনীতিতে নামলে কমিয়ে দেবে। কিন্তু অভিজিত্‌দার একটা কনভিকশন আছে। ২০০১-এ যেটা বলেছেন, ২০১৪-এ একই কথা বলছেন। হি হ্যাজ কনসিসটেন্সি।

আপনার ইচ্ছে হয় না রাজনীতিতে আসতে?

হ্যাঁ, আমার অনেক দিন ধরেই ছোঁক ছোঁক ইচ্ছে। কিন্তু জানি না কী ভাবে এগোব।

সে কী! বাবুলকে ফোন করলেই তো হল...

হ্যাঁ, বাবুল ফোন করে। আমি ওকে বাবুলবাবু বলি। ও আমাকে শানবাবু। শপথ নেওয়ার আগেও ফোন করেছিল। বাবুলের মধ্যে একটা অদ্ভুত একাগ্রতা আছে। ও যদি কিছু চায়, সেটার পিছনে কিন্তু ও ২৪ ঘণ্টা পড়ে থাকবে। হি হেটস টু লুজ।

এ ছাড়াও বাবুলের পড়াশোনা ভাল, ভাল কথা বলতে পারে।

আজকে ও সিঙ্গলও। ভবিষ্যতে ও রাজনীতিতে আরও ভাল করবে। মিলিয়ে নেবেন।

আপনার তো বাংলায় একটা নতুন অ্যালবামও রিলিজ হচ্ছে শুনলাম।

হ্যাঁ, হচ্ছে তো। নতুন বছরে। এই অ্যালবামটা নিয়ে আমি খুব এক্সাইটেড। আশা অডিয়ো বার করছে সিডিটা। নাম ‘আবার আসিব ফিরে’। এবার একেবারে মিক্সড ব্যাগ। রবীন্দ্রসঙ্গীত আছে, নজরুলগীতি আছে। আব্বাসউদ্দিনের গান আছে, লালন ফকিরের গান আছে। জানুয়ারির শেষে কলকাতায় বড় ভাবে লঞ্চ... (হেসে) আচ্ছা, এ বার ছাড়ুন, স্টেজে যেতে হবে তো...

শিওর। খুব অনেস্টলি কথা বললেন...

আমি এ রকমই। জীবন নিয়ে আমার কোনও খেদ নেই। বাচ্চাগুলো বড় হচ্ছে। স্টেজ শো চলছে প্রচুর। এই মাসেই এগারোটা হয়ে গেল। ৩১ জানুয়ারির আগে আর দু’টো শো বাকি। লাইফ ইজ গুড। আমার লাইফস্টাইল হাইফাই নয়। ভালবাসি পরিবারের সঙ্গে ঘুরতে। বাচ্চাগুলো বড় হচ্ছে। গানবাজনা শুনছে একটু একটু করে।

দাদুর গান শুনছে?

বাবার গানই শুনছে না, তো দাদুর গান!

বাচ্চারাও কি তা হলে ইয়ো ইয়ো হানি সিং?

হা হা হা হা হা হা... পাগল নাকি! ওটার কোনও চান্স নেই।

ছবি: কৌশিক সরকার, লোকেশন সৌজন্য: দক্ষিণ কলিকাতা সংসদ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement