চিত্রনাট্য কার?

কোনও ব্যাপারে গোটা টলিউড একমত, এমনটা সচরাচর হয় না। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিতে চিত্রনাট্যকারের আকালের ব্যাপারে সকলেই সহমত।

Advertisement

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৭ ২৩:০০
Share:

অরিন্দম শীল, পদ্মনাভ দাশগুপ্ত ও রাজ চক্রবর্তী

কোনও ব্যাপারে গোটা টলিউড একমত, এমনটা সচরাচর হয় না। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিতে চিত্রনাট্যকারের আকালের ব্যাপারে সকলেই সহমত।

Advertisement

কিছু পরিচালক আছেন যাঁরা নিজেরাই চিত্রনাট্যের ভার সামলান। স্ক্রিনপ্লে থেকে সংলাপ সবটা। কিন্তু সে তো হাতে গোনা কয়েক জন। অধিকাংশ পরিচালকের ত্রাতা একজনই। পদ্মনাভ দাশগুপ্ত। মোটে একজন দিয়ে টলিউড চলতে পারে না। অগত্যা চিত্রনাট্যকারের হদিশে হন্যে টলিউ়়ড! বলা হয়, বাংলা ছবিতে গল্পই আসল। কিন্তু গল্প লিখিয়েই এখন মেলে না। সৃজিত মুখোপাধ্যায় নিজের ছবির স্ক্রিনপ্লে থেকে সংলাপ একাই করেন। শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ও তাই। নন্দিতা রায়ের ভাবনা থেকে শিবপ্রসাদ নিজের মতো করে গল্প বোনেন। সংলাপ সাজান। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, মৈনাক ভৌমিকও নিজেরাই সবটা করেন।

আর বাকি পরিচালকরা কী করেন? বাণিজ্যিক হোক কি অন্য ধারার ছবির স্ক্রিনপ্লে, সংলাপের জন্য পদ্মনাভ দাশগুপ্তই অনেকের সহায়। সে রাজ চক্রবর্তীর ছবিই হোক কিংবা অভিজিৎ গুহ-সুদেষ্ণা রায়ের। ভাল স্ক্রিপ্ট রাইটারের অভাবে ধুঁকছে বাংলা ছবি। সেই সাদা-কালো যুগ থেকে কাহিনির মেরুদণ্ডে ভর দিয়ে বাংলা ছবি দাঁড়িয়ে। রাজ নিজে গল্প ভাবলেও, সেটাকে চিত্রনাট্যের আকারে দাঁড় করানোর জন্য ভাল লিখিয়ে খোঁজেন। বললেন, ‘‘এই মুহূর্তে ভাল কয়েকজন স্ক্রিপ্ট রাইটার আমাদের চাই। আমি কনসেপ্ট ক্র্যাক করতে পারি, কিন্তু সেটাকে স্ক্রিনপ্লে’র আকারে সাজানোর জন্য দক্ষ হাতের প্রয়োজন।’’ দক্ষিণী ছবির রিমেক হলেও সেখানে ভাল চিত্রনাট্যকার দরকার। যাতে বাংলার দর্শকদের রুচিমাফিক জিনিসটা সাজিয়ে নেওয়া যায়। পদ্মনাভ দাশগুপ্ত নিজেও মনে করেন ইন্ডাস্ট্রিতে আরও জনা পাঁচেক স্ক্রিপ্ট রাইটার থাকলে ভাল হতো। আর প্রতিযোগিতার বিষয়টা? ‘‘সে হোক না। বেশি লোক থাকলে ভাবনার একটা আদান-প্রদান হবে,’’ বলছেন পদ্মনাভ।

Advertisement

ভাল গল্প লিখিয়ের অভাবের জন্যই কি টলিউডকে বারবার সাহিত্যের কাছে ফিরে যেতে হচ্ছে? স্বরচিত থ্রিলারগুলো জমছে না। ফেলুদা, ব্যোমকেশ, কিরীটীর কদর বরং অনেক বেশি। তবে সাহিত্যকে পরদায় ফুটিয়ে তুলতে হলেও পোক্ত লেখনীর প্রয়োজন। অরিন্দম শীল তাঁর সব ছবির চিত্রনাট্য পদ্মনাভকে দিয়েই করান। বললেন, ‘‘পুরো জিনিসটা আমার পক্ষে লেখা সম্ভব হয় না। পদ্মনাভর সঙ্গে আমার টিউনিং ভাল। আমার তো কোনও ছবির স্ক্রিপ্ট ৭-৮টা খসড়ার কমে তৈরিই হয় না।’’

সাহিত্য থেকে ছবি তৈরি করা কি সোজা? ‘‘সাহিত্যে চরিত্র, বর্ণনা আগে থেকেই তৈরি থাকে। সেগুলো সিনেম্যাটিক ভাবে সাজিয়ে নিতে হয়। আর এমনি কনসেপ্ট মানে তো শূন্য থেকে শুরু,’’ বললেন পদ্মনাভ।

বলিউ়ডে আগে গুলজার, সেলিম-জাভেদরা এই দিকটা সামলাতেন। এখন অঞ্জুম রাজাবলী, জুহি চর্তুবেদী, অভিজাত যোশী, জয়দীপ সাহানিরা রয়েছেন।

এই জায়গাটাতেই বাংলা পিছিয়ে পড়ছে বলে মনে করেন মৈনাক। ‘‘অনেকে কনসেপ্টটা তৈরি করছেন, কিন্তু সেটাকে সাজানোর জায়গায় পিছিয়ে পড়ছেন। ইন্ডাস্ট্রিতে বেশ কয়েকজন প্রফেশনাল স্ক্রিপ্ট রাইটার থাকলে সমস্যা হতো না,’’ জোর গলায় বললেন মৈনাক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন