Celebrity Interview

‘দিল্লি বেলি’র সাফল্যের পর ‘টাইপকাস্ট’ যাতে না হই, সচেতন ভাবেই অন্য ছবি বানাই: অভিনয়

বক্স অফিসে সফল সিনেমা দিয়েছেন। গত বছর করিশ্মা কপূরকে নিয়ে কলকাতা শহরে শুট করে গিয়েছেন। শহরটাকে ভালবাসেন তার ধীরগতির জন্যই। আনন্দবাজার ডট কমের মুখোমুখি পরিচালক অভিনয় দেও।

Advertisement

সম্পিতা দাস

শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৫ ১২:২৩
Share:

মুখোমুখি অভিনয় দেও। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

২০১১ সালে একটি ছবি মুক্তি পায়। কোনও বড় তারকা নয়, শুধুই অভিনয় ও চিত্রনাট্যের উপর ভরসা করে বক্স অফিসে সাড়া ফেলে দেয় তাঁর ছবি। তিনি পরিচালক অভিনয় দেও। তার পর অসংখ্য প্রস্তাব পেয়েছেন আরও একটা ‘দিল্লি বেলি’র মতো ছবি বানানোর। কিন্তু করেননি। বিভিন্ন জঁরের ছবি নিয়ে বানিয়েছেন তার পর। সম্প্রতি কলকাতায় মাস পাঁচেক থেকে গিয়েছেন। সঙ্গী ছিলেন করিশ্মা কপূর। সদ্য তাঁর প্রযোজনায় মুক্তি পেয়েছে ‘গেমারলোগ’ সিরিজ়টি। কলকাতা ও বাঙালি সঙ্গে হিন্দি সিনেমায় রাজনীতি নিয়ে আনন্দবাজার ডট কমের মুখোমুখি পরিচালক অভিনয় দেও।

Advertisement

প্রশ্ন: অভিভাবকেরা তো গেম খেললেই ছেলেমেয়েকে বকাবকি করেন, আপনি গেম খেলতেই বলছেন?

অভিনয়: আমরা গেম খেলার ইতিবাচক দিকটা নিয়ে কথা বলেছি এই সিরিজ়ে। কোনও বিষয় নিয়ে আপনি যদি লেগে থাকেন তা হলে সেটা ফল দিতে বাধ্য। আমরা সেটাই বলতে চেয়েছি। আসলে অভিভাবকেরা ভাবেন ফোনে বা ল্যাপটপে গেম খেললেই ছেলেমেয়েরা রসাতলে যাবে। সেই ভাবনাটা ঠিক নয়।। সব কিছুরই একটা সীমা থাকে। প্রচুর ছেলেমেয়ে গেমিংকে নিজের কেরিয়ার বানাতে চান। শুধু ভারতেই গেমিং ইন্ডাস্ট্রি প্রায় ২.২ বিলিয়ন ডলারের। এই মুহূর্তে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির থেকেও বড় গেমিং ইন্ডাস্ট্রি। আমরা ‘গেমারলোগ’ সিরিজ়ে একটা প্যাশনের গল্প বলছি। আসলে এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা জানে ওরা কী চাইছে। সব সময় ওদের কথা ফেলে দেওয়ার কোনও মানে নেই কিন্তু।

Advertisement

প্রশ্ন: অনেক সময় কিশোর ছেলেমেয়েরা আসক্ত হয়ে পড়ে এই গেম খেলায়। কিছু খেলা আবার প্রাণঘাতী হয়, সেটা ভেবে দেখেছেন?

অভিনয়: দেখুন, এই পৃথিবীতে বহু মানুষ এমন কিছুতে আসক্ত হয়ে পড়েন, যেটা তাঁদের করা উচিত নয়। আপনি যদি ‘ওয়ার্কোহলিক’হয়ে যান সেটাও কিন্তু ক্ষতিকারক। আসলে গেম নিয়ে ট্যাবু রয়েছে। লোকে ভাবেন গেম খেললেই বিপথে চালিত হবে। কোনও কিছু অতিরিক্ত করলে তাঁর কুপ্রভাব রয়েছে। এই সিরিজ় একটা চ্যাম্পিয়নশিপের গল্প।

প্রশ্ন: পড়াশোনা করে চাকরি করবে, গেমিংকে পেশা বেছে নেবে, ভারতীয় অভিভাবকেরা মানতে পারেন সেটা?

অভিনয়: আমাদের সময় পাঁচটা মাত্র পেশা ছিল। কিন্তু এই মুহূর্তে ছেলেমেয়েদের কাছে প্রচুর অপশন রয়েছে। শুধু কথা বলে এখনও খ্যাতনামী হওয়া যায় ও উপার্জন করা যায়। তাই অপশন যত বাড়বে দায়িত্ব তত বাড়বে। জোচ্চুরি করেও যেমন রোজগার করা যায়, তেমন পরিশ্রম করেও রোজগার সম্ভব। আর সেখানেই তো দায়িত্বও বেছে নেওয়ার বিষয়।

প্রশ্ন: বড় তারকাদের সঙ্গে কাজ করার সুবিধা বেশি, না কি নবাগতদের সঙ্গে কাজ করার আরাম বেশি?

অভিনয়: তারকা কিন্তু মানুষ। এমনি এমনি হয় না। তাঁরা জানেন, কী করছেন, তাঁদের দক্ষতা কতটা সেটা জানেন। তাঁদের সঙ্গে খুবই ব্যক্তিগত স্তরে গিয়ে মিশতে হয়। তাঁদের ইগোতে যাতে চোট না লাগে সেটা বুঝে চলতে হয়। তাঁদের চাহিদাগুলো মাথায় রাখতে হয়। আবার নবাগতদের ক্ষেত্রে তাঁদের অভিনয় দক্ষতা পারফরম্যান্সের বিষয়টা দেখে বুঝে করিয়ে নিতে হয়। তাই দুই ক্ষেত্রে কিছু প্রতিকূলতা রয়েছে। কোনওটাই খুব সহজ নয়।

প্রশ্ন: ‘দিল্লি বেলি’র সাফল্যের পর আপনাকে কি ‘টাইপকাস্ট’ করা হয়?

অভিনয়: বলিউড হোক কিংবা হলিউড, পরিচালককে খুব সহজে ‘টাইপকাস্ট’ করা হয়। আপনার একটা গল্প যদি দর্শকের ভাল লেগে যায়, তা হলে ওই একই ধরনের কাজ দর্শক আপনার থেকে আশা করে বসে। আমি ‘দিল্লি বেলি’র পর অনিল কপূরের সঙ্গে ‘টোয়েন্টিফোর’ করি। একেবারে থ্রিলারধর্মী একটা কাজ। তারও বহু পরে ‘ব্ল্যাকমেল’ করি। ‘দিল্লি বেলি’র সাফল্যের পর টাইপকাস্ট যাতে না হই, তাই সচেতন ভাবেই এই সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলাম। আমি এমন একজন পরিচালক হতে চেয়েছিলাম যে সব ধরনের জঁর নিয়ে কাজ করতে পারে।

প্রশ্ন: ‘দিল্লি বেলি’র পর আপনার ছবিগুলো সে ভাবে বক্স অফিসে সাফল্য পায়নি, আপনি ‘ডার্ক কমেডি’ নিয়ে ফের কাজ করার ইচ্ছে হল না?

অভিনয়: প্রতিটা পরিচালকের একটা সময় থাকে। ‘দিল্লি বেলি’ ছবিটা লিখতে ৯ বছর সময় লেগেছিল। তার পর ছবিটা তৈরি করা বেশ কয়েক বার পুনরায় শুট হয়েছে। সব নিয়ে ছবিটা শেষ করতে প্রায় ২ বছরের বেশি সময় লেগেছিল। প্রতিটা ছবি নিজের ভাগ্য নিয়ে আসে। সাফল্য ও ব্যর্থতা আমাদের হাতে থাকে না। আমরা শুধু চেষ্টা করে যেতে পারি। সেটা কখনও দর্শকের ভাল লাগে, কখনও লাগে না।

প্রশ্ন: অনেক বছর পরে দর্শক ফের দর্শিলকে দেখছেন অভিনেতা হিসেবে। কতটা নিজেকে ঘষামাজা করেছে সে?

অভিনয়: আসলে যে কোনও অভিনেতা খারাপ অভিনয় করুন কিংবা ভাল। সবার আগে মানুষটা ভাল হওয়া উচিত। সেটা কিন্তু পর্দায় বোঝা যায়। আমাদের এই সিরিজ়টার জন্য ওর সারল্যটা কাজে লাগিয়েছি। আমি ওকে ‘তারে জ়ামিন পর’ ছবিতে দেখেছিলাম। যদিও তখন ওর মাত্র ৮ বছর বয়স ছিল। এখন ওর ২৮ বছর বয়স। এতগুলো বছরে অভিনেতা হিসেবে সংবেদনশীল অত্যন্ত বুদ্ধিমান।

প্রশ্ন: সময়ের সঙ্গে হিন্দি সিনেমার পরিভাষা বদলেছে, বাধাবিঘ্ন কি বেড়েছে সিনেমা তৈরির ক্ষেত্রে?

অভিনয়: আসলে প্রতি দশ বছর অন্তর ইন্ডাস্ট্রিকে বেশ কিছু পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। শেষ দশ বছর আমাদের ইন্ডাস্ট্রি সব থেকে বড় পরিবর্তন যেটা দেখেছে সেটা ওটিটির আবির্ভাব। আর যখনই কোনও পরিবর্তন হয় তার সঙ্গে আসে অনিশ্চয়তা। এখন যে পর্যায়ে দাঁড়িয়ে তাতে ইন্ডাস্ট্রির ভিত খানিকটা নড়ে গিয়েছে। তাই এই মুহূর্তে হিন্দি সিনেমায় পরীক্ষামূলক কাজ কম হচ্ছে, মানুষ ‘সেফ’ থাকার চেষ্টা করছে। এতে কিছু খারাপ দেখছি না। কিন্তু আমার প্রযোজনা সংস্থা নতুন কিছু করতে চেয়েছে এবং দর্শককে নতুন কিছু দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

প্রশ্ন: আজকাল কথায় কথায় ধর্মের নামে কিংবা ভাবাবেগের খাতিরে ছবি ও তারকাকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে।

অভিনয়: আপনি যদি এমন কিছু তৈরি করেন যা মানুষের ভাবাবেগকে আহত করে তা হলে তার ‘ব্যাকল্যাশ’ (সমালোচনা) সহ্য করতে হবে। যার ফলে অহেতুক পরিচালকদের সমস্যার মুখে পড়তে হয়। আমাদের দেশে সিনেমা প্রথমে বিনোদন, তার পর শিক্ষার একটা জায়গা। যেখান থেকে ভাল বার্তা মানুষ পেতে চায়। তাই বিনোদনের ক্ষেত্রে সর্বদা নতুন কিছু করে যেতেই হবে। যদি সেটা ভাল না লাগে সমাজমাধ্যম তো আছেই মতপ্রকাশের জায়গা। বর্তমানে যুগে এটা মেনে নিয়েই চলতে হবে।

প্রশ্ন: বলিউডে একপেশে প্রচারমুখী সিনেমার সংখ্যা কি বেড়েছে?

অভিনয়: হয়তো বেড়েছে, কিন্তু যদি একটা সিনেমা দেখে আমার ভাল লাগে তা হলে সেটা ‘প্রোপাগান্ডা’ ছবি নয়। কারণ, সিনেমাটা আপনাকে বিনোদন দিচ্ছে। আগেও ধর্মের ভিত্তিতে অনেক ছবি তৈরি হত। তখন তো কেউ বলেনি যে একপেশে প্রচারমুখী সিনেমা। আজকাল মানুষ খুব নিষ্ঠুর হয়ে গিয়েছে। যদি আপনাকে সিনেমাটা বিনোদনের রসদ দেয় তা হলে সে ভাবেই দেখুন! ‘প্রোপাগান্ডা’ কি না দর্শকের ভেবে কী কাজ!

প্রশ্ন: কিন্তু গত কয়েক বছর অনুরাগ কাশ্যপ থেকে সঞ্জয় লীলা ভন্সালী কেউ রেহাই পাননি নির্দিষ্ট একটি গোষ্ঠীর থেকে। সেটা কী ভাবে দেখেন?

অভিনয়: যখন আপনি কোনও এমন বিষয় নিয়ে ছবি বানান যার মধ্যে স্পর্শকাতর বিষয়বস্ত রয়েছে, তখন আপনাকে এমন কিছু জিনিস কিংবা কিছু নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর নজরে পড়তে হয়। সমাজমাধ্যম সকলকে একটা করে মাইক হাতে দিয়েছে। এটা মেনেই নিতে হবে সবাই কিছু না কিছু বলবে। কতটা আপনি শুনবেন সেটা আপনার বিষয়। আমাদের কাজটা করে যেতে হবে। তাই সকলের কথায় কান দিলে মাথাটা খারাপ হয়ে যাবে।

প্রশ্ন: করিশ্মা কপূরের সঙ্গে ‘ব্রাউন’ সিরিজ়টা শুটিংয়ের সময় কলকাতায় এসেছিলেন। কেমন লাগল শহরটা?

অভিনয়: আমি প্রায় পাঁচ মাস ছিলাম কলকাতায়। খুব সুন্দর শহর। এখানকার খাবার মুখে লেগে রয়েছে। আমার কলকাতার যেটা ভাল লেগেছে সেটা হল এটা ‘মেট্রো সিটি’ হয়েও ততটা গতি চায় না আর কি। আর এটাই সব থেকে ভাল লাগে এই শহরটার সম্বন্ধে। আর এখানকার মানুষদের মধ্যে সারল্য রয়েছে এখনও। ভারতের অন্য শহরগুলো এতটা ফাস্ট হয়ে গিয়েছে যে বাঁচতে ভুলে গিয়েছে।

প্রশ্ন: গরমের মধ্যে শুট করেছিলেন। করিশ্মা সহ্য করতে পারলেন কলকাতার আর্দ্রতা?

অভিনয়: আমরা এপ্রিল, মে, জুন এই তিনটে মাসে জুড়ে শুটিং করেছিলাম। কিন্তু করিশ্মার কলকাতার গরম ভাল লেগেছিল। কোনও কষ্টই হয়নি। তেমনটাই বলেছিল। আমাদের যদিও ঘামে ভিজে হাঁসফাঁস অবস্থা হয়েছিল। ওই গরমে কলকাতায় একটা বস্তির কাছে রেললাইনের উপর শুট করেছে কোনও বিরক্তি ছাড়াই। করিশ্মা কলকাতার ছোট দোকানগুলির খাবার খেতে ভালবাসত। নিজে যেতে পারত না, আনিয়ে নিত হোটেলের ঘরে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement