মিনি ওয়েব সিরিজ়ে মিঠুন চক্রবর্তী, যোগিতা বালি, নমোশি চক্রবর্তী। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
এক দিকে অমিতাভ বচ্চন আর অভিষেক বচ্চন। অন্য দিকে মিঠুন চক্রবর্তী আর তাঁর দুই ছেলে মিমো ওরফে মহাক্ষয় এবং নমোশি চক্রবর্তী। দুই পরিবারের সন্তানেরাই যেন বাবাদের প্রতিভায় ম্লান! অথচ, তাঁরাও অভিনয়ে দক্ষ। একাধিক ছবিতে তা প্রমাণিত। তবু ‘বচ্চন’ বা ‘চক্রবর্তী’ পদবি কি এক এক সময় তাঁদের কাঁধে চেপে বসে? চুলচেরা বিচারের এই দ্বন্দ্ব নিশ্চয়ই খারাপ লাগে অভিষেক, মিমো বা নমোশির!
তৃতীয় জন আপাতত এই সমস্ত অনুভূতি সরিয়ে ব্যস্ত আগামী পরিচালনা নিয়ে। বাবার ৭৫ বছরের জন্মদিনে তিনি ঘোষণা করেছেন, ৪০ বছর পরে পর্দায় ফিরছেন মিঠুন আর তাঁর স্ত্রী যোগিতা বালি! একসঙ্গে তাঁদের শেষ কাজ ১৯৮৭-তে, ছবির নাম ‘মেরা করম মেরা ধরম’।
তারকা দম্পতিকে ফেরাচ্ছেন নমোশি নিজেই। অভিনয়ের পাশাপাশি পরিচালনাতেও হাত পাকাচ্ছেন মিঠুনের ছোট ছেলে। যাঁকে দেখলেই বলিউড বলে, ‘বাবার কার্বন কপি’। এর আগে তাঁর বড় পর্দার জন্য তৈরি ছবি ‘ঘোস্ট’-এ অভিনয় করেছেন মিঠুন। এ বার তিনি আনছেন মিনি ওয়েব সিরিজ়। যার পর্বের দৈর্ঘ্য (আনুমানিক ২০ বা ২৫ মিনিট) অন্য সিরিজ়ের পর্বের থেকে কম। নমোশির মিনি সিরিজ়ের নাম ‘টোস্টেড: দ্য কড়ক লভ স্টোরি’।
সিরিজ় পরিচালনার পাশাপাশি তিনি অভিনেতাও। সঙ্গী মা-বাবা। সব ঠিক থাকলে আগামী নভেম্বর থেকে শুরু হবে শুটিং। সিরিজ়ে উঠে আসবে মুম্বইয়ের জীবনযাত্রা। যেখানে প্রতি মুহূর্তে প্রত্যেককে লড়াই করে বাঁচতে হয়। ছবির শুটিং তাই মুম্বই জুড়ে। নমোশির কথায়, “৩৩ বছর শহরটাকে দেখেছি। অনেক ঋণ এই শহরের কাছে। তারই কিছুটা শোধ করার চেষ্টা করছি।”
বাবাকে এর আগেও একটি ছবিতে পরিচালনা করেছেন। মাকে এই প্রথম। তার উপরে ৪০ বছর পরে জুটিতে ফেরাচ্ছেন। ভয় করছে?
আনন্দবাজার ডট কম প্রশ্ন রেখেছিল নমোশির কাছে। পরিচালক-অভিনেতা এই মুহূর্তে ব্যস্ত বিক্রম ভট্টের আগামী ছবি ‘বিরাট’ নিয়ে। বিপরীতে বাংলার অভিনেত্রী দর্শনা বণিক। শুটিং শেষ হতেই ফোনে ধরা দিলেন মিঠুন-পুত্র। বললেন, “মা দেখল, বাবা ছেলের পরিচালনায় কাজ করছেন। ছেলে নতুন কিছু করতে চলেছে। তা হলে আমিই বা বাদ থাকি কেন?” ছেলের পরিচালনায় স্বামীর সঙ্গে আবার অভিনয়ে রাজি হয়ে গেলেন তিনি। নমোশি জানিয়েছেন, চিত্রনাট্য লেখার কাজ চলছে। এখনও লুক সেট হয়নি। তাই মা-বাবা ক্যামেরার সামনে কী ভাবে ধরা দেবেন এখনও বুঝতে পারছেন না। তবে অভিনয়ের থেকে পরিচালনা অনেক বেশি শক্ত, এ কথা স্বীকার করেছেন তিনি।
‘বেঙ্গল ফাইলস’ ছবিতে মিঠুন চক্রবর্তী এবং নমোশি চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীত।
আর নামী বাবার সন্তান হওয়া? ভাল কাজ করেও যেন স্বীকৃতি মেলে না! কথায় কথায় তুলনা। খারাপ লাগে?
নমোশির কথায়, “এটা যে হবে আমরা জানি। বাবাও জানেন। তাই আমাদের উপরে জোর করে কিছু চাপিয়ে দেন না। আমি ছোট থেকেই অভিনয় নিয়ে পাগল। অভিনয়ের পাশাপাশি নিজেই পরিচালনায় এসেছি। বাবাও একটা সময় পরিচালক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। তিনি পারেননি। আমি পারছি। বাবা খুব খুশি।” মিঠুনের ছোট ছেলে তাই কোনও বাধাকেই আর বাধা মানেন না। বাবার সঙ্গে তুলনা টানলেও কষ্ট পান না। বরং নিজেকে ঘষেমেজে আরও ধারালো করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিনোদন দুনিয়া বলে, বলিউডে স্বজনপোষণের রমরমা।
কিন্তু পায়ের তলার জমি শক্ত করতে মিঠুন চক্রবর্তীর ছেলে হিসাবে বিশেষ সুবিধা কি পাননি? প্রশ্ন শুনে নমোশি নিজেকে গুছিয়ে নেন। তার পর জবাব দিলেন, “বাবার পরিচয় একটা সময় পর্যন্ত। তার পর নিজের প্রতিভা না থাকলে কিছুই হবে না। আপনি টিকবেন না। ওমুকের ছেলে বা তমুকের মেয়েকে বেশি দিন অকারণে দেখেন না দর্শক! আমরা জানি সেটা।”
বাংলার ছেলে, বাঙালির ছেলে। বাবার মতো দেখতে। বাবার মতো নাচেও পারদর্শী। বাংলা ছবিতে কবে আসবেন?
“যে দিন আপনারা ডাকবেন সে দিনই আসব”, হাসতে হাসতে বললেন নমোশি। বাবার জীবনীছবি তৈরি হলে ‘যুবক মিঠুন’-এর চরিত্রে অভিনয়ের ইচ্ছাও প্রকাশ করলেন। জানালেন, এই সুযোগ পেলে তিনি সম্মানিত হবেন। মিঠুনের পথে হেঁটে রাজনীতিতে আসবেন? সঙ্গে সঙ্গে ফোনের ও পার থেকে সাবধানি কণ্ঠস্বর শোনা গেল, “নো কমেন্ট। এই বিষয়ে কোনও কথা বলব না।”