দেব-শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়ের অনুষ্ঠান নিয়ে বললেন রাজ চক্রবর্তী। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
একটি সন্ধ্যা কি অনেক কিছু বদলে দিল? নজরুল মঞ্চে সোমবার ‘ধূমকেতু’র ট্রেলারমুক্তি অনুষ্ঠানে দেব-শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায় জুটিতে উপস্থিত। মঙ্গলবার ফোনে আনন্দবাজার ডট কমের মুখোমুখি রাজ চক্রবর্তী। শুরুতেই আন্তরিক অনুরোধ, “গত কাল লেডি সুপারস্টার আর সুপারস্টারের শো ছিল। অনেক দিন পরে দুই সুপারস্টার শো করলেন। এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কথা শুরু করবেন প্লিজ়?” তার পর নিজেই প্রশ্ন রাখলেন....
রাজ: গত কালের অনুষ্ঠান আমার কেমন লাগল, সেটাই জানতে চাইছেন তো?
প্রশ্ন: তারও আগের কথা জানতে চাইছিলাম।
রাজ: তার আগেও প্রশ্ন আছে?
প্রশ্ন: টলিউড বলছে, এর নেপথ্যে আপনি অনেকটা জুড়ে আছেন...
রাজ: নেপথ্যে মানে! কী নেপথ্যে, কোন নেপথ্যে?
প্রশ্ন: ছবির প্রত্যেকটি প্রচার অনুষ্ঠানে শুভশ্রীর যোগদান আপনার অনুপ্রেরণায় সম্ভব হয়েছে।
রাজ: আমার স্ত্রী-র যে কোনও কাজে আমি পাশে থাকব, এটাই স্বাভাবিক। এর মধ্যে বলার মতো কিছু তো নেই! তেমনই আমি কী করছি, কী করব— সব শুভ জানে। ও ‘মাই লাভ’, ‘মাই জান’। আমি ওর সঙ্গে যেমন আমার সব কথা আলোচনা করি তেমনই ও সব কথা আমার সঙ্গে আলোচনা করে। এটা পেশাজীবনের ক্ষেত্রেও। আমরা যদি মনে করি, কোনও কাজের আগে সেই কাজ নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে নেব, আমরা সেটা করি। কেন করি? যাতে আমরা পেশাজীবনে ঠিক থাকি, আমাদের কাজ নিখুঁত হয়। আমরা একে অপরের অভিজ্ঞতাও ভাগ করি। এই জায়গা থেকেই আমাদের লক্ষ্য, ন’বছর পরে দুই সুপারস্টারকে ফেরানো। তাঁদের ফিরে আসা যেন অনেক দিন পর্যন্ত সকলে মনে রাখে। সেটাই করেছি।
প্রশ্ন: তা হলে সোমবার কেন রাজ চক্রবর্তী নজরুল মঞ্চে ছিলেন না?
রাজ: আমার অনেক কাজ ছিল, অনেক মিটিং ছিল। তা ছাড়া, আমি তো এই অনুষ্ঠানে যেতে পারি না! আমি এই ছবির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নই, তৃতীয় পক্ষ। এটা একটা অনুষ্ঠান। এই ছবির সঙ্গে যাঁরা যাঁরা যুক্ত তাঁরা উপস্থিত ছিলেন। আমরা দু’জনেই কাজের দুনিয়ায় ভীষণ ব্যস্ত। নিজের কাজ মিটিয়ে তার পরে বাকি দিক সামলানোর চেষ্টা করি।
প্রশ্ন: আপনার ভাগ্নি সৃষ্টি পাণ্ডে এসেছিলেন, মামির অনুষ্ঠান দেখলেন...
রাজ: সৃষ্টি, মিষ্টি— দুই ভাগ্নিই গিয়েছিল। দু’জনেরই খুব ভাল লেগেছে। ওরা কাজ থেকে ছুটি নিয়েছিল অনুষ্ঠান দেখবে বলে। ভীষণ উত্তেজিত দু’জনে, দেব-শুভশ্রীকে একসঙ্গে দেখবে। সৃষ্টি দেবের ভীষণ ভক্ত। ‘চ্যালেঞ্জ’ ছবিতে অভিনয় করেছে। দেবের প্রতি দুর্বলতাও আছে (হাসি)। ফলে, সুযোগটাকে হাতছাড়া করতে চায়নি। একটু থেমে, শুধু আমার ভাগ্নিরা নয়, শুনেছি যাঁরা যাঁরা কাল সামনে বসে অনুষ্ঠান দেখেছেন তাঁরাই উপভোগ করেছেন। শুনতে শুনতে এক এক সময় মনে হচ্ছিল, আমি কেন থাকলাম না! আমিও তা হলে উপভোগ করতে পারতাম। মনে হচ্ছিল, মুখোশ পরে দর্শকদের মধ্যে মিশে যাই। চিৎকার করে উঠি ‘দেশু’...।
প্রশ্ন: ‘দেশু’ নামটা পছন্দ হয়েছে?
রাজ: ভীষণ ভাল লাগছে।
প্রশ্ন: অনুষ্ঠানে না গেলেও নিশ্চয়ই লাইভ সম্প্রচার দেখেছেন?
রাজ: আমি দেখিনি। অনেকগুলো ‘জুম কল’ ছিল। তাতে ব্যস্ত ছিলাম। রাতে যদিও অনুষ্ঠান নিয়ে গল্প হয়েছে। তখন আরও ভাল করে শুনেছি।
প্রশ্ন: শুভশ্রী রাতে বাড়ি ফিরে কী বললেন?
রাজ: ওর মুখে তৃপ্তির হাসি। খুব ভাল হয়েছে অনুষ্ঠান, উপস্থিত প্রত্যেকে খুশি। বলছিল আর তৃপ্তির হাসি হাসছিল।
প্রশ্ন: অনেক দিন পরে পুরনো ‘বন্ধু’র সঙ্গে দেখা, কথা বলা...
রাজ: পুরনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা হওয়ার থেকেও বেশি জরুরি, এত দিন পরে ‘ধূমকেতু’র মুক্তি। একটা জুটি আবার ফিরছে, সেটাও বড় ব্যাপার। পুরনো বন্ধুত্বের কথা ওদের মাথায় ছিল কি না জানি না। ওদের কাছে তার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ, অনেক দিন পরে ওরা একটা জায়গায় আসছে। সেটা যেন সফল হয়। এটাই স্বাভাবিক।
প্রশ্ন: গত বছর দেবের ‘খাদান’ আর আপনার ‘সন্তান’ এক সময়ে মুক্তি পেয়েছিল। তার আগে আপনার ‘সন্তান’ ‘সন্তান’ বলা আর হাসি দেবকে নাকি চাগিয়ে দিয়েছিল! এটা দেবের বক্তব্য...
রাজ: তাই! ভাল তো। রাজ চক্রবর্তী সব সময় কাউকে না কাউকে ‘গিয়ার আপ’ করে। পজেটিভ বা নেগেটিভ—যে ভাবেই হোক। কখনও দেবের জন্য আমি উজ্জীবিত হই কখনও আমার জন্য দেব। এটাই হওয়া উচিত একটা ইন্ডাস্ট্রিতে। যখন দুটো কাজ একসঙ্গে আসবে তখন দুজনে একসঙ্গে লড়াই করব। যাতে দু’জনের কাজটাই ভাল হয়। এটা আমাদের স্ট্র্যাটেজি ছিল। আমরা সফল। এটা খুব ভাল। আগামী দিনেও এটা হতে পারে। তবে বাস্তবে আমি দেবকে ভালবাসি, সম্মান করি, পছন্দ করি। বলতে পারেন ওর কাজ, ভাবনা— সব নিয়ে দেব আমার খুব পছন্দের মানুষ।
প্রশ্ন: দেব বলেছেন, রাজ অনেকটা দেবের মতো...
রাজ: দেবও অনেকটা রাজের মতো। অনেক দিক থেকে। কারণ, আমরা দু’জনেই মফ্সসল থেকে উঠে এসেছি। এবং আমাদের খিদেটাও অনেকটা এক। আমরা লড়াই করি, আবার ভাল কাজের প্রশংসা করতেও জানি। দেব এবং রাজ— উভয়ের মধ্যে এই গুণ আছে।
প্রশ্ন: আর শুভশ্রী?
রাজ: দেবের ‘প্রাক্তন বান্ধবী’ শুভশ্রী আমার স্ত্রী। প্রত্যেক মানুষের ‘অতীত’ আছে। আপনার জীবনেও হয়তো আছে। সেটা নিয়ে কথা বললে কি আপনার ভাল লাগবে? (নিজেকে সামলে নিয়ে) মানুষের অতীত নিয়ে কথা বলা উচিত নয়। এটা কোনও অপরাধ নয়। তার মধ্যে অনেক স্মৃতি আছে, অনেক ইতিবাচক দিক রয়েছে। সেটা আছে বলেই সোমবারের অনুষ্ঠান এত সুন্দর, এত সফল। আমি একে সম্মান করি, ঈর্ষা করি না।
প্রশ্ন: আগামীতে রাজের ছবিতে তা হলে দেব-শুভশ্রী থাকবেন? দেব রাজের ছবির প্রযোজক হবেন?
রাজ: আমার কোনও সমস্যা নেই। তবে সবটাই নির্ভর করবে পরিস্থিতি, ছবির চিত্রনাট্য, চরিত্রের উপরে। চিত্রনাট্য যদি দাবি করে অবশ্যই দেব-শুভশ্রীকে পরিচালনা করব।