কিছু স্টোরি শেষ হয়ে যায় দিনের দিন। আর কিছু স্টোরি হয়ে ওঠে সফল ছোট গল্পের মতো — ‘শেষ হয়ে হইল না শেষ’। এই ‘শেষ হয়ে হইল না শেষ’ স্টোরি নিয়ে সারাদিন ধরে গোটা শহর জুড়ে হয় আলোচনা। ঝড় ফেসবুক আর টুইটারে।
গত সোমবার আনন্দplus-এ প্রকাশিত ‘ফেলু মিত্তিরের খোঁজে গোয়েন্দা’ নিঃসন্দেহে দ্বিতীয় ক্যাটেগরির। সোমবার সকালে খবরটি প্রকাশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই টুইটার-ফেসবুকে আবীর চট্টোপাধ্যায়ের ফ্যানরা ফেটে পড়েন। একের পর এক মেসেজ আসতে থাকে আনন্দplus দফতরে, ফেলুদা হিসেবে আবীর চট্টোপাধ্যায়কে রেখে দেওয়ার জন্য। এখানেই থেমে থাকেননি ফ্যানেরা। অনেকে আবার পোস্ট করতে থাকেন সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদার অলঙ্করণের সঙ্গে আবীরের মুখের মিল থাকা কোলাজের।
আবীরের ফ্যান ক্লাবও ছিল যথেষ্ট সক্রিয়। তাদের তরফ থেকেও আসতে থাকে টুইট আর রিটুইটের বন্যা। ফ্যানদের বেশির ভাগ পোস্ট-ই যে আবীর নিজে সমর্থন করছেন, সেটা সেই টুইটগুলো নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে রিটুইট করার মধ্যে থেকেই পরিষ্কার।
এত কিছুর মধ্যে এ-ও শোনা যাচ্ছে, আবীর যখন প্রথম গিয়ে সন্দীপ রায়কে বলেন তিনি ‘ব্যোমকেশ’ করতে চান, তখন নাকি সন্দীপ রায় আপত্তি তোলেননি। কিন্তু যে দিন থেকে ভেঙ্কটেশ ফিল্ম ‘ব্যোমকেশ’য়ের কিছু স্বত্ব কিনে নেয়, সে দিন থেকেই শুরু হয় আপত্তি তোলা।
এই অভিযোগ সম্পর্কে কী বলছেন স্বয়ং পরিচালক। মঙ্গলবার বিকেলে তিনি বলেন, ‘‘অঞ্জন দত্তর ব্যোমকেশ ছেড়ে আবীর আবার আমার সঙ্গে ফেলুদা করতে আসে। তার পর একদিন ও নিজে থেকেই আমাকে জানায়, ‘হর হর ব্যোমকেশ’ করবে। সে মুহূর্তে আমি আপত্তি করিনি। এটা একজন অভিনেতার সিদ্ধান্ত ছিল, আমি সেটাতে কেন হস্তক্ষেপ করতে যাব? কিন্তু প্রত্যেকবারই যদি ও ফেলুদার পাশাপাশি ব্যোমকেশ করতে থাকে, তা হলে সমস্যা। দর্শক যে সেটা মেনে নেবে না, সেটা এখনই বেশ বুঝতে পারছি। বহু মানুষ ইতিমধ্যেই ফোন করে আমায় বলছে কোনও অভিনেতা যেন ফেলুদা আর ব্যোমকেশ একসঙ্গে না করে।’’
এর পাশাপাশি অনেকে এর মধ্যে দুই যুযুধান প্রোডিউসারের যুদ্ধের ছায়াও দেখতে পাচ্ছেন। শেষ দু’টো ফেলুদা করার পর এ বার আর যৌথভাবে ভেঙ্কটেশ ও সুরিন্দর ফিল্মস প্রযোজনা করছে না সন্দীপ রায়ের ছবির। এ বারে প্রযোজক মুম্বইয়ের ইরোস ইন্টারন্যাশানাল। এই বিষয়ে কী বলছেন ইরোস ইন্টারন্যাশানাল? মুম্বইতে তাদের অধিকর্তা নন্দু আহুজাকে ফোন করলে তিনি পুরো ব্যাপারটাই সন্দীপ রায়ের ওপর ছেড়ে দিতে চাইছেন। ‘‘ইরোস ইন্টারন্যাশনাল ছবিটার প্রযোজনা করছে। এর বাইরে আমরা কিছু নিয়ে ভাবছি না। আবীর থাকবে কি থাকবে না — এই সিদ্ধান্তটা সন্দীপ রায়ের ওপর ছেড়ে দিয়েছি আমরা,’’ বলছেন নন্দু। আর কী বলছে ভেঙ্কটেশ ও সুরিন্দর ফিল্মস? তাদের তরফে মহেন্দ্র সোনি জানাচ্ছেন. “আমরা যে ফেলুদা করেছি আবীরের সঙ্গে, সেটায় দর্শক আবীরকে দুর্দান্ত ভাবে অ্যাকসেপ্ট করেছিল। ফেলুদার চরিত্রে কাকে নেওয়া হবে সেটা বাবুদা ঠিক করবে, কিন্তু আমরা মনে করি আবীর ব্যোমকেশের মতো ফেলুদা হিসেবেও পারফেক্ট।’’
আবীরকে নিয়ে টানাটানির মধ্যে এখন দেখার সত্যজিৎ-পুত্র সন্দীপ রায় কী বলেন? এখন অবধি যা পরিস্থিতি, সন্দীপ রায় কিন্তু নিজের জায়গায় অনড়। তাঁর বক্তব্যে এটা পরিষ্কার ব্যোমকেশ করলে ফেলুদা থেকে বাদ পড়তেই হবে আবীরকে। ইতিমধ্যেই বহু অভিনেতা সন্দীপ রায়ের কাছে নিজেদের ছবি ও শো রিল পাঠাতে শুরু করেছেন ফেলুদার অডিশনের জন্য। আবীর নিজে অবশ্য এখনও চেষ্টা করছেন সমাধানসূত্র বার করার, যদিও পরিস্থিতি তাঁর অনুকূলে নয়। তার আগে গোটা ঘটনাটাই জটায়ুর ভাষায় বলতে গেলে, ‘হাইলি সাসপিসাস’... তবে এত সব টুইট-ফেসবুক পোস্ট থেকে একটা ব্যাপার নিয়ে কোনও সাসপিশন নেই—আনন্দplus-এ খবর বেরোলে তা নিয়ে তোলপাড় হবেই হবে।
আপনারা কি আবীর চট্টোপাধ্যায়কে একই সঙ্গে ফেলুদা আর ব্যোমকেশ হিসেবে দেখতে চান? নাকি চান আবীর ব্যোমকেশ ছেড়ে দিয়ে শুধু ফেলুদা করুন? আপনাদের মতামত মেল করুন anandaplus@abp.in- এ। সেরা তিনটি চিঠি প্রকাশিত হবে আনন্দplus-এ।
আরও পড়ুন: ফেলু মিত্তিরের খোঁজে গোয়েন্দা