সৌরভ এক মহিলার চোখ দিয়ে ক্যাপ্টেন হুর্রা-কে দেখছেন।
কান ঝালাপালা করা এক সময়। রাতের স্বপ্নকে দিনে ভুলিয়ে দেওয়ার সময়। আর তেমনই টালমাটাল এক সময়ে মানুষকে স্বপ্ন খোঁজার গল্প বলেছিলেন লেখক মোহিত চট্টোপাধ্যায়। ১৯৭০ সালে লেখকের ক্যাপ্টেন হুর্রা চরিত্রটি হাসত, গুনগুন করে গান গাইত। আর সেই সত্তরের নাটক ক্যাপ্টেন হুর্রা ২রা সেপ্টেম্বর প্রথম বার জ্ঞান মঞ্চে মঞ্চস্থ করতে চলেছেন পরিচালক সৌরভ পালোধী এবং তাঁর দল ‘ইচ্ছেমতো’।
মোহিত চট্টোপাধ্যায়ের নাটকে ক্যাপ্টেন হুর্রা ছিলেন এক জন পুরুষ। আর সৌরভ এক মহিলার চোখ দিয়ে ক্যাপ্টেন হুর্রা-কে দেখছেন। স্বপ্নসন্ধানী সেই ক্যাপ্টেনের চরিত্রে অভিনয় করছেন তূর্ণা দাস। সৌরভের কথায়, ‘‘মোহিত চট্টোপাধ্যায়ের যে কোনও নাটক সব সময়েই বড় প্রাসঙ্গিক। অনেক আগে এক বার পড়েছিলাম। ওনার বেশির ভাগ নাটকই আসলে খুব অ্যাবসার্ড। আর ওই অ্যাবসার্ড বিষয়টাই আমার খুবই পছন্দের।’’ পরিচালক বলছিলেন, ‘‘আমাদের দলেরই এক জন আমাকে এক দিন বলছিল যে, স্টেজে ক্যাপ্টেন হুর্রা করার এটাই সেরা সময়। আবার নাটকটা পড়লাম। সত্যিই মনে হল, এই সময়ে দাঁড়িয়ে প্রচণ্ড প্রাসঙ্গিক ক্যাপ্টেন হুর্রা। বহু দিন আগে নক্ষত্র বলে একটি দল করেছিল এই নাটকটা। তার পর আমরা।’’
সৌরভ যত বারই পড়তেন নাটকটা, কানে গান বেজে উঠত তাঁর। আর তাই আপাদমস্তক মিউজিকাল একটা নাটকই তৈরি করবেন বলে ঠিক করেছিলেন পরিচালক। কিন্তু মিউজিক কে করবে?
পরিচালক সৌরভ পালোধী
আরও পড়ুন, কঙ্গনার পর কি এ বার দিশা? হৃতিক বললেন...
‘‘থিয়েটারে আজকাল প্রচুর মানুষ মিউজিক করছেন। আমি চাইলেই তাঁদের মধ্যে কোনও এক জনকে নিতে পারতাম। কিন্তু আমার মনে হয়েছিল এমন কাউকে নিই, যে কখনও থিয়েটারে মিউজিক করেনি। আর সেটা পুরোটাই একটা এক্সপেরিমেন্টের জায়গা থেকে। আর তখনই আমার দেবদীপের কথা মাথায় আসে’’, বলছিলেন সৌরভ।
ভিডিয়োতে দেখুন, দেবদীপের কম্পোজিশনের মুহূর্ত
দেবদীপ মুখোপাধ্যায়। ইন্টারনেটের সিঙ্গিং সেনশেসন। হয়নি আলাপ গানটি গেয়ে রাতারাতি নেটিজেনদের মুখে হাসি ফুটিয়েছিলেন। সেই দেবদীপ মুখোপাধ্যায় ক্যাপ্টেন হুর্রা-র সঙ্গীত পরিচালক। প্রথম বার মঞ্চের জন্য মিউজিক, কোনও অসুবিধা হয়নি? বললেন, ‘‘আমি ইউনিভার্সিটিতে নাটকের মিউজিক করেছি। বহু দিন পর আবার নাটক ফিরে এল আর কি! তা ছাড়া, আমি তো বাধ্য ছেলে। ডিরেক্টেরের কথামতো কাজ করতে আমার বেশ ভালই লেগেছে। তবে সৌরভ এই নাটকের মিউজিক আমাকে পুরোপরি স্বাধীনতা দিয়েছে।’’
আরও পড়ুন, ‘আলিয়া, দীপিকা, অনুষ্কাদের সঙ্গে কাজ করতে ভয় পাই’
সৌরভ যোগ করলেন, দশ মিনিটের বিরতি বাদ দিয়ে এক ঘণ্টা পঞ্চাশ মিনিটের এই নাটকের প্রায় সর্ব ক্ষণই গান রয়েছে। ১০-১২ মিনিট হয়তো গান নেই। হিন্দি পুরনো গান, দেবদীপের তৈরি করা গান, ওঁর তৈরি করা ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক— সব মিলিয়ে দর্শক অন্য রকম একটা মিউজিক পাবেন বলে তাঁর আশা। সৌরভের কথায়: ‘‘অন্য রকম মানে অনেকে হয়তো এই ধরনের মিউজিকই আগে শোনেইনি।’’
মহড়া চলছে।
মোট তিনটি গান তৈরি করেছেন দেবদীপ। তার মধ্যে একটি গান আবার লিখেছেন গায়কের স্ত্রী সংহিতা। দেবদীপ বললেন, ‘‘ওই গানটার নাম নীল। লেখাটা বড্ড ভাল। এ ছাড়াও টাইটেল ট্র্যাক রয়েছে। আর একটা গানের জন্য আমাদের একটু বুদ্ধি খাটাতে হয়েছে। মূল টেক্সট থেকে নিয়েই লেখা হয়েছে গানটা। সব থেকে বড় কথা, এখানে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক করতে গিয়ে আমি শরদও বাজিয়েছি।’’
নাটকের ট্রিটমেন্ট নিয়ে সৌরভের বক্তব্য, ‘‘মূল টেক্সট প্রায় একই রাখার চেষ্টা করেছি। খালি কিছু জায়গায় একটু অদলবদল করা হয়েছে। গোটা নাটকের ডিজাইনে নতুনত্ব। নতুনত্ব ইমপ্লিমেন্টেশনেও। আর এই দুটো বিষয়ই খুব সমসাময়িক।’’
মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করছেন তূর্ণা।
এই নাটকে কি কোথাও খোঁচা মারার জায়গা আছে? সৌরভ বললেন, ‘‘এই নাটক আসলে স্বপ্ন খুঁজে পাওয়ার নাটক। স্বপ্ন দেখার নাটক। মানুষ আজকাল ভাইরাল ভিডিয়ো দেখে। স্বপ্ন আর কোথায় দেখে? এই সময়ে মানুষের স্বপ্ন দেখার বড় দরকার।’’
(হলিউড, বলিউড বা টলিউড - টিনসেল টাউনের টাটকা বাংলা খবর পড়তে চোখ রাখুন আমাদের বিনোদনের সব খবর বিভাগে।)