আমির খান। ছবি: রয়টার্স
প্র: ছবিতে আপনার চরিত্র শক্তি কুমারকে কী ভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
উ: ছোটবেলায় আমাদের যে সব বদভ্যাস থেকে দূরে রাখা হতো, শক্তি কুমারের মধ্যে সে সব গুণ আছে। পরিচালক অদ্ভেদ চন্দন যখন এই চরিত্রটা নিয়ে আসেন, আমি কোনও ভাবেই কনভিন্সড ছিলাম না। কিন্তু অদ্ভেদের উপর আমার আস্থা ছিল। এই চরিত্রটার জন্য আমি স্ক্রিন টেস্টও দিয়েছি। তখনই বুঝতে পারি বেশ ইন্টারেস্টিং একটা চরিত্র। এই রকম চরিত্র আজকাল প্রায় লেখাই হয় না।
শক্তি কুমার এক কথায় অভদ্র, ছোটদের কাঁদায়, স্বার্থপর, মিথ্যে কথা বলে, নিজের প্রশংসা করে আর অপরের নিন্দা।
প্র: অদ্ভেদ তো এক সময় আপনার ম্যানেজার ছিলেন...
উ: অদ্ভেদ খুবই প্রতিভাবান। কিন্তু এমন অনেক লোক আছে যারা প্রতিভাবান, কিন্তু তা বলে ছবি ভাল বানাতে পারবে এমনটা নয়। এ ক্ষেত্রে আমি নিজের মতো করে একটা পরীক্ষা নিই। বিশেষত নতুন পরিচালকদের সঙ্গে কাজ শুরুর ক্ষেত্রে। তাদের বলি স্ক্রিপ্ট থেকে কয়েকটা দৃশ্য পরিচালনা করে আমাকে দেখাতে। এডিটিং জানে কি না, অভিনেতাদের দিয়ে কাজটা করিয়ে নিতে পারে কি না— এগুলো দেখতে চাই। অদ্ভেদের ক্ষেত্রেও তা করেছিলাম।
প্র: সলমন, শাহরুখ এবং আপনার কাছাকাছি নতুন প্রজন্মের অভিনেতারা এখনও আসতে পারেননি। আপনার কী মনে হয়, কেউ আদৌ সেটা পারবে?
উ: নতুন প্রজন্মের অনেকের মধ্যেই সেই ক্ষমতা আছে যাঁরা উপরে পৌঁছতে পারবেন। আমি, সলমন, শাহরুখ প্রায় ৩০ বছর ধরে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছি। আমার মনে হয় না আমাদের কারও কাছে এর জবাব আছে যে, কী ভাবে এতটা সময় দর্শকদের মনে জায়গা ধরে রেখেছি। এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে, সুপুরুষ বা ভাল অভিনয় করা সত্ত্বেও অনেকে দর্শকের মনে দীর্ঘস্থায়ী জায়গা তৈরি করতে পারেননি। আমরা যে সময়ে ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছিলাম, সেই সময়টা হয়তো আমাদের জন্য ঠিক ছিল। আমার আম্মি বলতেন, কোনও সুপারস্টারের স্টারডম ৭-৮ বছরের বেশি থাকে না। যখন সিনেমায় কাজ করার কথা ভাবছিলাম, তখন আম্মি আমাকে সাবধান করেছিলেন। এই পেশার ঝুঁকির কথা বলতেন বারবার।
আরও পড়ুন: সত্যজিতের ম্যাজিক
প্র: আপনার ছোটবেলার আইডল কে?
উ: শুনলে হয়তো অবাক লাগবে, আমি কিন্তু কাউকেই সে ভাবে অনুসরণ করতাম না। আমাকে কারও মতো হতে হবে এমনটাও ভাবতাম না। তবে অনেককে খুব শ্রদ্ধার চোখে দেখতাম। পাঁচ বছর আগে একটা ডকুমেন্টারি ফিল্ম দেখেছিলাম ‘সার্চিং ফর সুগারম্যান’। সেটা দেখে লিড অভিনেতা রড্রিগুয়েজের ভক্ত হয়ে যাই। আমি যদি ওঁর পাঁচ শতাংশও হতাম, তা হলেই খুশি হয়ে যেতাম। ছোটবেলায় না হলেও এই বয়সে এসে কারও ফ্যান হয়েছি (হাসি)!
প্র: আপনার সুপারস্টার হওয়ার সিক্রেটটা কী?
উ: নতুন কিছু করা আর দর্শককে নতুন কিছু দেওয়া। প্রত্যেক ছবিতে আমার চরিত্র এবং লুক আলাদা হবে। এক জিনিস করলে আমিই বোর হয়ে যাব। আমি খুব খারাপ ছবিতে কাজ করেছি আর দর্শক আমাকে দেখতেই থিয়েটারে গিয়েছেন, এমনটা হয়নি। তা হলে কোন দিক থেকে আমি সুপারস্টার হচ্ছি? ‘পিকে’ আমার জন্য সুপারহিট হয়নি। রাজকুমার হিরানির জন্য হয়েছে। ‘দঙ্গল’-এ আমির খান আছে বলে লোকে পছন্দ করেনি। ছবির গল্প সকলের ভাল লেগেছে তাই ফিল্ম সুপারহিট। সুপারস্টার কোনও ছবিকে হিট করাতে পারে না। কোনও ভাল ছবি অভিনেতাকে সুপারস্টার বানাতে পারে। আসলে ফিল্ম হিট হয় দু’জনের জন্য— লেখক এবং পরিচালক।
প্র: আপনার সিক্রেট কার সঙ্গে ভাগ করেন?
উ: আমার বোন নুজহাতের (ইমরান খানের মা) সঙ্গে আমি খুব ক্লোজ। এ ছাড়া ‘সত্যমেব জয়তে’ যে পরিচালনা করেছিল, ও আমার খুব কাছের বন্ধু। আর অবশ্যই স্ত্রী কিরণ।
প্র: ‘ঠগ্স অব হিন্দোস্তান’-এ অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
উ: অমিতজির সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা এক কথায় দারুণ। উনি তো পাওয়ার হাউজ অব ট্যালেন্ট। হার্ড ওয়র্কিং আর ফোকাসড। ৪০ বছরের উপর হয়ে গেল ওঁর স্টারডম এখনও অক্ষত। এখনকার প্রজন্মের কাছেও উনি একজন সুপারস্টার। কাজের ফাঁকে আমি আর অমিতজি ছবি নিয়ে অনেক আলোচনা করতাম। মালটাতে শ্যুটিং করার সময় আমরা একসঙ্গে সিনেমা দেখতেও গিয়েছিলাম। দু’জনে পায়ে হেঁটে বডিগার্ড ছাড়া থিয়েটারে যাই। মালটাতে লোকজন খুব কম আর ভারতীয় নেই বললেই চলে। তাই আমাদের কোনও অসুবিধা হয়নি।
প্র: ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ৩০ বছর কাটালেন। চাওয়া-পাওয়ার হিসেব কষেছেন কখনও?
উ: করেছি। কত লোকজনের থেকে ভালবাসা আর শ্রদ্ধা পেয়েছি। আমার কাছে এটা বিশাল ব্যাপার। অনেক টাকা রোজগার করেছি। আমার জীবন সে দিক থেকে পরিপূর্ণ। ‘সত্যমেব জয়তে’র মতো শো করতে গিয়ে অনেক লোকের কাছে আসতে পেরেছি। সেটা হয়তো একজন অভিনেতা হিসেবে পারতাম না। কী হারিয়েছি, সেটা ভাবার বিষয়। আমি অ্যাগ্রেসিভ অভিনেতা। যখন কোনও ফিল্মের চরিত্রের উপর কাজ করি, ধ্যান-জ্ঞান সব সেই প্রজেক্টে দিয়ে দিই। তার জন্য আমার ব্যক্তিগত জীবন প্রভাবিত হয়েছে। আমার প্রথম স্ত্রী রিনা বা দ্বিতীয় স্ত্রী কিরণ এদের কারও সঙ্গেই আমি কোয়ালিটি সময় কাটাতে পারি না। আগে আমার আম্মিকে অনেক সময় দিতাম, সেটাও এখন আর পারি না। জুনেইদ আর ইরাকেও খুব কম সময় দিতে পারি। এখন চেষ্টা করি যাতে আজাদকে অন্তত একটু বেশি সময় দিতে পারি। যদি মুম্বইয়ে থাকি, সন্ধেবেলা ৬টা থেকে ৮টা শুধুই আজাদের জন্য। ওকে স্নান করাই, খাওয়াই আর তার পর গল্প পড়ে শোনাই। এ ভাবেই নিজের খামতিগুলো মেটানোর চেষ্টা করি আর কী (হাসি)!