অনুষ্কা
প্র: দশ বছরের সফর কী ভাবে মূল্যায়ন করবেন?
উ: প্রথম যখন ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছিলাম, সব কিছু নতুন ছিল। ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে মানিয়ে নিতে সময় নিয়েছি। নিজের শর্তে কাজ করেছি। বাঁধা গতের বাইরে চরিত্র করেছি। ২৫ বছর বয়সে প্রোডাকশন হাউস শুরু করেছি। তখন সফল না-ও হতে পারতাম। কিন্তু আজ আমি কনফিডেন্ট। যদি ব্যর্থও হই, তা হলে সেখান থেকে আবার নিজেকে তুলে ধরতে পারব।
প্র: ‘জ়িরো’ মানুষের অসম্পূর্ণতার কথা বলে। আপনার এমন কোনও দোষ-ত্রুটি রয়েছে যা শোধরাতে চান?
উ: অনেক কিছুই আছে। তবে অল্প-বিস্তর ইগোর সমস্যা সকলের মধ্যেই থাকে। আমি চেষ্টা করি, ইগো সরিয়ে রেখে সকলের সঙ্গে মিশতে। রোজকার জীবনেও যদি পজ়িটিভ মাইন্ড নিয়ে ঘর থেকে বেরোই, তা হলে মুম্বইয়ের ট্রাফিকও আমাদের ভাল লাগবে! লোকজনের মধ্যে সমবেদনার অভাব দেখলে বিরক্ত হই। অহেতুক ঝগড়া বা মারপিট করায় আমার ভীষণ আপত্তি! আর কেউ যদি পশু-পাখিদের উপরে নির্যাতন করে, আমার ভীষণ রাগ হয়।
প্র: ইন্ডাস্ট্রিতে বরাবর আপনি স্বাধীনচেতা। এর পিছনে পরিবারের অবদান কতখানি?
উ: নিজের প্রতি আমার বিশ্বাস ছিলই। একটা কথা সব সময়ে মনে রাখি, ইন্ডাস্ট্রিতে সবার আলাদা আলাদা জায়গা আছে। এখানে কেউ কারওটা ছিনিয়ে নিতে পারবে না। তাই খুশি মনে কাজ করি। আমি কোনও দিন অভিনেত্রী হতে চাইনি। তাই যখন এত দূর আসতে পেরেছি, আমার বিশ্বাস আরও এগোতে পারব। আত্মবিশ্বাস আর পরিশ্রম আমাকে স্বতন্ত্র বানিয়েছে।
প্র: শাহরুখের সঙ্গে আপনার চতুর্থ ছবি এটি...
উ: শাহরুখের সঙ্গে কাজ করার মানে, স্কুলে যাওয়া। এত বড় মাপের সুপারস্টার হয়েও এখনও শিখে যাচ্ছেন। ছোটখাটো, খুঁটিনাটি বিষয়ে ওঁর খুব কৌতূহল। তাই ওঁর সঙ্গে কাজ করার সময়ে অনেক শিখি। আর কমফর্ট লেভেল খুব ভাল। সেটা প্রতিটি ছবির সঙ্গে আরও সহজ হয়েছে।
প্র: অভিনেত্রী, প্রযোজক, ব্যবসায়ী... আরও কী কী হওয়ার ইচ্ছে রয়েছে?
উ: সত্যি কথা বলছি, এত কিছু আমি কোনও দিন ভাবিনি। এত ব্যস্ত থাকি যে, হাতে এক মুহূর্ত সময় নেই। আমার প্রোডাকশন হাউস খুব শিগগিরি অ্যামাজ়ন এবং নেটফ্লিক্সের জন্য শো বানাচ্ছে। ওই দু’টি শোয়ে আমি নেই। কিন্তু ভাই আর আমি দু’জনে মিলে সব কিছুর তদারকি করছি। সময় পেলে নতুন কিছু শেখার ইচ্ছে আছে, স্কাল্পটিং এবং পটারি।
প্র: সিঙ্গাপুর মাদাম তুসোয় নিজের মোমের মূর্তি দেখার অনুভূতিটা কেমন?
উ: চোখের সামনে নিজের মূর্তি দেখে গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল। আমি প্রথম যখন শাহরুখের মোমের মূর্তি দেখেছিলাম, ভীষণ ভাল লেগেছিল! মনে হয়েছিল, এক জন অভিনেতা কতটা জনপ্রিয় হলে এ রকম সাফল্য পাওয়া যায়! আমিও নিজের নাতি-নাতনিদের বলতে পারব, দ্যাখো, আমার মোমের মূর্তি (হেসে)!
প্র: আপনি সাফল্য সেলিব্রেট করেন?
উ: আমি সেলিব্রেট করি না। ‘সুই ধাগা’ হিট হওয়ার পরে বরুণ (ধওয়ন) আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল, কী ভাবে আমি সাফল্য উপভোগ করি। কিছুই করি না। খুব খুশি হই নিঃসন্দেহে। আর প্রোডিউসার সাকসেস পার্টিতে ডাকলে চলে যাই।
প্র: ছোটবেলাতেও কোনও সাফল্য সেলিব্রেট করেননি?
উ: তখন মা-বাবা বলতেন, ভাল মার্কস পেলে গিফট পাবে! এক বার সাইকেল পেয়েছিলাম। খুব খুশি হয়েছিলাম। ‘রব নে বনা দি জোড়ি’ যখন হিট করেছিল, তখন পরিবারের কাছে সেটা খুব বড় ইমোশনাল মুহূর্ত ছিল। তখন রোজ মনে হতো, আই অ্যাম অন সানশাইন।
প্র: খুশির সংজ্ঞা আপনার কাছে কী?
উ: আমি মিলেমিশে কাজ করতে ভালবাসি। খিটখিটে লোকজন আমার পছন্দ নয়। আমার কোর টিমে যদি কোনও সময় কিছু ভুল হয়, আমি নিজে চেষ্টা করি সেটা ঠিক করার। খুশির সংজ্ঞা আমার কাছে একটাই। নিজের খুশি ভুলে যখন অন্যকে খুশি রাখার চেষ্টা করি, সেটাই আমার আসল খুশি। খুশি থাকা বা না থাকাটা সম্পূর্ণ আপনার নিজের হাতে। এ ছাড়া আমি রোজ ধ্যান করি। আমার পোষ্যদের সঙ্গে সময় কাটাই। এ সবই আমাকে নির্ভেজাল খুশি দেয়।
প্র: ডিসেম্বরে আপনার বিয়ের এক বছর পূর্ণ হবে। ব্যক্তিগত এবং পেশাদার জীবনের মধ্যে ভারসাম্য রাখা কঠিন?
উ: একদমই নয়। আমার মতে, যে কোনও ওয়র্কিং উওম্যানের কাছে এটা খুব কমন ব্যাপার। বিয়ের দু’দিন আগে পর্যন্ত আমি কাজ করেছি। বিয়ের সাত দিন পর থেকে আমি ফিল্মের সেটে পৌঁছে গিয়েছিলাম। এ বছর আমি টানা কাজ করেছি। সব ইন্ডিপেন্ডেন্ট ওয়র্কিং উওম্যানের একই গল্প। আমি আমার কাজকে খুব ভালবাসি। আর ব্যক্তিগত জীবন এবং কাজের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে আমি জানি। কখনও দুটোকে মেলাইনি।
প্র: বিয়ের পরে নিজের ইমেজ নিয়ে একটু বেশি সচেতন থাকেন?
উ: আমার কাজ বা আমার কাজ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত, সবটাই আমার। স্বতন্ত্র ভাবে সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে এসেছি, ভবিষ্যতেও নেব। ওর (বিরাট কোহালি) কাজ এবং সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ ওর। আমরা আমাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকি। আর সাপোর্ট যে কোনও রিলেশনশিপে অপরিহার্য।