কাজল
প্র: টিনএজার মেয়ের মা আপনি। সামলান কী ভাবে?
উ: টিনএজেই ছেলেমেয়েদের ব্যক্তিত্ব তৈরি হয়ে যায়। নিজেদের স্বতন্ত্র পছন্দ, মতামত গড়ে ওঠে। আর আমরা মা-বাবারা সেটা অনেক দেরিতে বুঝি। আমার নিজেরও বুঝতে অনেক সময় লেগেছিল। এই বয়সে বাচ্চাদের সময় দিতে হয়। তাতে দেখবেন, আপনি যে রকম চাইছেন সেটাই হবে। আমার আর নাইসার অনেক বিষয়ে তর্ক হয়। ও নিজের মতো চলতে চায়। আমার মতে, ওদের ছেড়ে দেওয়া উচিত। ভুল পথে গেলে আমরা তো আছিই। কিন্তু কাপ গরম কি না, সেটা ওরা নিজেরাই পরখ করে দেখুক। ভাল-খারাপ নিজেরাই বুঝে নিক।
প্র: যুগ আর নাইসার ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়ে সতর্ক থাকেন?
উ: আমি ব্যালান্স করে চলি। টিভি দেখা আর পড়াশোনা করার পরেও একটা পৃথিবী আছে। আজকের দুনিয়া খুবই কম্পিটিটিভ। সেখানে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। মা হিসেবে কখনওই চাইব না, যে যুগ-নাইসা কোনও কিছু মিস করুক।
প্র: ছেলে না মেয়ে— কার অভিভাবক হওয়াটা বেশি কঠিন?
উ: ছেলে বা মেয়ে হিসেবে বলব না। আসলে প্রথম সন্তানকে বড় করা সবচেয়ে কঠিন। প্রথম সন্তানের সামান্য জ্বর হলেও মনে হয়, সুনামি এসেছে। দ্বিতীয় সন্তানের ক্ষেত্রে প্যানিক কম হয়।
প্র: নাইসা তো বিদেশে পড়তে গিয়েছে। খুব মিস করেন নিশ্চয়ই?
উ: ভীষণ। আমি তো সময় পেলেই সিঙ্গাপুর চলে যাই। সারাক্ষণ টেক্সট করছি, ‘মিস ইউ’ লিখছি। নাইসা উল্টে আমাকে বলে, ‘নো ড্রামা, মা’ (হেসে)! প্রথম তিন মাস আমাদের সকলের জন্য খুব কঠিন ছিল। কিন্তু এখন ওর ওখানে কিছু ভাল বন্ধু হয়েছে। তাই খানিকটা সেটল করেছে।
আরও পড়ুন: ঠিক বলায় মার খেয়েছিলাম
প্র: মেয়ে কি অভিনয় জগতে আসতে চায়?
উ: নাইসা এ নিয়ে কিছু জানায়নি। যদি আসতে চায়, আমার আর অজয়ের পুরো সমর্থন থাকবে। যুগ এখন ছোট আর কনফিউসডও। ফিটনেস সংক্রান্ত বিষয় ওর খুব ভাল লাগে। তাই ওকে মার্শাল আর্ট শেখাচ্ছি।
প্র: অভিনেতাদের সন্তানরা শুরু থেকেই প্রচারে। এতে তো নিশ্চয়ই সমস্যা হয়।
উ: প্রথম প্রথম ওদের খুব অসুবিধা হতো। এত বেশি অ্যাটেনশন কার ভাল লাগে! এয়ারপোর্টে বা কোনও পাবলিক প্লেসে আমি সব সময়ে ওদের সঙ্গে থাকতাম। বলতাম, কোনও দিকে না তাকিয়ে সোজা গাড়িতে উঠতে। নাইসাকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক কিছু লেখা হতো। কারও কথায় কান না দিয়ে নিজের উপরে আত্মবিশ্বাস রাখতে বলতাম। আর নাইসা তো আমার মতো ভীষণ পাগল, জেদি। (খুব জোরে হেসে) ওকে সব সময়ে বলি, এই জেদ ভাল কাজে লাগাও।
প্র: এত কম কাজ করেন। তাও আপনাকে নিয়ে আগ্রহ কম নেই!
উ: কম কাজ করি বলেই সকলের আগ্রহ থাকে। ভাল স্ক্রিপ্ট আর ভাল গল্প খুব কম পাই। খারাপ চিত্রনাট্য বা চরিত্রের পিছনে নিজের পরিশ্রম দিতে চাই না।
প্র: ‘হেলিকপ্টার ইলা’র জন্য আপনি না অজয় কে আগে রাজি হলেন?
উ: চিত্রনাট্য শুনে আমি আর অজয় দু’জনেই কানেক্ট করতে পেরেছিলাম। আমি অভিনয় করতে রাজি হয়ে যাই। আর অজয় বলে, ও প্রোডিউস করবে। দাদার (প্রদীপ সরকার) সঙ্গে কাজ করার সুযোগ ছাড়তে চাইনি। ওঁর সঙ্গে আগে বিজ্ঞাপন করেছি। ভীষণ ভাল অভিজ্ঞতা। আসলে আমরা অনেক দিন ধরেই একসঙ্গে কাজ করতে চাইছিলাম। কিন্তু ভাল কোনও বিষয় পাচ্ছিলাম না। আমি আর দাদা একে অপরের ভক্ত! যে দিন সেটে আমার কাজ থাকত না, সে দিনও দাদা আমাকে আসতে বলতেন। ছবির শেষে মনে হয়েছে, উনি আমার সেরাটা বার করে এনেছেন। বলেছি, পরের ছবিতে ওঁকে অ্যাসিস্ট করব (হাসি)!
প্র: মায়ের (তনুজা) সঙ্গে ছবি করতে চান না?
উ: চাই তো। কিন্তু ভাল চিত্রনাট্যও পেতে হবে। আমি যদি গল্পের বিষয়ে খুঁতখুঁতে হই, আমার মা মহা খুঁতখুঁতে! আমি তা-ও তিন বছরে একটা ছবি করি। মা পাঁচ বছরে একটা (হাসি)!
প্র: তনুজা আপনাকে পেরেন্টিং নিয়ে টিপস দেন?
উ: মা নিজের সময়ে খুব বড় স্টার হওয়া সত্ত্বেও আমাদের সঙ্গে অনেক সময় কাটাতেন। গল্পের ছলে জীবন, মৃত্যু, ক্রোধ, অহংকার... এই সব বোঝাতেন। মায়ের জীবনদর্শন খুব ভাল। আমিও চেষ্টা করি, বাচ্চাদের মধ্যে সেই গুণগুলো ঢোকানোর।
প্র: বাংলা ছবি করতে চান?
উ: চাই। তবে ভাষার ব্যাপারে একদম কনফিডেন্ট নই। ভাষার উপরে দখল না থাকলে সেই ছবি করা উচিত নয়। একটা অসাধারণ স্ক্রিপ্ট আর এক জন আউটস্ট্যান্ডিং ডিরেক্টরের সঙ্গে বাংলা ছবি করার অপেক্ষায় আছি।
প্র: জীবনের এই পর্যায়ে এসে নতুন জিনিস শিখতে ইচ্ছা করে?
উ: মা হিসেবে নিত্যনতুন জিনিস শিখছি। নাইসা আর যুগ আমাকে নতুন গান, নতুন নাচের স্টাইল, নতুন গ্যাজেট সম্পর্কে শেখাতেই থাকে। এক সময়ে খুব লিখতে ভালবাসতাম। এখন আর সময় পাই না। লেখার জন্য নিরবচ্ছিন্ন সময় চাই। সেটা যে দিন পাব, সে দিন আবার লিখতে শুরু করব।
প্র: আত্মজীবনী লিখবেন?
উ: (জোরে জোরে মাথা নেড়ে) একদম না। কোনও দিন না। আমার পার্সোনালিটি খুব ইন্টারেস্টিং, কিন্তু আমি মানুষটা বোরিং। সব সময়ে ভাবি, মিডিয়া আমাকে কী প্রশ্ন করবে? আমি তো কোনও দিনই গসিপ বা মসালা দিতে পারি না।
প্র: তা হলে আপনার বায়োপিকও কোনও দিন হবে না?
উ: কোনও দিন নয়। তবে দিদা শোভনা সমর্থ আর মায়ের বায়োপিক দেখতে চাই। আর মিস্টার অমিতাভ বচ্চনের বায়োপিক নিয়েও আগ্রহ রয়েছে। সেখান থেকেই কত কিছু শেখা যাবে।
প্র: নিজেকে খুশি রাখেন কী ভাবে? মিডলাইফ ক্রাইসিসে ভোগেন?
উ: (খুব জোরে হেসে) মিডলাইফে আমি পৌঁছেছি নাকি! নিজের সঙ্গে কথা বলি। এমনিতেই আমি কথা বলতে ভীষণ ভালবাসি। পজ়িটিভ থাকার চেষ্টা করি। নেগেটিভিটি থেকে দূরে থাকি। ওয়র্কআউট করি। বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটাই। এক কথায় যে ভাবে পারি, নিজেকে খুশি রাখার চেষ্টা করি।