কৌশিক
প্র: গঙ্গোপাধ্যায় পরিবারের তিন জনেরই তো আপাতত ফিল্মের সেটেই দিন কাটছে। আপনি ‘কিশোরকুমার জুনিয়র’ নিয়ে ব্যস্ত। চূর্ণী ‘তারিখ’ নিয়ে, আর উজান ‘রসগোল্লা’...
উ: যা বলেছেন!
প্র: উজান যখন ‘রসগোল্লা’র শুট করছিলেন, আপনি বা চূর্ণী গিয়েছিলেন সেটে?
উ: যাইনি। চেয়েছিলাম, ও নিজের মতো করে স্বচ্ছন্দে অভিনয় করুক। বাবা-মা সেটে থাকলে যদি এতটুকুও কনশাস হয়ে যায়... তার চেয়ে নিজের মতো করেই বড় হোক ও!
প্র: উজান আপনার ছবিতে ডেবিউ করলেন না। খারাপ লাগা আছে?
উ: এটা বরং গৌরবের যে, শিবু-নন্দিতা ওর নাটক দেখে ওকে বেছে নিয়েছে। আর আমি বাবা বলেই আমার ছবিতে ছেলের জন্য একটা চরিত্র লিখব, এমনটা কোনও দিন ভাবিনি।
প্র: অভিনয় নিয়ে কোনও পরামর্শ দেন ছেলেকে?
উ: সে ভাবে নয়। ‘রসগোল্লা’তে ওর সঙ্গে বাঘা বাঘা সব অভিনেতা কাজ করছেন... খরাজ মুখোপাধ্যায়, শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়, কৌশিক সেন, বিদীপ্তা চক্রবর্তী, রজতাভ দত্ত। ফলে এক দিকে যেমন ওর সুবিধে হয়েছে, তেমনই কাজটা খানিক কঠিনও হয়ে গিয়েছে।
প্র: আপনি নাকি ‘বিসর্জন টু’ করছেন?
উ: প্রযোজক (সুপর্ণকান্তি করাতি) আমাকে পাগল করে দিচ্ছে ‘বিসর্জন টু’ করার জন্য। কিন্তু আমার যা কমিটমেন্ট রয়েছে, এই মুহূর্তে তা সম্ভব নয়। গল্প কিন্তু আছে। আসলে ‘বিসর্জন’-এর প্রতি আমার গোটা টিমের এমন মায়া জন্মেছে যে, আমরা প্রায়ই আলোচনা করতাম ‘এমনটা হলে কেমন হতো!’ ওখান থেকেই গল্পটা তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুন: 'আমার রান্না অ্যান্ড্রু খুব পছন্দ করে'
প্র: কাস্ট কি এক?
উ: একই থাকা উচিত।
প্র: ‘কিশোরকুমার জুনিয়র’-এর শুটিং এখন কোন পর্যায় রয়েছে?
উ: জয়সলমেরে শুটিং নিয়ে তো খুবই ব্যস্ত। গল্পে কিশোরকণ্ঠী শিল্পীর যে চরিত্রটা বুম্বাদা করছেন, তার রাজস্থানে শো করা নিয়ে একটা অংশ রয়েছে। তারই শুটিং মূলত। এ দিকে মুম্বইয়ে গান রেকর্ডিং হয়ে গিয়েছে। ছবিতে রিয়্যাল মিউজিশিয়ানরাও অভিনয় করবেন। প্রস্তুতি পর্বটা তাঁদের সঙ্গে রিহার্সাল করেই কাটল। বৈশাখে আবার ‘দৃষ্টিকোণ’
মুক্তি পাবে।
প্র: পরপর অনেক ছবি করছেন। পরিচালক হিসেবে এতে ক্রিয়েটিভ সমস্যা হয় বলে মনে করেন?
উ: ঠিক করেছি যে, ২০১৮ সালে অনেক ছবি করব। আমি তো অন্য কোনও ভাবে রোজগার করি না। আর এই বছরটা আমার একটু প্রয়োজনও আছে বেশি রোজগারের। এ বার এতে সমস্যা আছে, না নেই— আমি জানি না। ছবি ভাল হলে তো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এতগুলো ছবি করতে গিয়ে যদি একটা-দুটো খারাপ হয়ে যায়, সেটা খুব দুর্ভাগ্যের হবে।
প্র: এ বছর এসভিএফ-এর এতগুলো ছবির মধ্যে আপনি একটাও করছেন না। কেন?
উ: ওদের সঙ্গে কথা হয়েছিল। বাধ্য হয়েই এসভিএফ-কে বলেছিলাম, ২০১৮-তে আমি পারব না! সব জায়গায় সই করা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ওদের সঙ্গে আমার এমনই সম্পর্ক, আজ বললে কালই ছবির কাজ শুরু হয়ে যাবে। এর মধ্যে কোনও আলাদা কেমিস্ট্রি-ব্যাকরণের ব্যাপার নেই।
প্র: ‘নগর কীর্তন’ করছেন। তৃতীয় লিঙ্গের গল্প বলার একটা অভিপ্রায় আপনার সিনেমা-ভাবনায় থাকেই...
উ: একটা টেলিফিল্ম করেছিলাম, ‘উষ্ণতার জন্য’। সেটাকেই ভেঙেচুরে নিয়ে ‘আরেকটি প্রেমের গল্প’... ছবিটা বিরাট সাফল্যও পেয়েছিল। কিন্তু ওই সাফল্যের মধ্যেও ব্যর্থতা রয়ে গিয়েছে।
প্র: কী রকম?
উ: ‘আরেকটি প্রেমের গল্প’ যখন করছি, তখন কিন্তু আমি প্রতিষ্ঠিত। নবাগত নই। কিন্তু আমার ছবি দেখে লোকে বলেছিল, ‘এ তো ঋতুপর্ণ ঘোষের করে দেওয়া ছবি!’ আসলে ঋতুপর্ণের উপস্থিতিটা তো সাধারণ বাল্বের মতো নয়, একটা ফ্লাডলাইটের মতো। সেই আলোয় আমার অনেক অন্ধকার ঢেকে গিয়েছিল। কিন্তু কিছু অন্ধকার আমি রাখতে চেয়েছিলাম। কস্টিউম এবং আর্টের দায়িত্বে ঋতুপর্ণ থাকার জন্য ছবিটা দেখতে অনেকটা ওঁর ছবির মতো হয়ে গিয়েছিল। ঋতুপর্ণর একটা মুক্তি ঘটেছিল ‘আরেকটি প্রেমের গল্প’ দিয়ে। আমার ছবির কতটা ক্ষতি হয়েছিল, সেটা ওই মুক্তির কাছে হয়তো তেমন গুরুত্বপূর্ণও নয়। কিন্তু ‘নগর কীর্তন’ আমার অতৃপ্তি মিটিয়ে দিয়েছে। কারণ আমার কাছে রূপান্তরকামী মানুষদের গল্পগুলো অত এলিট নয়। আমার কাছে তৃতীয় লিঙ্গ মানে বীভৎস সেজে সমাজে হোমোফোবিয়া তৈরি করা নয়, সমাজে এক জন সাধারণ মানুষের স্বীকৃতি পাওয়ার লড়াই। ‘নগর কীর্তন’ সেই সাধারণ মানুষের গল্প বলে।
প্র: আর কোনও আক্ষেপ রয়েছে আপনার?
উ: সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বড় পরদায় কোনও কাজ করিনি। আসলে ওঁর ক্ষমতাটাকে ধারণ করার মতো গল্প এখনও আমি ভেবে উঠতে পারিনি...