সেফ আলি খান
প্র: ‘কালাকান্ডি’র প্রচার শুরু করার আগে তো সুইৎজারল্যান্ডে ছুটি কাটিয়ে এলেন!
উ: আমরা গিয়েছিলাম সুইৎজারল্যান্ডের এক অপূর্ব জায়গা, গুস্তাদে। পৃথিবীতে এমন এই একটি জায়গাই আছে, যেখানে ওয়াইন, প্রচুর খাবার খাওয়ার পরও আপনার ওয়েট বাড়বে না। তৈমুরও আমাদের সঙ্গে গিয়েছিল। খুব মজা করেছে। মা-বাবার নিরবচ্ছিন্ন সান্নিধ্য কে না চায়?
প্র: জীবনের প্রতি আপনার যে মনোভাব, তৈমুরের জন্মের পর তাতে কি বদল এসেছে?
উ: আমি সব সময়ে বর্তমানে থাকি। ভবিষ্যতের কথা পরে ভাবি। কাল অনেক কিছুই হতে পারে। কিন্তু তাঁর জন্য নিজের ‘আজ’ নষ্ট করবেন কেন? ব্যাঙ্কে কিছু টাকা থাকা উচিত। তবে এমনটাও যেন না হয় যে, টাকা জমানোর তাগিদে জীবনটাই উপভোগ করলেন না! সব কিছুতে একটা ব্যালান্স থাকা জরুরি, আর সেটাই অনেক সময় বয়সের সঙ্গে সঙ্গে আসে।
প্র: ‘কালাকান্ডি’ ছবিতে আসক্তি অন্যতম বিষয়। আসক্তি নিয়ে আপনার মতামত কী?
উ: করিনার সঙ্গে আলাপ হওয়ার আগেই আমি স্মোকিং ছেড়ে দিয়েছিলাম। ডাক্তার আমাকে ভীষণ ভয় দেখিয়েছিলেন। নেশার ফাঁদে পা দেওয়াটা আজকের সমাজে একটা বড় সমস্যা। যুবসমাজের এনার্জি অনেক, কিন্তু অনেক সময়ই তারা নিজেদের ঠিক মতো পরিচালনা করতে পারে না। অনেক পরিবারে বাচ্চারা মা-বাবার কথা শোনে না। একটা ভাল বন্ধু সার্কল থাকাটা খুব দরকার, যাদের সঙ্গে খেলাধুলো করবে। ফলে নেশা থেকেও দূরে থাকবে। আর এই ভাল সার্কল তখনই তৈরি হবে, যখন আপনার বাচ্চা একটা ভাল স্কুলে যাবে। সেই দায়িত্বটা বাবা-মায়ের। আর ভাল বন্ধুদের সঙ্গ পাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার।
প্র: আপনি সন্তানদের খেয়াল রাখেন?
উ: ইব্রাহিমের বন্ধুদের আমি চিনি। সাজিদ নাদিয়াদওয়ালার ছেলে ইব্রাহিমের খুব ভাল বন্ধু। এ ছাড়া সলমনের (খান) পানভেলের ফার্মহাউসেও ইব্রাহিমের যাতায়াত আছে। ওর গতিবিধির উপর আমার নজর থাকে। বন্ধু সার্কলও ভাল। ওরা বেশির ভাগই আমাদের পরিবারের মতো। সারাও এখন অভিনয় করছে। আমি যতটা সম্ভব ওকে পরামর্শ দিই। নিজের প্রতি সৎ থাকাটা খুব জরুরি আর নিজের মধ্যে কী স্পেশ্যাল কোয়ালিটি আছে, সেটাও জানা দরকার। সারা অবশ্য বোঝে সবই। ও তো বরাবরই অ্যাক্টর হতে চেয়েছিল। তবে আমার চিন্তা হয় বাচ্চাদের জন্য, কারণ ইন্ডাস্ট্রিতে অনিশ্চয়তা বড্ড বেশি। ড্রামাও অনেক হয়। সারা পড়াশোনায় খুব ভাল ছিল। যে কোনও কর্পোরেট ইন্ডাস্ট্রিতে ভাল চাকরি পেতে পারত। কিন্তু সেটা ও কখনও চায়নি।
প্র: আপনি নেশা করেছেন কখনও?
উ: ২৫ বছর বয়সে একবার ড্রাগ নিয়েছিলাম। কিন্তু ড্রাগ নেওয়ার পর আমার মধ্যে একটা পরিবর্তন এসেছিল। ছোটবেলায় বিরাট বিরাট বাড়িতে আমি বড় হয়েছি। তাই অন্ধকারকে খুব ভয় পেতাম। বিশেষ করে বাথরুমে যেতে। কিন্তু ড্রাগ নেওয়ার পর অন্ধকারকে আর ভয় পেতাম না। এর বিপরীতও হতে পারত। কিন্তু ভাগ্যক্রমে নেশার কবল থেকে বেরিয়ে এসেছি। অনুভব করেছি, ভয় কাটানোর পন্থা কখনওই নেশা হতে পারে না।
প্র: ছাত্রজীবনে আর কী কী কুকর্ম করেছেন?
উ: ইংল্যান্ডে থাকাকালীন একবার স্কুল থেকে সাসপেন্ড করেছিল। বাইরে পার্টি করতে যাওয়ার অনুমতি ছিল না। আমি সেটাই করেছিলাম। লন্ডন থেকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়, তখন আমি ১৭। তাই মার খাওয়ার হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিলাম। কিন্তু ছোটবেলায় বাবা আমাকে বেল্ট দিয়ে মারতেন আর মায়ের কাছে অনেক থাপ্পড় খেয়েছি। মনে আছে, একবার স্কুলের কোনও পরীক্ষায় ফেল করেছিলাম। মা আমার বাইরে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন। একদিন আমি মাকে ফাঁকি দিয়ে বাইরে পার্টি করতে গিয়েছিলাম। রাত দুটোয় ফিরে দেখি, মা আমার বিছানায় শুয়ে। কী আর করি, মাকে ডাকতে হল, তার পর মার খেলাম! মাকে আমি খুব বিরক্ত করেছি। মাঝে মাঝে আমরা বাড়িতে মজা করে বলি, তৈমুর যদি আমার মতো হয়! কিন্তু আম্মা বলেন, তৈমুর ও রকম হবে না।
ছেলে তৈমুরের সঙ্গে
প্র: অভিনেতা হওয়ার সিদ্ধান্ত কি নিজেই নিয়েছিলেন?
উ: হ্যাঁ, পটৌডিসাব ভীষণ সেনসিবল মানুষ ছিলেন। আমার উপর কোনও দিন কিছু চাপিয়ে দেননি। স্কুল লেভেলে আমি ক্রিকেট খেলেছি, কিন্তু খেলার বিরাট কোনও ইচ্ছে ছিল না। অভিনয় করার কথাটা মাথায় আসে অন্য কয়েকটা সুবিধের কারণে। যেমন দিল্লি থেকে মুম্বই এসে স্বাধীন ভাবে থাকব। ফিল্মে কাজ করব। আইডিয়াটা খুব রোমান্টিক মনে হয়েছিল। জিমে সব স্ট্রাগলাররা একসঙ্গে ওয়র্কআউট করতাম। পরস্পরকে সাহায্য করতাম। এখন অনেকেই সাকসেসফুল হয়েছি। কিন্তু পিছনে ফিরলে মনে হয়, কত উপভোগও করেছি সেই সময়টা!
প্র: তার পর ২৫ বছর ইন্ডাস্ট্রিতে কাটালেন!
উ: হ্যাঁ, সত্যিই! তখন তো বলা হতো ৪০ বছরেই প্যাকআপ। কিন্তু এখন ৬০ হল নতুন ৪০! পুরনো সময়ের অভিনেতারা ফিটনেসকে মোটেই গুরুত্ব দিতেন না। কিন্তু আমরা ফিট থাকি, বয়সটা অনেক কম লাগে। গত বছরটা আমার কেরিয়ারে গুরুত্বপূর্ণ। ‘রেঙ্গুন’, ‘শেফ’-এ আমার অভিনয়ের স্কিল দর্শক আরও ভাল ভাবে বুঝতে পেরেছেন। এ বছর ‘কালাকান্ডি’, ‘বাজার’-এর মতো ছবি মুক্তি পেতে চলেছে।
প্র: এ বার পুরনো প্রসঙ্গ। আপনাকে নাকি ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে’ অফার করা হয়েছিল। ঘটনাটা সত্যি?
উ: কিছুটা সত্যি। আসলে ছবিটা প্রথমে শাহরুখকেই অফার করা হয়েছিল। কিন্তু শাহরুখ একটু সময় নিচ্ছিল। সেই সময়ে আদিত্য চোপড়া আমাকে বলেন যে, শাহরুখ যদি দ্রুত সম্মতি না দেয়, তা হলে তুমি করবে? কিন্তু শাহরুখ নির্ধারিত সময়ে উত্তর দিয়ে দেন। আমার মনে হয় না, শাহরুখ যত ভাল ভাবে ‘দিলওয়ালে...’ করেছে, আমি তা পারতাম। তখন আমার মধ্যে ম্যাচিয়োরিটির অভাব ছিল। সেই সময়টা আমি ‘ইয়ে দিল্লাগি’র মতো ছবিতে কাজ করছি (হেসে)।
প্র: করিনা সব সময় বলেন, উনি আপনার কাছ থেকে কী শিখেছেন। আপনি করিনার কাছে কী শিখেছেন?
উ: অনেক কিছু... টাইম ম্যানেজমেন্ট, ফিটনেস, নিয়মানুবর্তিতা, ধৈর্য... এই সব বিষয়ে ও পারফেক্ট।
প্র: তৈমুরের বাবা কি স্ট্রিক্ট?
উ: একদম না। তৈমুর চাইলে আমার বইও খেতে পারে।
প্র: অটোবায়োগ্রাফি লিখবেন কখনও?
উ: এই মুহূর্তে ভাবিনি। ভবিষ্যতে যদি লিখি, তা হলে আত্মজীবনীর নাম দেব ‘আই উইল বি গুড ফ্রম টুমরো’!