দিনকয়েক আগে এক অস্ট্রেলীয় ভদ্রমহিলা পার্কে হাঁটতে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যান। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর দীর্ঘ সময়ের চেষ্টায় জ্ঞান ফেরে তাঁর। জ্ঞান হারানোর কারণ? যে জিন্সটা তিনি পরেছিলেন সেটা সাঙ্ঘাতিক টাইট ছিল।
বা মুম্বইয়ের সেই মহিলা? শুধু শাড়িই পরতেন তিনি। সায়ার দড়িটা বাঁধতেন খুব টাইট করে। কোমরের ওই জায়গায় দগদগে ঘা শেষমেশ গড়িয়েছিল ক্যানসারে।
টাইট পোশাকআশাকের চক্করে পড়েছেন এমন মানুষই এখন সংখ্যায় বেশি। আর ফ্যাশন সচেতন, নতুন নতুন ট্রেন্ড ভালবাসেন, অথচ টাইটস পরবেন না! তা কী হয়? আর বলিউডের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের দেখে কলেজছাত্রী হোন বা ফ্যাশন সচেতন গৃহবধূ— সবাই ভাবছেন এই তো, বডিহাগিং টপ আর একটা স্কিন-টাইট প্যান্ট গলিয়ে নিই। তার পর আর আলিয়া বা করিনা কেন, সাইজ জিরো তো আমাকেই বলবে সবাই। তবে মজার কথা নিজেদের ফিট, স্লিম আর চটকদার দেখাতে শুধু যে মেয়েরাই টাইটস পরছেন বেশি বেশি তা কিন্তু নয়। ছেলেদেরও টাইটস পরার ঝোঁকটা বেশ বেশি।
পরে তো ফেলছেন। কিন্তু ঠিক কী ভাবে ক্ষতি করতে পারে স্কিন টাইট এই সব পোশাক? সেটা জানেন কি?
স্কিন টাইট জিনস দীর্ঘ সময় পরে থাকলে নার্ভ যথেষ্ট চাপের মধ্যে থাকে। লোয়ার ব্যাক পেন হয়। শরীরের বিপাক প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমনকী প্রবল শ্বাসকষ্টের অনুভূতিও হয়। আইটি কর্মী মঞ্জুষা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যেমন হয়েছিল দিন কয়েক আগে। স্কিন টাইট জিনস পরে বন্ধুদের সঙ্গে শপিংয়ে বেরিয়েছিলেন তিনি। অস্বস্তিটা টের পেয়েছিলেন। কিন্তু মাথা ঘামাননি। ‘‘প্রচুর হেঁটেছিলাম ওই দিন। ঘণ্টাচারেক পর দেখি হাঁটু আর থাই-তে একটা ‘নাম্ব ফিলিং’ হচ্ছে। ভয় পেয়েছিলাম খুব। আর তার পরেই তো পেপারে এই খবর!’’ জানান তিনি।
তবে যদি ভেবে থাকেন শুধু স্কিন টাইট জিন্সই আপনার ক্ষতি করে, তা কিন্তু নয়। সন্ধেবেলা পুলসাইড পার্টিতে যে টাইট করসেট গাউনটা পরে যাচ্ছেন, সেটা কিন্তু কয়েক ঘণ্টার জন্য হলেও ক্ষতি করে দিতে পারে আপনার। বিপাকপ্রক্রিয়া যেমন সমস্যায় পড়তে পারে, তেমনই শ্বাসকষ্টও হতে পারে। হয়তো ভাবলেন ব্যাপারটা সাময়িক। কয়েক ঘণ্টা তো পরে আছি। কিন্তু যা ক্ষতি হওয়ার, ওইটুকু সময়েই কিন্তু হয়ে যাবে।
আর ছেলেরা?
কর্পোরেটে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকলে তো কথাই নেই। স্যুটেড, বুটেড তো হলেন। আর সঙ্গের টাই? সে-ই বা বাদ যায় কী করে! অনেকেই আছেন খুব টাইট করে বাঁধেন টাই-টা। টের পান অসুবিধে হচ্ছে। কিন্তু হয়তো জানেন না কতটা সাঙ্ঘাতিক! ব্রেনে অক্সিজেন চলাচলে বাধা তো পড়েই, পিঠে বা ঘাড়ে মাসল টেনশন হলেও অবাক হবেন না।
ফ্যাশন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পল কিন্তু মনে করেন টাইট জিন্স পরে যে মহিলা অসুস্থ হয়েছিলেন, তাঁর ঘটনাটা অন্য। শুধু ডেনিমই সেই ঘটনার জন্য দায়ী নয়। ‘‘আপনি যদি অনেক দিন ধরে হিল পরেন, আজেবাজে ব্র্যান্ডের, তা হলে হাঁটু বা পায়ে সমস্যা হবেই। টাইট পোশাক পরলেই যে এমন গুরুতর সমস্যা হয়, তা কিন্তু নয়। হতে পারে যে মহিলা অসুস্থ হয়েছিলেন, তাঁর অন্য কোনও শারীরিক অসুবিধে ছিল। তা ছাড়া এখনকার জিন্স ফেব্রিকে লাইক্রা মেশানো আছে। তাই জিন্সগুলো স্ট্রেচেবল। পরলেও অসুবিধে হয় না। বা আমরা যে করসেট ব্লাউজগুলো এখন বানাচ্ছি, সেগুলো ওই আগের ইউরোপীয় ধাঁচে মোটেই অত দমবন্ধকরা নয়। তবে দীর্ঘদিন ধরে টাইট পোশাক পরলে সমস্যা তো হবেই,’’ বলেন অগ্নিমিত্রা।
কিন্তু পেশাগত কারণে হোক বা অন্য কোনও কারণ, টাইট পোশাক তো মাঝেমধ্যেই পরতে হয় অনেককে। তা হলে কি টাইট ডেনিম বা অন্য কোনও টাইট ড্রেস পরার আগে দু’বার ভাবতে হবে?
এনআরএস হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত নিউরো সার্জেন পরিমল ত্রিপাঠী সাবধান করলেন। ‘‘আর্টারিতে ব্লাড সার্কুলেশন কম হলে শরীরের নার্ভ এন্ডিংয়েও চাপ পড়ে। কমপ্রেশন বেশি হয়। সেই জায়গাটা ক্রমশ অবশ হয়ে কর্মক্ষমতা হারায়। দেখুন, টাইট পোশাক পরবেন কি পরবেন না সেটা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত পছন্দ। তবে আরামদায়ক পোশাক পরাটা সত্যিই জরুরি,’’ কথাপ্রসঙ্গে জানান তিনি।
টাইট পোশাক পরলে দেখতে সুন্দর লাগবে। চেহারার সৌন্দর্য ফুটে উঠবে অনেকটাই বেশি। এটা কি অনেকটাই মনের ব্যাপার নয়? মনোবিদ জয়রঞ্জন রাম বললেন, ‘‘দেখুন, কারণটা আমরা সবাই জানি। যাঁরা সাইজ জিরো হচ্ছেন বা টাইট পোশাক পরছেন, দেখতে ভাল লাগবে বলেই করছেন। তাঁরা চান সবাই তাঁদের দেখুক, প্রশংসা করুক। সেই হাওয়াতে গা ভাসালে কী আর বলার আছে বলুন?’’
কোনও একদিন অফিস যাওয়ার রাস্তায় হয়তো আপনিও হঠাৎ শরীরে অস্বস্তি অনুভব করলেন। মনে মনে ভাবলেন চাপা টেনশন চলছে, খাবারটা বোধহয় ঠিকঠাক হজম হয়নি। অফিসে ঢুকেও সারা দিন চাপা অস্বস্তি। নাহ্, টাইটস পরলেই যে অসুবিধে হবে তা নয়। কিন্তু হয়তো আপনি জানেন না!
আপনার ওই টাইট টপটাই ভিলেন নয় তো?
অফিস স্ট্রেসের সঙ্গে লড়াই করুন। কিন্তু টাইটের সঙ্গে ফাইট করতে যাবেন না।