শরীরে খেলুক বর্ণমালা

টি-শার্টের ডিপ নেকলাইনে। গাউনের ফল-এ। ফ্যাশনে ফুটছে হস্তাক্ষর। লিখছেন নাসরিন খান। এই কিছু দিন আগেই ডিজাইনার কিরণ উত্তম ঘোষ বলছিলেন হাতের লেখার শৈলীটা ক্রমেই অবলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। হাতে লেখা চিঠি তো হারিয়ে গেছে সেই কবেই! ইদানীং কিন্তু মনে হচ্ছে ডিজাইনাররা এই হারিয়ে যাওয়া লেখাকে তাঁদের সৃষ্টিতে নিয়ে আসার ব্যাপারে ভালই চেষ্টা চালাচ্ছেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৫ ০০:০৯
Share:

টাইপোগ্র্যাফি করা পোশাকে লাস্যময়ী গৌরী খান

এই কিছু দিন আগেই ডিজাইনার কিরণ উত্তম ঘোষ বলছিলেন হাতের লেখার শৈলীটা ক্রমেই অবলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। হাতে লেখা চিঠি তো হারিয়ে গেছে সেই কবেই! ইদানীং কিন্তু মনে হচ্ছে ডিজাইনাররা এই হারিয়ে যাওয়া লেখাকে তাঁদের সৃষ্টিতে নিয়ে আসার ব্যাপারে ভালই চেষ্টা চালাচ্ছেন।

Advertisement

এই বছরই মেট গালা সেরিমনির রেড কার্পেট মাতিয়ে দিয়েছিলেন পপ গায়িকা ম্যাডোনা। একটা দুর্দান্ত ব্ল্যাক মকসিনো গাউনে। স্ক্রিপ্ট গাউন আর অনুচ্চারিত মেক আপে ম্যাডোনা চমকে দিয়েছিলেন সবাইকে। একই রকম মকসিনো গ্র্যাফিটি গাউন বেছে নিয়েছিলেন কেটি পেরি ওই অনুষ্ঠানের জন্য। প্রত্যেক বছর মেট বল অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে সেলেবরা তাঁদের নিজস্ব ফ্যাশন স্টেটমেন্ট-এ এমনিতেই মাথা ঘুরিয়ে দেন। এ বছরও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে তফাত ছিল একটাই। গাউনের ওপরের লেখাটা। টি-শার্ট বা নেল আর্ট— স্ক্রিপ্ট ফ্যাশনেই এখন মেতে এখনকার প্রজন্ম।

রাস্তাঘাটে ঘুরেফিরে বেড়ানোর স্বচ্ছন্দ স্টাইল স্টেটমেন্ট হোক বা হাই প্রোফাইল ফ্যাশন উইক— গোটা বিশ্ব জুড়ে হাতের লেখার ফ্যাশন কিন্তু রমরমিয়ে চলছে এখন। শহরের ডিজাইনার রিমি নায়ক যেমন ২০১৩-য় ল্যাকমে ফ্যাশন উইকে তাঁর পোশাকের প্রথম কালেকশনেই ব্যবহার করেছিলেন বাংলা হস্তাক্ষরকে। কারণ ছিল একটাই। শহর কলকাতার মেয়ে হিসেবে তিনি চেয়েছিলেন তাঁর মাতৃভাযা যেন বিস্মৃতির আড়ালে চলে না যায়। সেলিব্রিটি হোন বা সাধারণ মানুষ, তাঁর কালেকশনের পোশাক যাঁরাই পরেছেন সেখানে একটা ব্যাপারই কমন। বাংলা অক্ষর।

Advertisement

ডিজাইনার মাসাবা গুপ্ত যেমন প্রায়ই তাঁর ডিজাইন করা পোশাকআশাকে ব্যবহার করেন টাইপোগ্র্যাফি। গৌরী খানও সত্য পলের জন্য তাঁর ডিজাইন করা শাড়ি, স্কার্ফ, স্টোলে খুব উজ্জ্বল রঙে ব্যবহার করেছেন মনকাড়া সব লাইন। মাসাবা যদিও প্রথম খ্যাতি পেয়েছিলেন তাঁর বানানো শাড়িতে নানান কোয়ার্কি প্রিন্টের জন্যই। আর সেই প্রিন্টে তিনি ব্যবহার করেছিলেন তামিল বর্ণমালা। গৌরী আবার তাঁর ডিজাইনকে স্টাইলাইজ করেছেন পুরনো ইংরাজি অক্ষর দিয়ে। ‘‘টাইপোগ্র্যাফি খুব ক্যাচি। ধরুন টি-শার্টের লেখাগুলো। ওগুলো সব সময়ই আমাদের চোখ টানে। অ্যাপিল করে। সব বয়সের লোকের কাছেই এই টি শার্টের লেখাগুলো খুব অ্যাপিলিং। আমার টাইপোগ্র্যাফি করা শাড়িগুলো সারা বিশ্বে সব ধরনের মানুষরা কেনেন। বিশেষ করে প্রবাসী ভারতীয়দের তো দারুণ পছন্দ ওগুলো,’’ কথায় কথায় জানান রিমি।

জেট প্রজন্মের ফ্যাশন সচেতন ওয়ার্ড্রোব খুঁজে দেখুন। টি শার্ট হোক বা রিসর্ট ওয়্যার, এমনকী ট্রাউজার, টপ, জ্যাকেট, স্কার্ফ বা শাড়ি— কোনও না কোনও পোশাকে ঠিক পেয়ে যাবেন টাইপোগ্র্যাফি প্রিন্ট। সবচেয়ে ভাল ব্যাপারটা হল যে কোনও ফেব্রিকে করা যায় টাইপোগ্র্যাফি। আর সব রকম রং খুব ভাল দেখায়। রিমি নিজে যেমন মোনোক্রোমটাই বেশি ব্যবহার করেছেন। আর পোশাকের বেসিক রং হিসেবে রেখেছেন নীল রঙ। তার সঙ্গে গোলাপি, সবুজ বা হলুদের হাইলাইটস করেছেন যাতে পোশাকটা খুব উজ্জ্বল, চনমনে দেখায়।

আধুনিক সিল্যুয়েটের সঙ্গে টাইপোগ্র্যাফিক প্রিন্ট মিশিয়ে তৈরি ডিজাইন সত্যিই নজরকাড়া। আর এই ডিজাইনের পোশাককে আরও উজ্জ্বল করে তোলার জন্য যে ভাবে সাজাতে হবে, মনে রাখা দরকার তা যেন কখনওই টাইপোগ্র্যাফিটাকে ছাপিয়ে না যায়। এখন যে ভাবে টাইপোগ্র্যাফি ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলো মূলত তৈরি হয় ডিজিটাল আর ব্লক প্রিন্টের কৌশল ব্যবহার করে। আর এটা যদি কাটওয়ার্ক বা অ্যাপ্লিকে করা যায় তা হলে তো কথাই নেই।

টাইপোগ্র্যাফি পোশাকে নিজের স্টাইল করুন নিজেই

• খুব মিনিম্যালিস্টিক থাকুন

• পরুন যে কোনও একটা টাইপোগ্র্যাফি পোশাক। একাধিক পরতে যাবেন না

• স্ক্রিপ্ট করা যে কোনও একটা আইটেম বেছে নিন

• একটা সাধারণ পোশাক পরলে অ্যাক্সেসরিজ হিসেবে নিন টাইপোগ্র্যাফি করা একটা ব্যাগ। বা টাইপোগ্র্যাফি করা জুতো

ডিজাইনাররা টাইপোগ্র্যাফি ব্যবহার করে নানা পোশাক তৈরি করেছেন। স্যাটিন টোগা হোক বা সাধারণ কোনও পোশাক, কাউল লাগানো শর্ট ড্রেস, ম্যাক্সি ড্রেস, কুর্তা, কাফতান, ব্লাউজ বা এমব্রয়ডারি করা জ্যাকেট— ক্যালিগ্রাফ বা টাইপোগ্র্যাফি ডিজাইন খেলা করে বেড়াতে পারে সব পোশাকেই। তবে খুব ঝরঝরে ফেব্রিক যেমন জর্জেট, ক্রেপ, স্যাটিন, র সিল্ক, বা হাতে বোনা তাঁতের কাপড়েই কিন্তু টাইপোগ্র্যাফি সবচেয়ে ভাল ফুটিয়ে তোলা যায়। আর এই কাপড়গুলোতে বেশি জাঁকজমক ডিজাইনিংয়ের প্রয়োজনটাও পড়ে না। আর এই পোশাকে সহজেই নিজেকে যৌন আবেদনময় করেও তোলা যায়। তবে মনে রাখতে হবে প্রিন্টটা যেন খুব বেশি চোখে না পড়ে। যত সূক্ষ্ম, ততই যেন তার সৌন্দর্য।

শুধু এদেশে নয়, আন্তর্জাতিক ফ্যাশন মানচিত্রেও হাতে লেখা অক্ষরের আবেদন সাঙ্ঘাতিক। জাপানি বা আরবি বা সংস্কৃত— ডিজাইনারদের পোশাকে সব সময়ই জায়গা করে নিয়েছে নানা ভাষার হস্তাক্ষর। এমনকী পুরোহিতদের ব্যবহারের উত্তরীয় নিয়েও এক্সপেরিমেন্ট চালিয়েছেন ডিজাইনাররা। সেটা আসলে টাইপোগ্র্যাফি ছাড়া কিছু নয়। ‘‘আমরা গত পাঁচ দশক ধরেই আমাদের ডিজাইনে টাইপোগ্র্যাফি ব্যবহার করছি। আমার স্বামী এবং পার্টনার দিলীপ রাজা নিজেও প্রাচীন পুঁথির অক্ষর আর প্যাটার্ন নিয়ে খুব ইন্টারেস্টেড। টেক্সট-এ কী লেখা আছে সেটা নিয়ে আমরা চিন্তিত নই। কিন্তু যে রকম সুন্দর রিদমিক প্যাটার্নে অক্ষরগুলো লেখা থাকে, সেটাই আমরা আমাদের ডিজাইনে ফুটিয়ে তুলতে চাই। আমাদের শাড়িতেও সেই ডিজাইনটাই পাবেন। ১৯৭০ থেকেই আমরা বানাচ্ছি এই ডিজাইনের শাড়িগুলো,’’ বলছিলেন নন্দিতা রাজা, শহরের এক অন্যতম জনপ্রিয় স্টোর ম্যানেজার।

সাধারণ বর্ণমালা থেকে লাইন থেকে প্যারাগ্রাফ— শহরের বিভিন্ন পোশাক বিপণির বিক্রেতারা কিন্তু একটা বিষয়ে একমত। স্ক্রিপ্টেড পোশাকের চাহিদা খুব বেশি। সব বয়সি ক্রেতাদের কাছেই। তাই যদি আর কোনও পোশাক না-ও হয়, অন্তত টাইপোগ্র্যাফি করা একটা টি শার্ট কিনে ফেলুন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন