দুর্গা সহায় হলেন

উত্সব বাঙালির অতি প্রিয় শব্দ। দুর্গোত্সব হলে তো কথাই নেই। অরিন্দম শীল বিচক্ষণ পরিচালক। সে়টা তিনি বিলক্ষণ জানেন। ‘দুর্গা সহায়’ ছবিতে তাই দুর্গাপুজোর সময়কে প্রয়োজনমতো ব্যবহার করেছেন। তবে সেটাই ছবির একমাত্র ট্রাম্প কার্ড না, গল্পটিও মন্দ নয়।

Advertisement

অরিজিৎ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৭ ০০:০০
Share:

উত্সব বাঙালির অতি প্রিয় শব্দ। দুর্গোত্সব হলে তো কথাই নেই। অরিন্দম শীল বিচক্ষণ পরিচালক। সে়টা তিনি বিলক্ষণ জানেন। ‘দুর্গা সহায়’ ছবিতে তাই দুর্গাপুজোর সময়কে প্রয়োজনমতো ব্যবহার করেছেন। তবে সেটাই ছবির একমাত্র ট্রাম্প কার্ড না, গল্পটিও মন্দ নয়।

Advertisement

ছবির পটভূমি মহালয়া থেকে দশমী উত্তর কলকাতার বসাক বাড়ির দুর্গাপুজো। বাড়ির কর্তা সোমশঙ্কর বসাকের (সুমন্ত মুখোপাধ্যায়) সদ্য হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। পারিবারিক গয়নার দোকান তাই এখন দেখাশোনা করে তার দুই ছেলে। দু’জনের স্বভাব একেবারে আলাদা। বড় ছেলে দিব্যেন্দু (কৌশিক সেন) রাগী, মাথাগরম। ছোট ছেলে শুভ (ইন্দ্রাশিস রায়) নরম, শান্তশিষ্ট। দু’জনেই বিবাহিত। দুই বউয়ের স্বভাবেও বিস্তর ফারাক। বাড়ির কনিষ্ঠতম সদস্য বড় তরফের পনেরো-ষোলো বছরের ছেলে ভৃগু (ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়)। ছোটজনের মেয়ে জন্মের পরই মারা যায়।

নার্সিংহোম থেকে সোমশঙ্কর ফেরার দিন বাড়িতে দুর্গাপ্রতিমা আসে। আর আসে, তার দেখাশোনা করতে আয়া ‘দুগ্গা’ (সোহিনী সরকার)। সুন্দরবন থেকে আসা দুর্গা গয়না ভর্তি বাড়িতে লোভ সামলাতে পারে না। গয়না নিয়ে চম্পট দিতে চায়। ধরে ফেলে ছোট বউ মানসী (তনুশ্রী চক্রবর্তী)। তবে বড় বউয়ের আপত্তি সত্ত্বেও দুর্গাকে চাকরিতে বহাল রাখে ছোট বউ।

Advertisement

পরের কয়েক দিনে ‘বাড়ির মেয়ে’ হয়ে উঠতে সময় নেয় না দুর্গা। প্রত্যাশিত ভাবে, গল্পের টুইস্ট দ্বিতীয়ার্ধে। দুর্গাকে আসলে আয়া হিসেবে পাঠানো হয়েছিল বসাকবাড়ির গয়নাগাঁটির খবর নেওয়ার জন্য। সে খবরের ভিত্তিতে লুট করা হবে দশমীর রাতে। ডাকাত দলের পান্ডা দুর্গার স্বামী মাধব (অনির্বাণ ভট্টাচার্য)। তার পর? থ্রিলারের ক্লাইম্যাক্স বড় পরদায় দেখুন। মোচড়টা খারাপ লাগবে না।

ছবির সবচেয়ে বড় সম্পদ অভিনয়। প্রত্যেকের অভিনয় আলাদা করে প্রশংসার দাবি রাখে। তবে একজনের নাম করতেই হবে। তিনি সোহিনী সরকার। যে ভাবে নিজেকে গ্রাম্য ‘দুগ্গা’য় রূপান্তরিত করেছেন, সেটা দেখার মতো। এতটা ডি-গ্ল্যাম লুক দিতে, যে- কোনও নায়িকাই দু’বার ভাববেন। সেই সাহসটা তিনি দেখিয়েছেন।

বড় ছেলে সোনার হার দিতে চাইলে, সেটা অগ্রাহ্য করে বলেন, ‘‘শুধু তো দেওয়ার জন্য দিচ্ছেন না। কিছু তো নেবেনও।’’ পুরুষতন্ত্রে সপাট থাপ্পড়। এবং এমন অনেক চড়-থাপ্পড় আছে ছবি জুড়ে। এ ছবি শুধু মহিলাকেন্দ্রিক নয়, মহিলাপ্রধানও। চিত্রনাট্যে বাঙালি ভ্যালুজও চমৎকার বুনে দিয়েছেন। ঠাট্টাও করেছেন আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে। ‘গ্রামোফোনের পিন কি তোদের মোবাইল নাকি যে, রাস্তার মোড়ে মোড়ে পাওয়া যাবে’র মতো কথা বেশ ভাল। দুর্গার প্লাস্টিকের জলের বোতলের লেবেল উঠে যাওয়া পরিচালকের ডিটেলের প্রতি নজরকে মনে করায়। গৈরিক সরকারের ক্যামেরাও চমৎকার।

তবুও ছবিকে লেটার মার্ক দেওয়া গেল না। নস্টালজিয়া ভাল। কিন্তু ‘অধিকন্তু ন দোষায়’ সিনেমার ক্ষেত্রে খাটে না। একটু লাগাম দিলেই ভাল হত। ছবিটা যখন ভালই এগোচ্ছিল, তখন ডাকাতির অধ্যায়টা কি আরও একটু বিশ্বাসযোগ্য করা যেত না? ভৃগু তার মাকে এক দৃশ্যে গ্যাদগেদে ইমোশন আনতে বারণ করে। কিন্তু চিত্রনাট্য সেটা শুনল কোথায়! শেষ দৃশ্যে তো ইমোশনেরই ছড়াছড়ি।

তবে সব মিলিয়ে ‘দুর্গা সহায়’ খারাপ লাগবে না। অন্তত ‘বাহুবলী টু’-র সঙ্গে একই দিনে রিলিজ করানোর যে সাহস প্রযোজক-পরিচালক দেখিয়েছেন, অন্তত তাকে কুর্নিশ জানিয়ে বাংলা ছবিটা দেখে আসতেই পারেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন