TMC 21 july Rally

‘নির্দিষ্ট সময়ে গিয়ে মঞ্চে যোগদান, এটাই আমার দায়িত্ব’, ভিড় নিয়ে কী বললেন শতাব্দী-জুন-সায়ন্তিকারা?

‘‘বৃষ্টিতেও তো আজকাল বীভৎস যানজট হয়। আর এটা তো এক দিনের ব্যাপার। তাই পুলিশ ঠিক ভাবেই নিয়ন্ত্রণ করবে বলে মনে হয়। আর এটা তো একটা আবেগের ব্যাপার।’’

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২৫ ০৮:১২
Share:

তারকাখচিত ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ। ছবি: সংগৃহীত।

আর কিছু ক্ষণের মধ্যেই ধর্মতলায় শুরু হয়ে যাবে তৃণমূলের ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ। সমাবেশমঞ্চে প্রধান আকর্ষণ দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে অন্যান্য শীর্ষ নেতা-নেত্রীর পাশাপাশি প্রতি বছরের মতো এ বারও মঞ্চে থাকার কথা রুপোলি পর্দা থেকে আসা জনপ্রতিনিধিদের একটা বড় অংশের। এই সমাবেশ নিয়ে তাঁদের কাছে কিছু প্রশ্ন রেখেছিল আনন্দবাজার ডট কম। সমাবেশে আসার আগের দিন, সেই সব প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে তাঁদের কেউ অকপট, কেউ আবার সাবধানি। আবার কেউ কেউ রাজনৈতিক কুশলতায় দিয়েছেন উত্তর।

Advertisement

সমাবেশে থাকছেন বলে জানিয়েছেন দুই সাংসদ শতাব্দী রায় ও জুন মালিয়া এবং দুই বিধায়ক সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ও লাভলি মৈত্র। ফোনে অধরা বিধায়ক রাজ চক্রবর্তী, সাংসদ রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিধায়ক সোহম চক্রবর্তী। ফলে তাঁদের মতামত পাওয়া যায়নি।

তারকারা এ ভাবেই প্রতি বছর মঞ্চ আলো করেন। ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন ছিল, রুপোলি জগতে জনপ্রিয়তা উপভোগ করেছেন। ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে দাঁড়িয়ে এই জনসমাবেশ দেখে ঠিক কী অনুভূতি হয়? সাংসদ শতাব্দী রায়ের কথায়, ‘‘লোকের ঢল দেখে গায়ে কাঁটা দেয়। শুধু বিনোদন দুনিয়া বা রাজনীতিবিদেরা নন, সাধারণ মানুষের কাছেও এই দিন আবেগের দিন। তাঁরা নিজে থেকে চলে আসেন সমাবেশে।’’ দলের আর এক সাংসদ জুন মালিয়া বললেন, ‘‘প্রত্যেক বছর দেখি অজস্র কালো কালো মাথা। মানুষের ঢল নামে। নির্দিষ্ট স্থান উপচে পড়ে ভিড় ছাপিয়ে যায় চৌরঙ্গী পর্যন্ত। রোদে পুড়ে, জলে ভিজে রাস্তায় বসে পড়েন মানুষ। শোনেন দিদি, অভিষেকের (বন্দ্যোপাধ্যায়) কথা। মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে যোগ দেন। মঞ্চ থেকে প্রতি বছর দেখি। বুঝি, সরকারের প্রতি কতটা অনুগত তাঁরা।’’ বিধায়ক সায়ন্তিকারও একই কথা,‘‘দলে দলে এই সমাবেশে মানুষ আসে একজনকেই দেখতে। তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলা থেকে এমন অনেক মানুষ আসেন, যাঁরা হয়তো তৃণমূলের পতাকা নিয়ে মিছিলে হাঁটেননি। কিন্তু তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভালবাসেন, তাই তাঁকে দেখতেই তাঁরা আসেন।’’

Advertisement

২১ জুলাই সমাবেশ আদতে এখন তৃণমূলের রাজনৈতিক ‘ক্ষমতা প্রদর্শনে’র বার্ষিক উদ্‌যাপন, বিভিন্ন মহলে এমনই কথাও শোনা যায়। এ প্রসঙ্গে সাংসদ শতাব্দী রায়ের সোজাসাপটা জবাব, ‘‘খারাপ-ভাল যা-ই বলুন, তৃণমূল ক্ষমতায় আছে। ২০২৬-এও থাকবে। তাই আলাদা করে ক্ষমতা প্রদর্শনের জায়গার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। এই মঞ্চ সংগঠনকে আরও শক্ত করার জায়গা।’’ সায়ন্তিকার কথায়, ‘‘এটা ক্ষমতা প্রদর্শনের কোনও বিষয় নয়। এটা তো একটা শহিদ দিবস পালন করা।’’ সেই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘‘লোকে কী বলছে, তাতে কিছু যায়-আসে না।’’ আর এক বিধায়ক লাভলি মৈত্রের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এখানে শক্তি প্রদর্শনের কোনও প্রশ্নই নেই। যাঁর শহিদ হয়েছিলেন, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাতেই এই সভার আয়োজন।’’

বৃষ্টিতে ভিজে ‘দিদি’র পাশে টলিউড। ফাইল চিত্র।

প্রতি বারই জনপ্রতিনিধিদের কিছু না কিছু দায়িত্ব থাকে এই সমাবেশ ঘিরে। রুপোলি দুনিয়া থেকে আসা জনপ্রতিনিধিদের উপরেও নিশ্চয় সেই দায়িত্ব পড়ে। ‘‘অবশ্যই’’, বললেন বিধায়ক সায়ন্তিকা। তিনি বলেন, ‘‘আমার দায়িত্ব বিধায়ক হিসাবে এলাকার (বরাহনগর) কর্মীদের সভায় নিয়ে আসা।’’ তিনি আরও জানান, এ বছর সমাবেশের প্রস্তুতি হিসেবে তিনি ১০ দিনে ২৩-২৪টা পথসভা করেছেন বরাহনগর এলাকায়। বৃষ্টিতে ভিজেও সেই সব সভায় নেতা-কর্মীরা ছিলেন বলে তাঁর দাবি। জুন জানালেন, তৃণমূলের কর্মী হিসাবে তাঁর এ দিনের দায়িত্ব নির্দিষ্ট সময়ে মঞ্চে উপস্থিত থেকে দিদিকে সমর্থন জানানো। তবে নির্দিষ্ট কোনও দায়িত্ব নেই শতাব্দী রায়ের। তিনি বলেন, ‘‘কোনও দায়িত্বে নেই। নির্দিষ্ট সময়ে গিয়ে মঞ্চে যোগদান, এটাই আমার দায়িত্ব।’’

সোমবার, সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনেই এই সভায় যানজটের জেরে তো অবরুদ্ধ হবে মহানগরী। তাতে তো সাধারণ মানুষ, নিত্যযাত্রীদের দুর্ভোগ। এ শহরে ব্রিগেড থেকে শুরু করে যে কোনও সমাবেশ বা মিছিল ঘিরে একই অভিযোগ বার বার ওঠে। সেই প্রসঙ্গ তুলতেই সায়ন্তিকার সাফাই, ‘‘বৃষ্টিতেও তো আজকাল বীভৎস যানজট হয়। আর এটা তো এক দিনের ব্যাপার। তাই পুলিশ ঠিক ভাবেই নিয়ন্ত্রণ করবে বলে মনে হয়। আর এটা তো একটা আবেগের ব্যাপার। এই আবেগকে কী করে নিয়ন্ত্রণ করবেন?’’ জুনের যুক্তি, ‘‘একটা সময়ের পর নির্দিষ্ট সময়ের জন্য শহর স্তব্ধ হয়ে গেলেও শহরবাসী মেনে নেন। এ বছর সপ্তাহের প্রথম দিন পড়েছে। ২১ জুলাই তারিখটা তো অন্য দিনে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব! জানি, শহরবাসী এই একটা দিন সব কিছুর সঙ্গে মানিয়ে নেবেন।’’ বিধায়ক লাভলি বললেন, ‘‘এই সভার জন্য সোমবার, রবিবার— কোনওটাই ম্যাটার করে না। আর যে সমস্যার কথা বলছেন, সেই সমস্যার সমাধানের পথ রেখেই দিনটা উদ্‌যাপন করি প্রতিবার। কলকাতা পুলিশ, প্রশাসন সবাই মিলে ভিড় সামলাবেন।’’

প্রতি বছর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে বিনোদন দুনিয়া এ ভাবেই থাকে। ছবি: সংগৃহীত।

ব্রিগেডের জনসভা হোক বা ধর্মতলায় ২১ জুলাই সমাবেশ, কলকাতায় রাজনৈতিক সমাবেশ মানেই যেন জেলা থেকে ট্রেনে-বাসে কলকাতা ঘুরতে আসা। এমন চর্চাও চলে সমাজের নানা স্তরে। এ কথা তুলতেই দীর্ঘ দিনের সাংসদ শতাব্দী বললেন, ‘‘যাঁরা কলকাতায় প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসেন, তাঁরা সভার শেষে শহর দেখবেন, এটাই স্বাভাবিক। কারণ, কলকাতার দ্রষ্টব্য স্থান তাঁদের কাছে অদেখা। তাঁর মানে এটা নয়, তাঁরা কলকাতা দেখবেন বলেই আসছেন। তাঁরা আসছেন সমাবেশে যোগ দেবেন বলে।’’ জুনের গলাতেও একই সুর, ‘‘আমরা জন্ম থেকে এই শহরে থাকি। তাই একটা সময়ের পর কলকাতার দ্রষ্টব্য স্থানগুলোর প্রতি আমাদের কৌতূহল কম। কিন্তু যাঁরা কোনও দিন দেখেননি, তাঁদের কাছে কলকাতা মায়ানগরী। আমাদের অনেকের কাছে বলিউড যেমন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement