• শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। বয়স ৩০। চাকরিসূত্রে বেঙ্গালুরুবাসী। বন্ধুদের ভাষায় ‘ফিটনেস ফ্রিক’। তবে শুধু নিজের জন্য নয়, কলকাতায় থাকা বাবার জন্যও কিনেছিলেন হার্টরেট মনিটর। এক রাতে এসএমএস পান হার্টরেট মারাত্মক বেড়ে গেছে বাবার। সঙ্গে সঙ্গে কলকাতার বন্ধুদের ফোন। আইসিইউ-তে যেতে হলেও সত্তরোর্ধ বাবাকে বাঁচাতে পেরেছিলেন শুভঙ্কর। হার্টরেট মনিটর তাঁর ভাষায়, ‘‘জীবনদায়ী।’’
• অঙ্কিতা মহাপাত্র। বয়স ২৮। সকালে সেক্টর ফাইভে অফিস- দুপুরে পিৎজা-রাতে ল্যাপটপে ‘গেম অব থ্রোনস’য়ের রুটিনে আটকে পড়া তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী। অফিস থেকে বাধ্যতামূলকভাবে নিতে হয়েছিল ফিটনেস ট্র্যাকার। স্বাস্থ্যসচেতন হতে সময় লাগেনি। জিমে না গিয়ে শুধু নিজের উদ্যোগেই ঝরিয়েছেন কুড়ি কেজি ওজন। নিজের কথায়, ‘‘৮১ কেজির কাউচ পটেটো থেকে ৬১ কেজির ছিপছিপে!’’
ফিটনেস ট্র্যাকার বা হার্টরেট মনিটর বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায়...
হাতে বাঁধা নজরদারি
ফিটনেস বা হেল্থ ট্র্যাকার মূলত তিন ধরনের। কবজিতে পরার ব্যান্ডের মতো ফিটবিট ফ্লেক্স বা নাইকি ফুয়েলব্যান্ড তো আছেই, সঙ্গে আছে হাতঘড়ির মতো অ্যাপল ওয়াচ বা গ্যালাক্সি গিয়ার আর বুকে লাগিয়ে রাখার হার্টরেট মনিটর। দাম শুরু ন’ হাজার টাকা থেকে। সারাদিন কতটা হাঁটলেন, কতটা দৌড়লেন, কতটা সিঁড়ি চড়লেন, সারাদিনে হার্টরেট বা ব্লাডপ্রেশার কখন কেমন থাকল সব জেনে নিতে পারবেন এর সাহায্যে।
হার্টরেট বা রক্তচাপ মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেলে কিংবা ব্লাড সুগারের সমস্যা থাকলে সাবধান করিয়ে দেবে আওয়াজ দিয়ে। ‘‘আমার মতে খুব কাজের এই ফিটনেস ট্র্যাকার। সারাদিনের অ্যাক্টিভিটি জেনে নিতে পারেন এটা দিয়ে। ফলে নিজেই নিজেকে মোটিভেট করার একটা সুযোগ পাওয়া যায়। আর একটা কাজের জিনিস হল হেল্থ অ্যাপস। দেখেছি বোম্বে কী বেঙ্গালুরুতে লোকে জিমে না গিয়ে অ্যাপস দিয়েই এক্সারসাইজ করছেন,’’ বলেন ফিটনেস বিশেষজ্ঞ চিন্ময় রায়।
স্মার্টফোনে ডাক্তার
হেল্থ অ্যাপসের মাধ্যমে এক্সারসাইজ থেকে শুরু করে অনলাইনে চিকিৎসকদের মতামত — সব পেয়ে যাবেন। ইয়োর.এমডি বা ওয়েবএমডি-র মতো অ্যাপস যেমন কোন ওষুধ খাবেন, তার পরামর্শ পর্যন্ত দিয়ে দেবে। গুগল আর নোভার্টিস যৌথ উদ্যোগে তৈরি করছে এমন এক কনট্যাক্ট লেন্স যা বলে দেবে ব্লাড সুগার লেভেলও। তাই বলে অ্যাপসকে ধ্রুবসত্য মনে করার কোনও কারণ নেই। মনিটরের তথ্যও যে একশো শতাংশ ক্ষেত্রে সঠিক, সেটাও বলা যাবে না।
তবে টেকনোলজির এই অগ্রগতিতে আশাবাদী হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা কুনাল সরকার। বলছিলেন, ‘‘ব্লাড প্রেশার আর হার্টরেট মনিটরিং কয়েক বছরের মধ্যে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এখনই যা প্রযুক্তি আছে তাতে ইসিজির বিশ্লেষণ বা ব্লাড প্রেশারের কমাবাড়া মাপা তো স্মার্টফোনের মাধ্যমেই হয়ে যায়। হ্যাঁ, এখনও হয়তো সবার কাছে পৌঁছতে পারেনি। তবে এটাই ভবিষ্যৎ। আমার মতে চিকিৎসা ব্যবস্থায় বিপ্লব এনে দেবে প্রযুক্তি। শুধু লোকের মধ্যে সচেতনতা একটু বাড়াতে হবে।’’
জিমে না গিয়েও
সচেতনতা যে বাড়ছে সে ইঙ্গিত কিন্তু দিচ্ছে পরিসংখ্যান। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির এক সার্ভে অনুযায়ী ২০১৪তে যেখানে ১৬% লোক ব্যবহার করত এমন অ্যাপস, ২০১৫তে সেই সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ৩৩%। ফিটনেস ট্র্যাকার ব্যবহারীর সংখ্যার ক্ষেত্রেও ছবিটা একই রকম। ২০১৪র ৯% বেড়ে হয়েছে ২১%। নিশ্চিতভাবে ভারতে ব্যবহারকারীর সংখ্যা একই রকম না হলেও লোকজনের আগ্রহ যে বাড়ছে, সেটা অ্যামাজন বা ফ্লিপকার্টে ফিটনেস ট্র্যাকারের বিজ্ঞাপন হোমপেজে থাকা দেখে আন্দাজ করা যায়।
অন্য রকম আশার কথা শোনাচ্ছিলেন মনোস্তত্ত্ববিদ ডা জয় রঞ্জন রামও। বলছিলেন, ‘‘স্বাভাবিকভাবে ফিটনেস ট্র্যাকার যাঁরা ব্যবহার করেন তাঁরা এমনিতেই স্বাস্থ্যসচেতন। তবে আমার মনে হয় স্বাস্থ্যসচেতন নয় এমন ব্যক্তিও এই রকম ডিভাইস থেকে উপকার পেতে পারেন। পোশাকি ভাষায় বলতে গেলে একটা কনস্ট্যান্ট রিমাইন্ডার হিসেবে কাজ করে এগুলো। যে কারণে শরীরচর্চার জন্য জিমে যোগ দিতে বলে। ফিটনেস ট্র্যাকারও তেমন পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্টের মতো বারেবারে মনে করাবে আপনার ওয়ার্কআউট করা উচিত। এটায় কাজ দিতে পারে।’’
আর দেরি করছেন কেন? নিজের জন্য তো বটেই, পরিবারের সকলের জন্যই কিনে নিন ফিটনেস ট্র্যাকার।