চল রাস্তায় সাজি আড্ডায়

সেখানে মেয়েদের আলোচনায় লভ-সেক্স-ধোঁকা। সবই। লিখছেন পরমা দাশগুপ্তসেকালের অন্দরমহল থেকে সোজা এ কালের রাস্তার মোড়। সময় পাল্টাচ্ছিল একটু একটু করে। স্কুল-কলেজ-অফিস, ঘরে-বাইরে সর্বত্রই তো সেয়ানে-সেয়ানে টক্কর। আড্ডাই বা পিছিয়ে পড়বে কেন? পাশের বেঞ্চে বসা ছেলেটা কিংবা সামনের কিউবিকলের টল-ডার্ক-হ্যান্ডসাম কলিগ, সবাই যদি রণে-বনে-চায়ের দোকানে যেখানে খুশি, যখন খুশি দেদার আড্ডা মারতে পারে, মেয়েরাই বা কেন থাকবেন বাড়ির হেঁশেল, ড্রয়িংরুম কিংবা রেস্তোরাঁ-কফিশপের ঘেরাটোপে?

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৫ ০১:০২
Share:

ছবি: কৌশিক সরকার

সেকালের অন্দরমহল থেকে সোজা এ কালের রাস্তার মোড়। সময় পাল্টাচ্ছিল একটু একটু করে। স্কুল-কলেজ-অফিস, ঘরে-বাইরে সর্বত্রই তো সেয়ানে-সেয়ানে টক্কর।

Advertisement

আড্ডাই বা পিছিয়ে পড়বে কেন? পাশের বেঞ্চে বসা ছেলেটা কিংবা সামনের কিউবিকলের টল-ডার্ক-হ্যান্ডসাম কলিগ, সবাই যদি রণে-বনে-চায়ের দোকানে যেখানে খুশি, যখন খুশি দেদার আড্ডা মারতে পারে, মেয়েরাই বা কেন থাকবেন বাড়ির হেঁশেল, ড্রয়িংরুম কিংবা রেস্তোরাঁ-কফিশপের ঘেরাটোপে? কেনই বা পর্দার আড়ালে লুকোতে হবে হাসিঠাট্টার ফোয়ারা? পাল্টা হাওয়ার তোড়ে স্কুল-কলেজ-অফিস পেরিয়ে তাই এ বার গলির মোড়ের পুরুষালি আড্ডা কিংবা রাতভর ঠেকবাজিতেও ভাগ বসিয়ে ফেলেছেন এ কালের কন্যেরা।

Advertisement

হম কিসিসে কম নহি

‘‘ছেলেরা তো দিব্যি যেখানে খুশি দাঁড়িয়ে পড়ে। আড্ডা মারার বেলা ভেদাভেদ করা কি উচিত?’’ তর্ক জোড়েন আঠাশের তৃণা। তৃণাদের পাড়ার বন্ধুর গ্রুপটায় ছেলে-মেয়ে সবই আছে। কেউ কেউ কলেজে পড়ে, বাকিরা অফিসে। কেউ একা, কেউ বা জোড়ে। পাড়ার এক বাড়ির বড়সড় একটা রকে রাত- আড্ডা জমে ছুটির সন্ধেগুলোয়। গল্পের তোড় থামতে থামতে সে-ই রাত।

বিষয় গার্ল-টক

গসিপ-পিএনপিসি আর শাড়ি-গয়না-রান্নাবাটির গল্প— মেয়েলি আড্ডার সেটাই তো চিরাচরিত চরিত্র। আর ছেলেদের আড্ডা মানেই আলপিন থেকে এরোপ্লেন। মানে, বন্ধুত্বের রোজনামচায় কিংবা গল্প-উপন্যাস-সিনেমায় সেটাই তো বরাবর দেখে এসেছে বাঙালি।

পরবর্তী প্রজন্মে লাভ-সেক্স-ধোঁকা সবই হাজির গার্ল-টকে। কিন্তু আড্ডাই যদি রং পাল্টায়, বিযয়গুলোও কি বদলে ফেলতে হয়? অবশ্যই। জেন্ডার বায়াস-হীন আড্ডা তাই খবরের কাগজের হেডলাইন থেকে সিনেমা-থিয়েটার-খেলা-পলিটিক্স পেরিয়ে পৌঁছে যায় ঘরকন্না কিংবা শপিং মলের ডিসকাউন্টের গল্পেও। হাসিঠাট্টার পরতে পরতে অনায়াসে ঢুকে পড়ে অস্বস্তিহীন গালাগালি, এমনকী আমিষ জোকসও। ‘‘তবে হ্যাঁ, ছেলেরা গসিপ-পিএনপিসি করে না, এটা ভাবাটা মোটেই ঠিক নয়!’’ বলছেন সফ্‌টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার শতরূপা।

ইভ-ও যখন টিজার

ছেলেমেয়ে মিলিয়ে জনা দশেক সহপাঠীর একটা দল আড্ডা মারত যাদবপুর ইউনিভার্সিটির ঠিক উল্টো দিকে বাস-ডিপোর রেলিংটায় উঠে। ভরসন্ধের জমজমাট মোড়ে দলের তিন কন্যের দিকে আশপাশ থেকে উড়ে আসত টুকরো-টাকরা মন্তব্য।

‘‘প্রথম প্রথম আমরাই ভেবেছিলাম ওখানে আর বসব না। কিন্তু কোথায় কী! মেয়েগুলোই হইহই করে আপত্তি করল। আর তার পর? বাইরের কোনও ছেলে কিছু বললে ওরাও পাল্টা বলত। মানে এক্কেবারে অ্যাডাম টিজিং!
বেশ পপুলারও হয়ে গেল ব্যাপারটা,’’ হেসে বলেন এখনকার ব্যস্ত কর্পোরেট কৌশিক।

তবু ভাবনার

ব্যাঙ্ক অফিসার তীর্থ, লেকচারার সৌমি, চোখের ডাক্তার অনির্বাণ—ছুটির দিনগুলোয় গড়িয়াহাটের কাছেই বসে ওঁদের জমজমাট আড্ডা। সেই স্কুলের দিনগুলোর অভ্যাস মতো। ‘‘সবাই বড় হয়েছে তো, চিন্তাভাবনাগুলোও এখন ম্যাচিওর্ড। তাই আগের মতো যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে আড্ডা না দিয়ে এমন কোথাও যাই, যেখানে মেয়েদের সমস্যায় পড়ার কোনও সুযোগ না থাকে। দেখাসাক্ষাতের কথা থাকলে আগে খানিক ভেবে নিতে হয় কোথায় যাব। তবে, ওইটুকুই। বাকিটা এখনও সেই এক।’’ বলছেন তীর্থ।

সারা রাত ধরে হবে আড্ডা

শুধু কি মেয়েদের আড্ডা? তাদের জায়গা দিয়ে ছেলেদের আড্ডাও তো বদলেছে তাল মিলিয়ে। খানার সঙ্গে যেখানে অফুরান পিনাও, সেই ঠেকগুলোতেও এখন মেয়েদের জমজমাট উপস্থিতি। কোনও এক বন্ধুর বাড়িতে রাতজাগা পার্টি কিংবা উইকএন্ডের রিজর্ট-ছুটি— সবেতেই কাপল আড্ডাতেই বেশ স্বচ্ছন্দ এখনকার দম্পতি কিংবা প্রেমিক-প্রেমিকারা।

কলেজ-ইউনিভার্সিটি মিলিয়ে বছর চারেক প্রেম সেরে দু’বছর হল বিবাহিত সৌমিক আর প্রিয়া।
কমন পড়েছে বন্ধুরাও। সবার বর এবং বৌ-দের জুড়ে ফেলে এখন বড়সড় এক গ্রুপ। প্রিয়ার কথায়, ‘‘উইকএন্ডগুলো কোথা দিয়ে উড়ে যায় বুঝতেই পারি না মাঝেমধ্যে। আজ এর বাড়িতে আড্ডা, কাল ওর বাড়িতে ঠেক, লং উইকএন্ড পেলে দার্জিলিং-কালিম্পং পাহাড় চষে ফেলা! বেশ জমে যায়!’’ আর হার্ড ড্রিঙ্ক? ‘‘মেয়েগুলোই পারলে আমাদের টেক্কা দেয় যখন-তখন!’’ ফাঁক বুঝে টিপ্পনী জোড়েন সৌমিকও।

তার পর? কথা ওড়ে। প্রাণখোলা হাসিও। গার্ল-টকে মিলেমিশে যায় পুরুষালি হইচই।

আর বদলে যায় মেয়েলি আড্ডার হালচাল। রোজ একটু করে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন