Hariharan

প্রেমের গানে শহরে হরিহরণ, কী দেখে আতঙ্কে স্ত্রী

হরিজি উদাত্ত গলায় গেয়ে উঠলেন ‘ন্যায়না…’। হালকা হলুদ রঙের সিফন শাড়ির আঁচল উড়িয়ে তাঁদের পাশ দিয়ে হেঁটে চলে গেলেন বিবৃতি চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২১ ২০:৩৩
Share:

হরিহরণ, বিক্রম ঘোষ ও অরিন্দম শীলের ‘ভ্যালেনটাইন্স ডে’র উপহারের প্রস্তুতি। নিজস্ব চিত্র

শীতের দুপুর। দূর থেমে আছে চক্ররেল। রেললাইন ধরে হেঁটে যাচ্ছেন হরিহরণ আর বিক্রম ঘোষ। হরিজি উদাত্ত গলায় গেয়ে উঠলেন ‘ন্যায়না…’। হালকা হলুদ রঙের সিফন শাড়ির আঁচল উড়িয়ে তাঁদের পাশ দিয়ে হেঁটে চলে গেলেন বিবৃতি চট্টোপাধ্যায়। মিউজিক ভিডিয়োর শ্যুটিংয়ে তৈরি হল রং, ম্যাজিক আর কল্পনা মেশানো সিনেম্যাটিক ফ্রেম। সুরে আর তালে কলকাতা তখন অন্য এক স্বপ্নের শহরে।
হালে মিউডিক ভিডিয়োর শ্যুটিংয়ে কলকাতায় এসেছিলেন হরিহরণ। বিক্রম ঘোষের সুরে হরিহরণের গাওয়া গানের মিউডিক ভিডিয়োটির শ্যুটিং হল অরিন্দম শীলের পরিচালনায়। কী ভাবে সূচনা হল এই অ্যালবামের? শ্যুটিংয়ের ফাঁকে ৩ জন বসেছিলেন একসঙ্গে। সেখানেই বিক্রম জানালেন, ‘‘অতিমারির শুরুতেই এ রকম একটা অ্যালবামের কথা ভেবেছিলাম। হরিজিও খুব উৎসাহী ছিলেন। ফোনে রেকর্ড করে গান পাঠান আমায়। পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হওয়ার পর আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, মিউজিক ভিডিয়োটা শ্যুট করার।’’
কেন বিক্রমের এই অ্যালবাম? প্রশ্ন শুনে হরিহরণ বললেন, ‘‘বহু দিন বাদে এমন একটা অ্যালবাম, যাতে মেলোডি আছে, যে গানগুলো খুব সহজে গুনগুন করে গাওয়া যায়। আর আছে প্রেম।’’ এটাই তাঁকে এককথায় রাজি করিয়ে দিয়েছে ৬টা গান গাওয়ার জন্য। তা ছাড়া আছে কলকাতার প্রতি প্রেম। তাই তিনি ছুটে এসেছিলেন শ্যুটিং করতে। ‘‘বাঙালির পোশাক, বাঙালির খাবার, পুরো বাঙালিয়ানাটাই আমার পছন্দের। দুপুরে কষা মাংস খেতেই হবে। সঙ্গে সর্ষেবাটা দিয়ে মাছ। কে বলে পেট পুরে এ সব খেলে গান বেরোয় না। এ সবই খেলেই তো গান ভাল হয়,’’ বলছেন হরিহরণ। কেন হরিহরণকে দিয়ে গাওয়াতে চাইলেন এই গানগুলো? ‘‘নাচের কথা ভেবে গান নয়। যখন বিটসের এত রমরমা, তার মধ্যে এই গানগুলো বানানো হয়েছে মেলোডির কথা মাথায় রেখে। হালকা ছন্দ আছে তাতে। যা অভিনব এক ঢেউ তুলবে শ্রোতার মনে। হরিজি ছাড়া আর কে আছে এমন যার গলা শুনে আমাদের প্রেম হওয়া। সেই গলা আজও অম্লান,” বলছেন বিক্রম।

Advertisement

হরিহরণ ও বিক্রম ঘোষ। নিজস্ব চিত্র

যিনি ক্যামেরার পিছন থেকে গোটাটা দেখছেন? কী বলছেন সেই অরিন্দম শীল? ‘‘আমার কাছে প্রেমের বোধ আর হরিজির গলা একেবারে মিশে গিয়েছে। যখন শুনলাম এমনটা একটা মিউডিক ভিডিয়োর কাজ করতে হবে, ছোটোবেলার স্মৃতি ফিরে এল। পুরো ‘ফ্যান বয় মোমেন্ট’আমার কাছে,’’ বলছেন তিনি।

শ্যুটিংয়ের প্রয়োজনে প্রিন্সেপ ঘাটের বিভিন্ন জায়গায় ক্যামেরার সামনে হেঁটে বেড়ালেন হরিহরণ। পরনে ধুতি আর কাজ-করা কালচে রঙের শেরওয়ানি। কিন্তু মুখে মাস্ক কোথায়! এই ছবি তুলে স্ত্রীকে পাঠিয়েছিলেন। ছবি দেখে তিনিও আতঙ্কিত! ‘‘আমার স্ত্রী হতবাক জানতে চাইলেন, মাস্ক পরিনি কেন? আমি বললাম, এটা তো শ্যুটিংয়ের ছবি। মাস্ক পরব কী করে!’’ ছেলেমানুষি হাসি হরিহরণের গলায়। যাঁর জন্য ওই দিন থেমে গিয়েছিল প্রিন্সেপ ঘাটের ‘লাভারস পয়েন্ট’-এ প্রেম। প্রেমের গায়ক ওখানে শ্যুটিং করছিলেন, তাই প্রিন্সেপ ঘাট বন্ধ প্রেমিক-প্রেমিকাদের জন্য।
কলকাতাকে কী ভাবে তুলে ধরলেন সঙ্গীতে? বিক্রম বলছেন, ‘‘কলকাতা নিজেই এই গানগুলোয় একটা চরিত্র হয়ে উঠেছে। এ ভাবে সঙ্গীতের আঙ্গিকে কলকাতাকে আগে দেখেননি কেউ। একটা ভিডিয়োয় প্রিয়াঙ্কা সরকার আছেন। তিনি নিজেই কলকাতার রূপক। ভিডিয়োয় আমি আর হরিজি গানের সূত্রে হেঁটে বেড়াই শহরের পথে পথে। প্রিয়াঙ্কা-রূপী কলকাতা সেই ফ্রেমে বারবার ঢুকে পড়ে, আমাদের দেখে। কিন্তু আমরা তাকে দেখতে পাই না।’’
একা প্রিয়াঙ্কা সরকার নন, অন্য গানের ভিডিয়োয় অভিনয় করেছেন সৌরসেনী মিত্র আর বিবৃতি চট্টোপাধ্যায়। ‘‘বিবৃতিক নেওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ ছিল ওর চোখ। বড় বড় টানা চোখ। ‘ন্যায়না’ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রথমেই আমার আর বিক্রমের মনে হয়েছিল বিবৃতির কথা,’’ বলেছেন অরিন্দম।
কথা বলা শেষ। আবার ফিরতে হবে শ্যুটিং। অরিন্দম আবার ক্যামেরা পাততে শুরু করলেন রেললাইনে। কী নিয়ে ফিরছেন কলকাতা থেকে? স্ত্রীর জন্য শাড়ি? ক্যামেরার দিকে পা বাড়াতে বাড়াতে হরিজি বললেন, ‘‘শাড়ি নয়, অন্য এক খাঁটি বাঙালি জিনিস নিয়ে যাব স্ত্রীর জন্য। খাঁটি নলেন গুড়ের সন্দেশ।’’ তারপর মনের আনন্দে এগিয়ে গেলেন ‘ন্যায়না’-র সুর গুনগুন করতে করতে।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন