বক্স অফিস না চ্যানেলের স্বত্ব, লাভ কোন দিকে?

এখন বাংলা ছবি লাভ করছে কী ভাবে? শুধু বক্স অফিসের কেরামতিতে নয়। লাভের অঙ্কে প্রয়োজন টেলিভিশন স্বত্বেরওদেব, জিৎ, অঙ্কুশের ছবির টিআরপি আবীর চট্টোপাধ্যায়, যিশু সেনগুপ্তর ছবির চেয়ে বেশি। সেই বিচারেই স্যাটেলাইটের টাকা নির্ধারিত হয়

Advertisement

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ

শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৯ ০০:০১
Share:

প্রকৃতির নিয়মে যেমন ঋতু আসে যায়, তেমনই সিনেমাও যায় আসে। ব্যবসা হোক বা না হোক, পরপর ছবি রিলিজ় করতেই থাকে। কিছু ছবি পোস্টারের আঠা শুকোনোর আগেই হল থেকে উঠে যায়। নতুন বা প্রতিষ্ঠিত অনেক প্রযোজকই টেলিভিশনের স্বত্বর ভরসায় ছবি তৈরি করেন। সে ক্ষেত্রে চ্যানেলও পাল্টা শর্ত দিয়ে থাকে। অর্থাৎ ছবি তৈরির আগেই প্রযোজক-চ্যানেলের চুক্তি সম্পন্ন। সে ক্ষেত্রে হলে ছবি চলছে কি না, সে প্রসঙ্গ অনেকটাই লঘু হয়ে যায়। স্যাটেলাইট স্বত্ব না কি বক্স অফিস কালেকশন, কীসের ভরসায় দাঁড়িয়ে বাংলা ছবির ভবিষ্যৎ? এই প্রশ্নটাই এখন বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Advertisement

বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে বছরে নব্বই থেকে একশোটির মতো ছবি তৈরি হয়। কিন্তু তিরিশ-চল্লিশটির বেশি ছবি বিক্রি হয় না চ্যানেলে। আর এ ক্ষেত্রে দু’টি প্রধান চ্যানেলই মূলত ক্রেতা। তা হলে বাকি ছবিগুলো যায় কোথায়? কিছু ইন্ডিপেন্ডেন্ট ছবি অনলাইন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে বিক্রি হয়। কিন্তু এই প্ল্যাটফর্ম টলিউডে এখনও সে ভাবে প্রভাব বিস্তার করেনি। সুতরাং বাকি ছবি বাক্সবন্দিই!

Advertisement

বক্স অফিসে কতটা ভরসা?

পরিসংখ্যান বলছে, গত এক বছরে হাতে গোনা কয়েকটি বাংলা ছবিই বক্স অফিস থেকে লাভ উঠিয়েছে। বাকিরা সিনেমা হল, স্যাটেলাইট, অনলাইন সব রকম মিলিয়ে প্রফিটের অঙ্ক ছুঁয়েছে। সেই সংখ্যাও খুব কম। এ বছর সিনেমা হল থেকে চূড়ান্ত প্রফিট করেছে ‘মুখার্জীদার বউ’। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের কাছে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল, ছবি তৈরির সময়ে বক্স অফিসের কথা কতটা মাথায় রাখেন? ‘‘কী ধরনের ছবি, তার উপরে নির্ভর করছে। কাকাবাবুর মতো বড় ক্যানভাসের ছবিতে বক্স অফিসই ভরসা। কম বাজেটের ছবি সহজেই টাকা তুলতে পারে। তবে সব পরিচালকই চান, তাঁর ছবি হলে গিয়ে দর্শক দেখুন।’’ রাজ চক্রবর্তী আবার বলছেন, ‘‘ভাল কনটেন্ট দিলে দর্শক হলে গিয়ে ছবি দেখবেনই।’’

কিন্তু এমন অনেক ছবিই আছে, যেগুলো সপ্তাহ কয়েকের জন্যই হলে চলে। তার পরেই চ্যানেলে টেলিকাস্ট করে দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে ‘মন জানে না’, ‘কে তুমি নন্দিনী’, ‘জামাই বদল’-এর কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। বাণিজ্যিক ছবি মূলত টেলিভিশন রাইটসের ভরসাতেই হচ্ছে। ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের পক্ষ থেকে মহেন্দ্র সোনি যেমন বলছেন, ‘‘সব ছবি ব্যবসার মানসিকতা থেকে বানাই না আমরা। ‘চোখের বালি’র মতো ছবি লং টার্ম ইনভেস্টমেন্ট ছিল। কোনও সংস্থা যদি ঠিক করে তারা পাঁচটা বাংলা ছবি কিনবে, তা হলে সেই তালিকায় এখনও ‘চোখের বালি’ আসবে। সব ধরনের দর্শকের কথা মাথায় রেখেই ছবি বানানো হয়।’’

এ বার দর্শক কোন ছবি দেখবেন আর কোনটা বাতিল করবেন, তার কোনও নির্দিষ্ট জবাব নেই। মহেন্দ্র সোনির কথায়, ‘‘দর্শকের মানসিকতা বোঝা ভার। মনে করা হতো, ভাল পরিকাঠামো নেই বলে মানুষ হলে যাচ্ছেন না। আমরা কৃষ্ণনগরে ভাল হল তৈরি করে দিলাম। কিন্তু বাণিজ্যিক ছবি সেখানেও চলছে না। অথচ ‘ভিঞ্চি দা’ বা ‘জ্যেষ্ঠপুত্র’ দেখতে যাচ্ছেন।’’ তাঁর কথাতেই স্পষ্ট, দর্শক আরবান ছবি হলে গিয়ে দেখলেও বাণিজ্যিক ছবি টেলিভিশনেই দেখছেন।

টেলিভিশনের স্বত্বই সত্য?

যে ছবিগুলো দেখতে দর্শক হলে যান না, সেগুলো তাঁরা ছোট পর্দায় দেখেন। দেব, জিৎ, অঙ্কুশ, সোহম বা যশের ছবির টিআরপি আবীর চট্টোপাধ্যায়, যিশু সেনগুপ্তর ছবির চেয়ে ভাল। শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায়ের ‘বেলাশেষে’ ব্লকবাস্টার হিট হলেও, টেলিভিশনের পর্দায় সে ছবির রেটিং খারাপ। টিআরপি-র উপরেই নির্ভর করে স্যাটেলাইট রাইটসের অঙ্ক। দেব বা জিতের ছবি দু’-আড়াই কোটি টাকায় বিক্রি হয় চ্যানেলে। কিন্তু বক্স অফিস সফল একটি আরবান ছবিকে এক কোটি টাকার বেশি দিতে রাজি নয় চ্যানেল কর্তৃপক্ষ।

অধিকাংশ প্রযোজকই এখন চ্যানেলের ভরসায় ছবি তৈরি করেন। ভেঙ্কটেশ ফিল্মস স্টার জলসার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলে, সুরিন্দর ফিল্মস জ়ি বাংলার সঙ্গে। শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ছবিও যেমন জ়ি-তে দেখানো হয়। এ ভাবে প্রসেনজিৎ, দেব এবং জিৎ বিভিন্ন চ্যানেলের সঙ্গে নিজেদের ডিল করে রেখেছেন। স্যাটেলাইট রাইটসের টাকার অঙ্ক আগের চেয়ে কমে গেলেও, তার ভরসাতেই নির্মাতারা ছবি ঘোষণা করে দেন।

অনেক সময়েই চ্যানেল ঠিক করে দিচ্ছে কোন কনটেন্ট নিয়ে ছবি তৈরি হবে, স্টারকাস্ট কী হবে। সোহমের ছবি বক্স অফিসে সফল না হলেও চ্যানেলের বিচারে অভিনেতার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। যে কারণে অভিনেতা পরপর ছবিতে কাজ পেয়ে যাচ্ছেন। একই কথা যশের ক্ষেত্রেও খাটে। তাঁর ছবিও নাকি দেড় কোটি টাকায় বিক্রি হয় চ্যানেলে।

টলিউডের সমীক্ষা বলছে, খুব কম ছবিই বক্স অফিসের ভরসায় লাভ করতে পারছে। স্যাটেলাইট, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এবং বক্স অফিসের মিলিত যোগফলই একমাত্র লাভের বৈতরণী পার করাতে পারে।

(টাকার অঙ্ক ইন্ডাস্ট্রি সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন