Prosthetic Makeup Of Dev In Dhumketu

মাঝ রাতে খাওয়াদাওয়া সারা, ভোরের আলো ফুটলেই ‘বুড়িয়ে’ যেতেন নায়ক! কী ভাবে ঘটত এই অঘটন?

বার্ধক্যের মেদ শরীরে জমবেই। এ দিকে নায়ক ছিপছিপে, মেদহীন! কী করে সেই ভারিক্কি ভাব আনা হয়েছিল?

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২৫ ১০:৫৬
Share:

বৃদ্ধহলেন দেব! ছবি: সংগৃহীত।

তখন তিনি ৩৩। ছিপছিপে, মেদহীন চেহারা। কালো চুলের ফাঁকে নুন-মরিচের ছিটে নেই। ত্বক টানটান, নিভাঁজ। এই বয়সের এক নায়ক ‘বৃদ্ধ’ হবেন! অনেকটা সময় ধরে তাঁর বার্ধক্য দেখানো হবে পর্দায়। নায়িকাদের যেমন দুর্নাম, পর্দায় নাকি তাঁরা চট করে ‘মা’ হতে চান না। তেমনি নায়কেরাও পর্দায় নিজের বার্ধক্য দেখাতে একটু হলেও সম্ভবত দ্বিধা করেন। অন্তত ৯-১০ বছর আগে তো তেমনই ছিল টলিউড।

Advertisement

সেই সময় এক নায়কের বুড়ো সাজায় কোনও আপত্তি নেই। চিত্রনাট্যের খাতিরে পর্দায় তাঁকে দেখানো হবে ৭৫। কী করে?

অবশ্যই প্রস্থেটিক মেকআপ এবং রূপটান শিল্পীর হাতযশে। শুধু এতেই কি বাজিমাত করা যায়! নায়ককে তার জন্য কতটা কষ্ট স্বীকার করতে হয়েছে? প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, অনেকটা।

Advertisement

‘ধূমকেতু’ ছবিতে প্রস্থেটিক মেকআপের আগে রানা সরকার, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, রূপটানশিল্পী বিক্রম গায়কোয়াড়, দেব। ছবি: ফেসবুক

ন’বছর আগে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘ধূমকেতু’ ছবিতে এমনই কিছু ঘটেছিল। ৩৩-এর দেব চিত্রনাট্য মেনে ৭৫ হয়েছিলেন। তাঁকে ‘বৃদ্ধ’ বানাতে বলিউড থেকে উড়ে এসেছিলেন বিশিষ্ট রূপটান শিল্পী বিক্রম গায়কোয়াড়। এর জন্য ছবির নায়ককে কতটা কৃচ্ছ্রসাধন করতে হয়েছিল? আনন্দবাজার ডট কমকে পরিচালক জানিয়েছেন, বৃদ্ধের রূপটান নেওয়ার আগে মধ্যরাতে গলাা ভাত, তরকারি, মাছ বা মাংস খেয়ে নিতেন দেব। কারণ, মেকআপ নেওয়ার পর আর ভারী বা শক্ত খাবার খাওয়া যাবে না। ভোর তিনটে থেকে শুরু হত রূপটান। সকাল আটটা থেকে শুটিং শুরু। তার আগে নায়ক ‘বৃদ্ধ’! ভীষণ সাবধানে হাঁটা চলা করতে হত তাঁকে। কথা বলার সময়েও খেয়াল রাখতে হত, রূপটান যেন নষ্ট না হয়। চোখে ভারী চশমা।

এখানেই শেষ নয়। পরিচালক আরও জানিয়েছেন, টানা কয়েক ঘণ্টা ধরে চলত রূপটান। এত ক্ষণ একটি চেয়ারে বসে থাকা যে কোনও মানুষের পক্ষে খুব কষ্টের। কিন্তু দেবকে সেটাই করতে হবে। অতঃকিম? প্রযোজক রানা সরকার বিশেষ একটি চেয়ার কলকাতা থেকে কিনে নৈনিতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। যাতে দেব একটু আরাম করে বসে রূপটান নিতে পারেন। নায়কের অবশ্য কোনও হেলদোল ছিল না। তিনি টুঁ শব্দ না করে রোজ মধ্য রাত থেকে উঠে প্রস্তুতি নিতেন।

এ দিকে প্রস্থেটিক রূপটানের আরও একটি সমস্যা, এক রূপটান দ্বিতীয় দিন ব্যবহার করা যায় না। ফলে, প্রত্যেক দিন নতুন রূপটান নিতে হত নায়ককে। তার জন্য প্রতি দিনের খরচ দেড় লক্ষ টাকা! আরও আছে। বৃদ্ধের সাজ, ওই চরিত্রে অভিনয় করতে করতে অভিনেতারা সাধরণত ক্লান্ত হয়ে পড়েন। তাঁদের মনের উপরে বড্ড ধকল পড়ে। পাশাপাশি, দীর্ঘ ক্ষণ প্রস্থেটিক রূপটান নেওয়ায় ত্বক স্বাভাবিক ভাবে শ্বাস নিতে পারে না। ত্বকে অক্সিজেন প্রবেশ করতে পারে না। তারও ছাপ পড়ে ত্বকে। অনেক অভিনেতা একটা সময়ের পর রোজ এই রূপটান নিতে তাই অনেক সময় আপত্তি করেন। দেব সেটাও করেননি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ওই মেকআপেই মুখ ঢেকে অভিনয় করে গিয়েছেন।

কৌশিকের কথায়, “শুটিং শেষে সকলের ক্লান্তি কাটানোরও দায়িত্বও নিয়েছিল দেব। বলত, চলো, জঙ্গলে ঘুরে আসি।”

বার্ধক্য মানে শুধুই তো ত্বকে বলিরেখা বা কুঞ্চন নয়। চেহারাতেও বার্ধক্যের মেদ জমে। রূপটানে না হয় মুখের ভোল বদলে দেওয়া গেল, শরীর ভারিক্কি হবে কী করে? নায়ক তো ছিপছিপে, মেদহীন! খবর, নানা ভাবে শরীর ভারী করে দেওয়া হয়েছিল নায়কের। পরানো হয়েছিল ভারী পোশাক। এতেও ক্যামেরায় চেহারা স্বাভাবিকের থেকে মেদবহুল দেখায়।

ছবির পুরো শুটিং নৈনিতালে হয়েছিল। তাই গরমে রূপটান গলে যাওয়ার সমস্যায় পড়তে হয়নি দেবকে। তার পরেও সারা ক্ষণ যথেষ্ট সাবধানে ছিলেন তিনি। সেটে সারা দিন তরল খাদ্যই ছিল ভরসা। যাতে শক্ত খাবার চিবোতে গিয়ে বিশেষ রূপটান ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। দেব ভাল করে খাওয়া দাওয়া করতেন শুটিং শেষে। অর্থাৎ, কমবেশি ২৪ ঘণ্টা পর! এ ভাবে একদিন নয়, টানা অনেকগুলো দিন শুটিং করেছেন তিনি। তার পরেও কৌশিকের মনখারাপ, “বড় আফসোস, যিনি দেবকে এত সুন্দর সাজিয়েছিলেন সেই রূপটানশিল্পী বিক্রম গায়কোয়া প্রয়াত। ছবিমুক্তির দিন আমরা ওঁকে পাব না!”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement