অনির্বাণ চক্রবর্তী, টোটা রায়চৌধুরী, কল্পন মিত্র ‘রয়েল বেঙ্গল রহস্য’-এর শুটিংয়ে। ছবি: ফেসবুক।
হাতবদল ঘটেছে ‘ফেলুদা’র। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের বদলে ‘মগজাস্ত্রের কারবারি’র মালিকানা কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের। প্রথম গোয়েন্দা ঘরানার কোনও কিছু পরিচালনা করলেন তিনি। দর্শক তাই মুখিয়ে তাঁর কাজ দেখার জন্য।
বড়দিনে হইচই ওয়েব প্ল্যাটফর্মে আসছে ‘রয়েল বেঙ্গল রহস্য’। পুরনো ‘ফেলুদা অ্যান্ড কোং’ টোটা রায়চৌধুরী, অনির্বাণ চক্রবর্তী, কল্পন মিত্র আছেনই। দেখা যাবে দীপঙ্কর দে, চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী, শঙ্কর দেবনাথের মতো বর্ষীয়ান এবং দাপুটে অভিনেতাদের। পুরনো টিমকে নতুন ভাবে পরিচালনা করা শক্ত না সহজ? প্রশ্ন ছিল আনন্দবাজার ডট কম-এর।
কমলেশ্বর বললেন, “অবশ্যই সুবিধা। কারণ, টোটা ‘ফেলুদা’কে আত্মস্থ করে ফেলেছেন। একই ভাবে অনির্বাণ-কল্পনও। ওঁরা প্রত্যেকে নিজেদের চরিত্রে নিখুঁত। আমি তাই এই টিম বা ওঁদের অভিনয় বদলানোর চেষ্টাই করিনি।” তাই সৃজিতের গড়ে দেওয়া ‘ফেলুদা’, ‘জটায়ু’ আর ‘তোপসে’কেই স্বাগত জানিয়েছেন তিনি। যেমন, সত্যজিৎ রায়ের গড়ে দেওয়া ছাঁচকেই পরবর্তীকালে সন্দীপ রায় বা সৃজিত অনুসরণ করেছেন। গল্পেরও তাই খুব বদল ঘটাননি। কেবল সমসাময়িক থাকতে যেটুকু পরিবর্তনের প্রয়োজন সেটুকুই করেছেন।
প্রথম গোয়েন্দা সিরিজ় পরিচালনায় কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক।
এক মুখোপাধ্যায়ের হাত থেকে ‘ফেলুদা’র ব্যাটন আর এক মুখোপাধ্যায়ের হাতে। পদবিতে মিল থাকলেও দু’জনে এক ব্যক্তি নন। তাই ভাবনা বা কাজের ধারাও আলাদা। সেই পার্থক্য বা ‘সিগনেচার’ কি সিরিজ়ে দেখতে পাবেন দর্শক? কমলেশ্বরও মেনে নিয়েছেন, “পদবিটুকুই এক। আমাদের মধ্যে পারস্পরিক বন্ধুত্ব অবশ্যই আছে। কিন্তু আত্মীয়তা নেই। আমি বলব, এক পরিচালকের হাত থেকে ব্যাটন অন্য পরিচালকের হাতে গিয়েছে। পদবিতে মিল কাকতালীয়।” কাজ শুরু আগে তিনি খুঁটিয়ে সৃজিতের কাজ দেখেছেন। সিরিজ়ে সচেতন ভাবে ‘সিগনেচার’ রাখার চেষ্টাই করেননি। বাঙালি ‘ফেলুদা’কে যেমন দেখতে চায় তেমনই দেখানোর চেষ্টা করেছেন।
‘ফেলুদা’ এ বার জঙ্গলে। তাই সিরিজ়ে প্রযুক্তির কাজ তুলনায় বেশি।
গল্পের ধারা মেনে জয়ন্তী, উত্তরবঙ্গের রাজাভাতখাওয়া, চালসা-সহ নানা জায়গায় শুটিং হয়েছে। প্রথম গোয়েন্দা ঘরানার কাজ। অল্প ভয়? “ভয় পাইনি। রোমাঞ্চিত হয়েছি। ছেলেবেলাকে ফিরে পাওয়ার রোমাঞ্চই আলাদা।” উপলব্ধি করেছেন নিজের গোয়েন্দাসত্তাকেও! “চিকিৎসকেরাও কিন্তু গোয়েন্দা। কিছু উপসর্গ মিলিয়ে রোগ নির্ণয় করি আমরা।” এ-ও জানিয়েছেন, বর্ষীয়ান অভিনেতাদের নিয়েছেন চরিত্রের সঙ্গে তাঁদের মানিয়েছে বলে। একই সঙ্গে সিরিজ়টি তাঁদের অভিনয়ে আরও সমৃদ্ধ হয়েছে।
বড়দিনে মুক্তি পাচ্ছে কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের ‘ফেলুদা’ সিরিজ়। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে হয়তো তুল্যমূল্য বিচার হবে। পরিচালক প্রস্তুত? “জানি তুল্যমূল্য বিচার হবে। আমিও তৈরি। সবটাই দর্শকের উপরে ছেড়ে দিয়েছি। ওঁরা যা বলবেন, মাথা পেতে নেব।” ওই সময়ে তিনটি বড় বাজেটের ছবি মুক্তি পাবে। তালিকায় অন্যতম দেবের ছবি। দর্শক কি সে সব ছেড়ে মুঠোফোনে ‘ফেলুদা’দেখবেন? মৃদু হেসে পরিচালকের যুক্তি, “তিনটি ছবি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে। আমার সিরিজ় মুঠোফোনে দেখা যাবে। বিরোধ হবেই বা কেন?” মনে করিয়ে দিয়েছেন, বড়দিনে ‘ফেলুদা’র আগমন কিন্তু সত্যজিৎ রায়ের আমল থেকে রেওয়াজে দাঁড়িয়েছে!