Coronavirus Lockdown

ঘরে-বাইরে সমান তালে

ছোটবেলায় বাবা ও ঠাকুরদার কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষা, লকডাউনে কাজে লেগে গিয়েছে ঋষি কৌশিকের।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২১ মে ২০২০ ০০:১১
Share:

করোনা অতিমারি জীবনযাপনের অনেক সংজ্ঞাই বদলে দিচ্ছে। ঘর সামলানোর যাবতীয় দায় মেয়েদেরই, প্রচলিত ধারণাকে ভেঙে বাড়ির কাজে সাবলম্বী হয়ে উঠছেন পুরুষরাও। ব্যতিক্রম নন টলিউডের ছোট পরদার নায়করাও।

Advertisement

‘‘অনেক পরিবারে আজও বাড়ির কাজ কেবল মহিলারাই করেন, ছেলেদের কাছে আশা করা হয় না, এটা সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির দোষ। করোনাভাইরাস শিখিয়ে দিয়েছে এই কাজগুলো জানাও খুব দরকার,’’ বললেন বিক্রম চট্টোপাধ্যায়। লকডাউনে মুম্বইয়ে আটকে পড়েছেন তিনি। ঠিক করেছেন প্রফেশনাল কমিটমেন্টের ফাঁকে এ বার থেকে ঘরের কাজে মা ও বোনকে সাহায্য করবেন। ‘‘হেডফোনে গান শুনতে শুনতে এখন বাসন মাজি। বাড়ি ফিরে, ছুটির দিন বা অবসরে এই শেখাটা ধরে রাখব,’’ আত্মবিশ্বাসী বিক্রম।

‘‘হাতের কাছে গোছানো সব কিছু পেয়ে যাওয়ার একচেটিয়া অধিকারবোধে অভ্যস্ত পুরুষসমাজ। প্রায় ১৫ বছর ধরে ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত থাকায় খুব কম সময়েই বাড়িতে থাকতাম। এখন অফুরন্ত সময়। মায়ের পাঠশালা থেকেই ঘর পরিষ্কার, আনাজ কাটা, রান্না... কাজই শিখলাম,’’ একমত রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

Advertisement

পরিচারিকাকে ছুটি দিয়ে সংসারের সব দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়। ‘‘সংসারের প্রতিটি কাজের ভার শুধু মহিলাদের কাঁধে তুলে দেওয়া, কতটা ভুল, লকডাউনের গুঁতোয় তা বুঝে গিয়েছি। প্রতিদিন খাবার তৈরি, পরিমাণমতো পরিবেশন, অতিরিক্ত খাবার গুছিয়ে ফ্রিজে তুলে রাখা, শেষে ডাইনিং টেবিল পরিষ্কার করার মতো কাজগুলোকে কখনও গুরুত্ব দিয়ে বিচার করিনি, এখন হাড়ে-হাড়ে টের পাচ্ছি,’’ বললেন সাবলম্বী হয়ে ওঠা ‘জয় বাবা লোকনাথ’-এর লোকনাথ। ডাইনিং টেবিল মোছা ও বাথরুম পরিষ্কারের মতো কাজের ভয়ে এক সময়ে বাংলা বিগ বস-এ ডাক পেয়েও রাজি হননি ভাস্বর। তাঁর কথায়,‘‘নিজেকে ডেভেলপ করেছি। ভয় কাটিয়ে যে কোনও লড়াইয়ের জন্য আমি তৈরি।’’

ছোটবেলায় বাবা ও ঠাকুরদার কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষা, লকডাউনে কাজে লেগে গিয়েছে ঋষি কৌশিকের। ‘‘বাগান পরিষ্কার করতেন বাবা, আমাকেও ধুলোবালি ঝাড়ার কাজ শিখিয়েছিলেন। ফ্যান পরিষ্কার থেকে বাড়ির কোনও কাজে অসুবিধে হয়নি কখনও। ঠাকুরদার কাছে শিখেছিলাম, জুতো পালিশের কাজ।’’ স্ত্রী দেবযানী চক্রবর্তীর অনুপস্থিতিতে ঘরের কাজ অনায়াসে সামলাচ্ছেন ‘কোড়া পাখি’র অঙ্কুর। অনেকদিন আগেই কলকাতায় একা থাকার অভ্যেসবশতই রান্নাতেও হাত পাকিয়েছেন তিনি। এখন নিত্য নতুন রেসিপি ট্রাই করছেন। স্ত্রী ফিরলে, তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে সারপ্রাইজ়।

ডিপার্টমেন্ট মল থেকে প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার চেয়ে যে ‘বাজার করা’ কতটা আলাদা, তা ঠেকে শিখলেন ‘কৃষ্ণকলি’র নিখিল অর্থাৎ নীল ভট্টাচার্য। ‘‘মা’র কাছে শিখলাম, কোন আনাজ কী ভাবে দেখে কিনতে হয়। এত দিন মায়ের হাতের ভাল রান্নাই খেয়েছি। অপছন্দ হলে অভিযোগ করেছি। ভাল রান্নার পিছনে ঠিকঠাক বাজার করাটাও যে জরুরি, সেটা লকডাউন আমাকে শিখিয়ে দিল,’’ উপলব্ধি নীলের। এখন থেকে নিজের ঘর গুছিয়ে রাখবেন বলে ঠিক করেছেন তিনি, যা পরবর্তী দাম্পত্য জীবনেও কাজে আসবে। ‘‘মা কিছুটা হলেও চাপমুক্ত হবে,’’ হাসতে হাসতে বললেন অভিনেতা।

লেখাপড়ার চাপ, এলোমেলো শুটিং শিডিউলের কারণেই ঘরের প্রয়োজনীয় কাজ জানা থাকলেও রান্না শেখার সময় হয়নি নেতাজি অর্থাৎ অভিষেক বসুর। ‘‘আমাদের তিনজনের সংসারে কোনও দিন হাউস হেল্প ছিল না। ছোটবেলা থেকেই বাবা-মা’কে মিলেমিশে ঘরের কাজ সামলাতে দেখছি। আমিও ছোট থেকে ঘরের অনেক কাজ পারলেও যেগুলো শেখা হয়নি, তারই ট্রেনিং চলছে। আনাজ কাটা থেকে রান্না, সবই শিখলাম। চিলি চিকেন, মাছের কালিয়া, ডিমের ঝোল রান্না করেছি। তবে মায়ের কম তেলে অসাধারণ পদ বানানোর কৌশল শেখা এখনও বাকি,’’ বললেন অভিষেক। লকডাউন উঠে গেলে গার্লফ্রেন্ডকে নিজের তৈরি ডিমের ঝোল খাওয়ানোর ইচ্ছে রয়েছে তাঁর।

তবে শেখার আনন্দের আড়ালেই সকলের মনে উঁকি দিচ্ছে উৎকণ্ঠা, উদ্বেগ। আবার কবে শুটিংয়ে ফিরবেন তা নিয়েই চিন্তিত অভিনেতারা।

ঈপ্সিতা বসু

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন