রবীন্দ্রসদনে রঙ্গাশ্রমের ‘মাংস-ভাত’ নাটকের একটি মুহূর্ত। —নিজস্ব চিত্।
১২ নভেম্বর ‘বহরমপুর গাঙচিল’-এর দ্বিতীয় বর্ষের ‘ছোট-বড় মিলে’ নাট্যোৎসব দিয়ে শুরু হয়েছে বহরমপুর, তথা মুর্শিদাবাদ জেলার ২০১৬ সালের শীতকালীন নাট্যোৎসবের পালা।
এর পর একে একে বিভিন্ন নাট্যসংস্থার নাট্যমেলা চলবে আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। গাঙচিলের বয়স অনেক হলেও তারা ‘ছোট-বড় মিলে’ শীর্ষক নাট্যোৎসব শুরু করেছে গত বছর থেকে। আয়োজক সংস্থার কর্ণধার রাহুলদেব ঘোষ বলেন, ‘‘রবীন্দ্রসদনের ভিতরে মঞ্চের পাশাপাশি বাইরের মু্ক্তমঞ্চে একই সঙ্গে তিনদিন ধরে অভিনীত হয়েছে মোট ন’টি নাটক।’’ তিনি জানান, তার মধ্যে থাকছে বড়দের পাশাপাশি বহরমপুর শহরের ছ’টি স্কুলের প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ৫৫ জন ছাত্র-ছাত্রীর অভিনীত তিনটি নাটক। এ জন্য গত বছর থেকে এই নাট্যমেলার নামকরণ করা হয়েছে ‘ছোট-বড় মিলে’।
নাট্যমেলার উদ্বোধন করেছিলেন কলকাতার ‘অন্তর্মুখ’ নাট্য সংস্থার কর্ণধার, তথা রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্য বিভাগের অধ্যাপক সৌমিত্র বসু। উদ্বোধনী সন্ধ্যায় প্রয়াত নট-নাট্যকার-পরিচালক ‘সলিল ভট্টাচার্য স্মৃতি সম্মান’-এ ভূষিত হন কলকাতার আর এক কৃতী নাট্য-ব্যক্তিত্ব কৌশিক কর।
সেদিন সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হয় ‘মেরি ইমাকুলেট’, ‘প্রভারানী’, ‘জি টি আই’ এবং ‘মহাকালী পাঠশালা’ মিলে মোট চারটি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের অভিনীত, ‘গাঙচিল’ প্রযোজিত নাটক ‘আলকাপপালা’। তারপর এই সন্ধ্যায় অভিনীত হয় দ্বিতীয় নাটক ‘আমেরিকা আবিষ্কার’। এই নাটকটি কলকাতার বালিগঞ্জের ‘অন্তর্মুখ’-এর প্রযোজনা। মুক্তমঞ্চে ১০ জন ঢাকির ঢাকবাদ্য-সহ লোকশিল্পীদের নানা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
পরদিন, রবিবার সন্ধ্যায় প্রথমে মঞ্চস্থ হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুরের ‘দৃষ্টি’ নাট্যসংস্থার নাটক ‘স্ত্রীর পত্র’। দ্বিতীয় সন্ধ্যার দ্বিতীয় নাটক ‘ভীতু কোথাকার’। জিয়াগঞ্জের ‘বাক্যব্যয়’ নাট্যগোষ্ঠীর নাটক ‘ভীতু কোথাকার’। নাট্যমেলার এই দ্বিতীয় সন্ধ্যার সমাপ্তি নাটক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর গল্প অবলম্বনে ‘রাজা ও টুনটুনি’। অভিনয় করেছে বহরমপুর শহরের সুতির মাঠের ‘সরস্বতী বিদ্যামন্দির’-এর প্রথম শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা।
এ দিন মুক্তমঞ্চে ছিল কলকাতার বিশিষ্ট শিল্পী পার্থসারথীর ‘কথকতা’। তিনি লালনের গান, রবীন্দ্রসঙ্গীত, বিদেশের গানের সঙ্গে তাঁর জীবনের অন্যদের জীবনে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার বর্ণনার মিশেলে ফুটিয়ে তোলেন তাঁর ‘কথকতা’।
সোমবার সমাপ্তি সন্ধ্যার প্রথম নাটক ছিল কল্যাণীর ‘সৌপ্তিক’ নাট্যসংস্থার ‘দোটানায়’। তার পর মঞ্চস্থ হয় বহরমপুর শহরের ‘কাঠমাপাড়া যুবসাথী সেবা সমিতি’র নাটক ‘জোলা ও সাত ভূত’। অভিনয় করেছেন বহরমপুর শহরের মণীন্দ্রচন্দ্র বিদ্যাপীঠ’-এর নবম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা। এ দিন সদন প্রাঙ্গনের মুক্তমঞ্চে অভিনীত হয় বহরমপুর শহরের পথ নাটকের দল ‘ব্রীহি সাংস্কৃতিক সংস্থা’র নাটক ‘আন্তিগোনে আজও’।
ওই নাট্যোৎসব শেষ হতে না হতেই গত রবিবার ২০ নভেম্বর থেকে রবীন্দ্রসদনে শুরু হয়ে গিয়েছে বহরমপুর ‘রঙ্গাশ্রম’-এর সপ্তম বছরের ‘নাট্যসমারোহ’। সাত দিনের ওই নাট্যোৎসব চলবে আগামী ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত। এ বছরের শীতকালীন এই ধারবাহিক উৎসবের ধরতাই অবশ্য ধরিয়ে দিয়েছে ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘ। গত ৫-৬ নভেম্বর তাঁরা আয়োজন করেছিলেন শিল্পী চিত্তপ্রসাদের অসাধারণ শিল্পের প্রদর্শনী।