প্যাকেজ তৈরি করে সিনেমা হয় না

মনে করেন বক্স অফিস দিয়ে ছবির মান বোঝা যায় না। ইন্ডাস্ট্রি, অভিনেতা, নতুন ছবি নিয়ে অকপট কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়আপত্তি ‘মাল্টিটাস্কিং’ শব্দটায়। মনে করেন ব্রেন কখনও একসঙ্গে দুটো কাজ করতে পারে না। ‘‘এটা কিন্তু বিজ্ঞানসম্মত,’’ জোর গলায় বললেন টালিগঞ্জের ডাক্তারবাবু। টুকটাক ডাক্তারি পরামর্শ তিনি ইন্ডাস্ট্রির মানুষকে আজও দিয়ে থাকেন।

Advertisement

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৭ ০৩:৪৫
Share:

কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়

আপত্তি ‘মাল্টিটাস্কিং’ শব্দটায়। মনে করেন ব্রেন কখনও একসঙ্গে দুটো কাজ করতে পারে না। ‘‘এটা কিন্তু বিজ্ঞানসম্মত,’’ জোর গলায় বললেন টালিগঞ্জের ডাক্তারবাবু। টুকটাক ডাক্তারি পরামর্শ তিনি ইন্ডাস্ট্রির মানুষকে আজও দিয়ে থাকেন।

Advertisement

‘অ্যামাজন অভিযান’ আর ‘মুখোমুখি’-র কাজ শেষ করে তিনি দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের ‘ভারতে বস্তুবাদ প্রসঙ্গে’ নিয়ে বসে আছেন। সে দিক থেকে চোখ তুলে বললেন, ‘‘সিনেমার প্রতি অনেক দিনের টান। ছবি করার আগে থেকেই ছবি দেখার নেশা। তবে ভেতর থেকে না এলে শুধু মাত্র বাণিজ্যিক তাগিদে ছবি তৈরি করতে পারব না।’’

বাংলা ছবির বক্স অফিসের রিপোর্ট কার্ড তো সুবিধের নয়! কথাটা শুনেই গুছিয়ে বসলেন নিজের চেতলার সাজানো ফ্ল্যাটের সোফায়। পিছনের দেওয়াল জুড়ে বিশ্বের প্রথিতযশা পরিচালকদের একরাশ ছবি।

Advertisement

বাংলা ছবির হাল হকিকত নিয়ে কথা বলতে গিয়ে পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠ জোরালো হল যেন! ‘‘শুনুন, সিনেমা মানেই কেবল মাত্র ভাল গল্প বলা নয়। তা হলে বইয়ের পাতা খুলে গল্প পড়ে নিলেই হয়! এডিটিংয়ে, ভিস্যুয়ালে, সাউন্ডে, কোরিওগ্রাফিতে সিনেমা থাকতে হবে। সিনেমা বানিয়ে তবে গল্প বলতে হবে। ভাল গল্প তো সিরিয়ালেও হয়।’’

কমলেশ্বরের মতে, এখানেই বাংলা ছবি পিছিয়ে। আমাদের ‘গ্যাংস অব ওয়াসিপুর’-এর মতো কমার্শিয়াল ছবি নেই। আছে রোজ দেখা ড্রয়িংরুমের সম্পর্কের গল্প, নয়তো ফ্যান্টাসি আর লার্জার দ্যান লাইফে ভেসে যাওয়ার কাহিনি। তিনি সরাসরি প্রসঙ্গ আনলেন ট্রেড অ্যানালিসিসের। ‘‘ইদানীং বাঙালি হঠাৎ ট্রেড অ্যানালিস্টদের নিয়ে পড়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ ছবির ৯০ শতাংশই বক্স অফিসে খারাপ ফল করেছে। তাতে কী? সিনেমা শুধুই টাকা রোজগারের বিষয় নয়। আর যা-ই হোক, প্যাকেজ তৈরি করে সিনেমা বানাতে পারব না,’’ মাথা ঝাঁকিয়ে ‘মেঘে ঢাকা তারা’র পরিচালক জানিয়ে দিলেন তিনি কেন বাণিজ্যের চেয়ে সিনেমার অন্তর্মুখীন ভাবনাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। মনে করিয়ে দিলেন ‘সোনার কেল্লা’, ‘জয়বাবা ফেলুনাথ’ হিট। কিন্তু ‘অশনি সংকেত’ বা তাঁর সবচেয়ে প্রিয় ‘অপরাজিত’? এই সব ছবির বক্স অফিস তো দারুণ কিছু নয়! ‘‘বাজারে চলেনি বলে কি ‘সুবর্ণরেখা’ ছবি নয়?’’ প্রশ্ন কমলেশ্বরের। তিনি রিস্ক নিতে চান। অন্য ফ্রেমে ছবি ভাবতে চান। তাঁর আসন্ন ছবি ‘মুখোমুখি’-তে পায়েল সরকার, যিশু সেনগুপ্ত, অঞ্জন দত্ত একটা সেটেই আজকের সম্পর্কের জটিলতা তুলে ধরবেন। ‘গুড নাইট সিটি’-তে যেমন পার্থ দে, উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা উঠে আসবে ঋত্বিক চক্রবর্তীর মুখে। এই ছবিতেই তাঁর সঙ্গে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। দেবের প্রোডাকশনেই কথা হয়েছে আরও একটা ছবির, যেখানে দেব পাইলট।

দেব, ঋতুপর্ণা, যিশু— এত অন্য ধারার ছবির কথা বললেও কাস্টিং কিন্তু সেই স্টারদের নিয়েই। বললেন,‘‘চরিত্রর লুক আর অভিনয়কে আমি গুরুত্ব দিয়েছি। ছবিগুলো দেখলেই বুঝবেন। আর দেব দিন দিন আরও ভাল কাজ করছে।’’ সব ধরনের মানুষের জন্য কি তাঁর এই ছবি? ‘‘সকলকে খুশি করার জন্য ছবি তৈরি করা যায় না। কোনও ছবি সকলের নয়। ভাগাভাগি আছে।’’ নিজের ছবি ‘চাঁদের পাহাড়’-এর উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন, ‘‘চাঁদের পাহাড় সকলে দেখেননি। কারণ নিশ্চয়ই আগ্রহ পাননি।’’

তবে বাংলা ছবির নতুন ধাঁচ-ধরন, বিশেষ করে টেকনিক্যাল দিকটায় যে রকম কাজ হচ্ছে তাতে তিনি যারপরনাই উৎসাহী। গৌতম ঘোষ, অনীক দত্ত, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, অরিন্দম শীল, সুমন মুখোপাধ্যায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায়ের ছবি নিয়ে তাঁর আগ্রহ আছে। যদিও সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক, মৃণাল সেনের পরে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় পরিচালক অপর্ণা সেন।

মহাভারতের ভাবনা কি হারিয়ে গিয়েছে? ‘‘আমার বেশির ভাগ কাজই রিসার্চ করে করতে হয়। তাই প্রথম দিকে অত বড় একটা প্রোডাকশন থেকে সরে এলেও মহাভারতের কাজে হাত দিয়েছি আবার।’’ ইতিমধ্যে অভিনয় করেছেন ‘চ্যাম্প’, ‘মেঘনাদবধ রহস্য’ এবং অরিন্দম শীলের একটি নতুন ছবিতে।

প্রশ্ন না করলে যেচে নিজের কথা বলেন না। পার্টি বা পিআর করতে পারেন না। ইন্ডাস্ট্রিতে নাকি ‘সাতে-পাঁচে’ থাকেন না!

কথাটা শুনেই বললেন, ‘‘সাত আর পাঁচ কোনওটাই থাকার মতো জায়গা নয়। আপাতত ডিজিটালে থাকার চেষ্টা করছি। সামনের দিনে ছবি, নাটক, গান, ওটাই একমাত্র মাধ্যম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন