টাকার জন্য দরজায় দরজায় ঘুরেছি

কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা বিভাগে (মহিলা পরিচালক নির্দেশিত) একমাত্র ভারতীয় ছবি ‘তানজিল’। ছবির পরিচালক আবার বাঙালি। কলকাতার মেয়ে। মহুয়া চক্রবর্তী। তাঁর সঙ্গে কথা বললেন সুমনা দাশগুপ্ত কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা বিভাগে (মহিলা পরিচালক নির্দেশিত) একমাত্র ভারতীয় ছবি ‘তানজিল’। ছবির পরিচালক আবার বাঙালি। কলকাতার মেয়ে। মহুয়া চক্রবর্তী। তাঁর সঙ্গে কথা বললেন সুমনা দাশগুপ্ত

Advertisement
শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share:

আপনার প্রথম ছবি ‘গ্ল্যামার’ ফ্লপ। আর দ্বিতীয় ছবি জায়গা পেল কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে। এটা কী করে সম্ভব হল?

Advertisement

প্রথম ছবি ‘গ্ল্যামার’ রিলিজ হওয়ার পর আমারই কেমন মনে হয়েছিল। টু বি ভেরি অনেস্ট আমার মনে হয়েছিল এত খারাপ সিনেমা আমি কী করে বানালাম! নিজেই হতাশ হয়ে পড়ি। কয়েক দিন খুব মন খারাপ ছিল। তার পর বুঝলাম এটা আমার জঁর নয়। এই সেমি কমার্শিয়াল, সেমি প্যারালাল সিনেমা আমার দ্বারা হবে না। ঠিক করলাম ‘তানজিল’ করব। এটাই আসলে আমার প্রথম প্রজেক্ট ছিল। কিন্তু প্রথমে ‘তানজিল’য়ের মতো ছবি করার সাহস পাইনি। বন্ধুরাও বলেছিল প্রথমে এমন ছবি কর যেটায় প্রোডিউসর পাওয়া খানিকটা সহজ হবে। ‘গ্ল্যামার’ ফ্লপ হওয়ার পর অন্য ভাবে ভাবতে শুরু করলাম। অরুণাচল প্রদেশ আর সুন্দরবনের উপজাতিদের ওপর ডকুমেন্টারি করেছিলাম। তার পর ‘তানজিল’য়ের মধ্যেই নিজেকে খুঁজে পেলাম।

Advertisement

‘তানজিল’ তা হলে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দিল।

হ্যাঁ, তা বটে। প্রথমে তো বিশ্বাসই করতে প‌ারিনি। প্রতিযোগিতার জন্য ছবিটা এশিয়ার নেট প্যাকে পাঠিয়েছিলাম। ছবিটা দেখে ওরা আমায় মেল করেছিল। জানতে চেয়েছিল ‘তানজিল’ ছবিটিকে যদি ইন্টারন্যাশনাল ক্যাটাগরিতে পাঠাই আমার কোনও আপত্তি আছে কি না? আমি তো অবাক। ভাবিনি এমন সুযোগ আসবে। কারণ ছবিটার বাজেট এত কম ছিল, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বড় বাজেটের ছবির পাশে দাঁড়াতে পারব কখনও মনে হয়নি। পরে জানতে পারলাম বাহান্নটা ফিল্ম এসেছিল। তার মধ্যে থেকে এটা নির্বাচিত হয়েছে।

টাইটেল কার্ডে দেখলাম গল্প, চিত্রনাট্য, এডিটিং সব আপনার। সবটা একা হাতে...

ছবির প্রোডিউসর জোগাড়ের জন্য আমি দরজায় দরজায় ঘুরেছি। কোনও প্রোডিউসর হেল্প করেননি। কলকাতার এক নামী প্রোডাকশন হাউসের কাছে গিয়েছিলাম। ওরা ফিরিয়ে দিল। একজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে দেখা করে ছবির ফান্ডিংয়ের জন্য টাকা চেয়েছিলাম। উনিও রাজি হননি। কত জায়গায় যে হাত পেতেছি। এ ভাবে ঘুরতে ঘুরতে একটা সময় জেদ চেপে গেল। মনে হল যে ভাবে হোক ছবিটা করতেই হবে। রিস্ক নিয়ে বাবার প্রত্যেকটা এফ ডি ভাঙিয়ে ফেললাম। ছবির কাজ কিছুটা এগোনোর পর দেখি টাকা শেষ। কী করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। এই সময় দু’জন আমায় খুব হেল্প করেছেন। একজন হলেন ডাক্তার পূর্ণেন্দু রায়। আরেকজন ছবির নায়িকা অমৃতা চট্টোপাধ্যায়। অমৃতা বলেছিল ওর রেমুনারেশনটুকু ছবির কাজে লাগিয়ে প্রোডাকশনটা চালু রাখতে। টাকা এতটাই শর্ট ছিল যে আমি আর দাদা মিলে বাড়িতে ছবিটা এডিট করি।

এই যে ঘরের টাকায় ছবি করলেন, টাকাটা উঠল?

না, এখনও ওঠেনি। মোট ৩৫ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। স্যাটেলাইট রাইটস বিক্রি হওয়ায় কিছু টাকা পেয়েছি। কিন্তু এখনও দশ লক্ষ টাকার ব্যাক লগ রয়েছে। আসলে ‘তানজিল’য়ের যাত্রা তো এখনও শুরু হয়নি। ছবিটা রিলিজ হোক। কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ছাড়াও কয়েকটি ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে অফিশিয়াল এন্ট্রি পেয়েছে ছবিটা।

ধরা-বাঁধা মাইনের চাকরি ছেড়ে হঠাৎ ছবির জগতে কেন?

২০০৪ সালে চাকরিটা ছেড়ে দিই। আমার বাড়িতেও কেউ কোনও দিন ফিল্ম করেনি। আমি যখন বাড়িতে ছবি বানানোর কথা বলি, সবাই হেসেছিল। অনেক কিছু ফেস করেছি। ছবি করার অনুপ্রেরণা আমার দাদা। আর এখন আমার অনুপ্রেরণা হাজব্যান্ড আর মেয়ে। মেয়ের বয়স নয় বছর। ও কী বোঝে আমি জানি না, কিন্তু ও শুধু বলে, মা তুমি ফিল্ম বানাও। আমি আমার পড়াশোনা নিজেই করে নেব। (যদিও করে না, হাসি)। আর আমার হাজব্যান্ড এ জগতের মানুষ না হয়েও সব সময় আমার পাশে থেকেছে। কোনও দিন বাধা দেয়নি।

ছবির নাম ‘তানজিল’ কেন?

প্রথমে ছবিটার নাম ‘স্পর্শ’ রেখেছিলাম। পরে মনে হল ‘স্পর্শ’ খুব কমন শব্দ। এই ছবিটা আসলে মা-মেয়ের গল্প। ভাবলাম একটা ফেমিনিন ওয়ার্ড থাকুক। ‘তানজিল’ আরবি শব্দ। যার মানে হল এমন একজন মহিলা যে সব কিছু সুন্দর করতে পারে। সেই ভাবনা থেকে সিনেমাটার নাম ‘তানজিল’।

‘তানজিল’ তো কিছুটা হলেও দায়িত্ব বাড়িয়ে দিল। নেক্সট পরিকল্পনা কী?

এটা আপনি একদম ঠিক বলেছেন। শুধু দায়িত্ব নয়, ‘তানজিল’ আমার মনের জোর বাড়িয়ে দিয়েছে। পরের ছবির কথা ভাবছি। গল্পটা থ্রিলার বেসড অন রিলেশন। ছবি করার সময় একটা বিষয়ে জোর দেব। সেটা হল অডিয়ো। আমাদের দেশের ছবিতে অডিয়ো আর ভিস্যুয়ালের ব্যালান্সিং ঠিকমতো হয় বলে আমার মনে হয় না। এখনকার ছবিগুলো কেমন মাথা ধরিয়ে দেয়।

সে কী! কী বলছেন, এখন তো বাংলা ছবির ধারা বদলে গেছে। কত ভাল ছবি হচ্ছে, নতুন ধরনের ছবি হচ্ছে।

সে আপনি যাই বলুন। আমার মনে হয় অডিয়ো-ভিস্যুয়াল ব্লেন্ডিং ভারতীয় ছবিতে খুব দুর্বল। আমাদের এখনকার ছবির মধ্যে দেখার কিছু খুঁজে পাই না।

অমৃতা এবং মহুয়া।ছবির একটি দৃশ্যে।

তার মানে আপনি এখনকার বাংলা ছবি দেখেন না?

প্রায় দেখি না বললেই হ।। এক বন্ধুর পাল্লায় পড়ে যদিও ‘জুলফিকার’ দেখেছি। কিন্তু হাতে গোনা কয়েকটা ছবি ছাড়া ইদানীং কালের কোনও ছবি দেখিনি। সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক বা মৃণাল সেনের ঘরানাটা বুঝি। আন্তর্জাতিক সিনেমা দেখে আমি অভ্যস্ত।

ফেলিনি, গদার, কুরোসাওয়া-র ছবি দেখে তো সেই একেঘেয়ে সম্পর্ক নিয়ে সিনেমা বানাচ্ছেন। নতুনত্ব কই?

দেখুন, সম্পর্ক নিয়ে ছবি বানানো মানেই কিন্তু একঘেয়ে নয়। ছবির ট্রিটমেন্ট, মেকিংটাই আসল। বক্স অফিস ভেবে ছবি করতে চাই না...

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement