পরের ইন্টারভিউটা বাংলাতে দেব

‘ভিকি ডোনর’, ‘দম লাগাকে হইসা’র পর তিনি এখন বলিউডের ইয়ুথ আইকন। কলকাতায় আয়ুষ্মান খুরানা। আড্ডায় অরিজিৎ চক্রবর্তী বাইরের শ’দেড়েক লোক তখন ফ্লুরিজের কাচের দেওয়ালের উপর ঝুঁকে পড়েছেন। যে কোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৬ ০০:০০
Share:

ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল

বাইরের শ’দেড়েক লোক তখন ফ্লুরিজের কাচের দেওয়ালের উপর ঝুঁকে পড়েছেন। যে কোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে।

Advertisement

নিরাপত্তা কর্মীরা নির্ঘাত এটা আগাম ভাবেননি। উইকএন্ড মোডে চলে যাওয়া পার্ক স্ট্রিটেও এটা হবে!

যদিও তড়িঘড়ি বাইরের কোলাপসিবল গেট বন্ধ করে দেওয়ায় সে বিপদ আর ঘটেনি।

Advertisement

ভিতরে তখন আয়ুষ্মান খুরানা আর পরিনীতি চোপড়া। মিনিট দু’য়েক আগে যাঁদের টয়োটা ইনোভা পার্ক স্ট্রিট-রাসেল স্ট্রিটের ক্রসিংয়ে দাঁড়াতেই এই অবস্থা।

‘‘এই গরমেও কী এনার্জি কলকাতার! ভাবা যায়!’’ ঢুকতে ঢুকতে বলছিলেন আয়ুষ্মান। কলকাতার ভ্যাপসা গরমের সঙ্গে আলাপ আগেই হয়ে গিয়েছে তাঁর। পরনের নীল পাঞ্জাবিটা নাকি সে দিনের চতুর্থতম পোশাক। বাকি তিনটে ঘামে ভিজে গিয়েছে।

নতুন ডিরেক্টর আমার লাকি চার্ম

প্রায় বছর দেড়েক আগে কথা হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পার্ক স্ট্রিটেই। যদিও তখনও ‘দম লাগাকে হেইসা’ রিলিজ করেনি। একান্ত সাক্ষাৎকার নেওয়ার কোনও ভিড় ছিল না। শুধুমাত্র আনন্দplus। কারণ, দু’টো ফ্লপের পর ‘ভিকি ডোনর’‌য়ের আয়ুষ্মান অনেকের চোখেই তখন ‘ওয়ান হিট ওয়ান্ডার’। কিন্তু গত এক বছরে সেখানেও পরিবর্তন। শনিবারের পার্ক স্ট্রিট তার ট্রেলার। ‘‘হ্যাঁ, এখন আর ইচ্ছে হলেই হোটেল থেকে বেরিয়ে চেলো কাবাব খেতে পারব না,’’ হাসতে হাসতে বলছিলেন চণ্ডীগড়ের আয়ুষ্মান।

এ বার কলকাতায় আসার কারণ যশরাজের নতুন ছবি ‘মেরি পেয়ারি বিন্দু’র শ্যুটিং। পুরো শিডিউলই প্রায় কলকাতায়। কিন্তু নতুন পরিচালক বলে ভয় করছে না? ‘‘নতুন পরিচালক তো আমার লাকি চার্ম,’’ স্ট্রেট ড্রাইভ আয়ুষ্মানের। সত্যিই ‘ভিকি ডোনর’‌য়ের সুজিত সরকার বা ‘দম লাগাকে হইসা’র শরৎ কাটারিয়া — ফিল্মোগ্রাফির বক্স অফিস হিট মানেই সে সময়ের নতুন পরিচালক। ‘মেরি পেয়ারি বিন্দু’র পরিচালক অক্ষয় রায়ের ক্ষেত্রেও যে ব্যতিক্রম হবে না, সে ব্যাপারে তাই আত্মবিশ্বাসী।

‘দম লাগাকে হেইসা’

টিভি আর তেমন দেখা হয় না

আয়ুষ্মানের শুরু ছোট পর্দা থেকে। এমটিভি রোডিজের দ্বিতীয় সিজনে চ্যাম্পিয়ন। তারপর ভিডিয়ো জকি, আইপিএল-এর অ্যাঙ্কর থেকে সুজিত সরকারের ‘ভিকি ডোনর’। আর ফিরে তাকাতে হয়নি। কিন্তু টিভির দিকে তাকানোর সময় হয়? ‘‘নাহ, একদম দেখা হয় না। রোডিজটাও আর ফলো করা হয় না। রণবিজয়ের (সিংহ) ‘স্কোয়াডরান’টা শুধু দেখি ইউটিউবে। অ্যাওয়ার্ড শো-য়ের হোস্ট, আইপিএল-এ অ্যাঙ্কর হলেও টিভি দেখার আর সময় করে উঠতে পারি না। এই দেখুন না, শ্যুট থেকে এখানে আসতে হল,’’ বলছিলেন রোডিজের প্রাক্তনী।

শুধু টিভি না। থিয়েটারেও সময় দিতে না পারার জন্য কষ্ট পান। যদিও তাঁর প্যাশন থিয়েটার না সিনেমা? জিজ্ঞেস করলে, উত্তর আসে, ‘‘খাওয়া। আমি তো খাওয়ার জন্য বাঁচি।’’ সে জন্যই কি আর সিক্স প্যাক হল না? বাঙালি লেখকের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য সযত্নে তৈরি দাড়িতে হাত বোলাতে বোলাতে উত্তর দিলেন, ‘‘ভালই তো। বেঁচে গেছি। না হলে সব জায়গায় জামা খুলে দেখাতে হত।’’ খাওয়া-দাওয়ার মতোই সিরিয়াস লোকজনের পিছনে লাগতে। টুইটার থেকে শুরু করে সেট — তাঁর দুষ্টুমি থেকে রেহাই পান না কেউ, বলছিলেন যশরাজ ফিল্মসের একজন।

অর্ধেক বাঙালি তো হয়েই গিয়েছি

তবে কলকাতার ইউনিটও কম যায় না। সবাই তাঁর নাম দিয়েছেন নিশু। কোনও কারণ নেই। শুধু তাঁকে রাগানোর জন্য। তাতে কাজও হয়েছে। ‘‘আরে, চণ্ডীগড়ে এই সব নাম দেওয়া হত খ্যাপানোর জন্য। এখানে কে যে ওটা শুরু করল! আসলে বাঙালিদের তো এমনিতেই একটা করে
ডাকনাম থাকে। আর আমি তো অর্ধেক বাঙালি হয়েই গেছি। শ্যুটটা শেষ হতে হতে দেখবেন পরের ইন্টারভিউটা বাংলায় দিচ্ছি,’’ হাসতে হাসতে বলছিলেন আয়ুষ্মান।

কলকাতায় আগে অনেকবার এসেছেন। তাই তাঁর নায়িকা পরিনীতিকে শ্যুটের ফাঁকে কোথায় সেরা কষা মাংস পাওয়া যায়, কিংবা চেলো কাবাব কোথায় খেতে হবে — সেটা নিয়ে টিপসও দিচ্ছেন। ফ্লুরিজেই নাকি এই নিয়ে তিনবার আসা হয়ে গেল তাঁর। চণ্ডীগড়ে বেড়ে উঠলেও কলকাতা তাঁর প্রায় সব হিট-এ। ‘বেস্ট ডেব্যু’র পুরস্কার পাওয়া প্রথম ছবির পরিচালক বাঙালি। শেষ
ব্লকবাস্টার ছবিতে তাঁর চরিত্র
কুমার শানুর ফ্যান। দেখে ফেলেছেন ‘ওপেন টি বায়োস্কোপ’। বলছিলেন, ‘‘হবে না কেন! এখনও দেশের কালচারাল ক্যাপিটাল তো এই শহর। কত পুরনো পুরনো বিল্ডিং ছড়িয়ে আছে। শহরের এই টেক্সচারটাই আমার দারুণ লাগে।’’

‘ভিকি ডোনর’‌

বিরাটকে কার না ভাল লাগে

শহর ভাল লাগলেও কলকাতার গরম তাঁকে মাঝে মাঝেই বেশ চাপে ফেলছে। আর মনের উপর চাপ ফেলেছে ছেলের থেকে এত দিন দূরে থাকা। চার বছরের ছেলের সঙ্গে ক্রিকেট না খেলতে পারা। বলছিলেন, ‘‘এত ঘুরে বেড়াতে হয়, অনেক দিন ওর সঙ্গে ক্রিকেট খেলাটা হচ্ছে না। কলকাতার ক্রিকেট পাগলামিটাও কিন্তু মারাত্মক। আর ফুটবল। কেউ বেড়াতে এলে কলকাতার ক্রিকেট আর ফুটবলটা যেন মিস না করে। এই দু’‌টো খেলার প্রতি কলকাতার যা
প্যাশন সেটা আর কোথাও দেখিনি।’’ বিরাট কোহালির প্রতি ম্যান ক্রাশ আগেও বলেছেন। হাসতে হাসতে যোগ করলেন, ‘‘ভুরুটা দু’জনের একই রকম না! আর এখন দাড়িটাও তো একই রকম হয়ে গিয়েছে। বলুন না, কার খারাপ লাগে বিরাটকে!’’

ক্রিকেট-প্রাণ আয়ুষ্মান তাই প্যাক আপের পরেই ইডেনে। রবিবারও গিয়েছিলেন। পরের ম্যাচটাতেও যাবেন। আর ম্যাচ না থাকলে? ‘‘আইপডে আর ডি বর্মন বা ডিভিডিতে ‘গাই়ড’। আমি দেবসাবের সাঙ্ঘাতিক ফ্যান,’’ বলছিলেন আয়ুষ্মান খুরানা।

‘ওয়ান হিট ওয়ান্ডার’‌য়ের ট্যাগ ছিঁড়ে ফেলেছেন আগেই। অল্প বাজেটের ফিল্মকেও ব্লকবাস্টার করেছেন। তৃতীয় হিট কি কলকাতায় শ্যুট হওয়া এই ছবি দিতে পারবে? চণ্ডীগড়ের আয়ুষ্মান খুরানা কিন্তু আত্মবিশ্বাসী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন