শুটিং সেটে মায়েদের বসে থাকা কি সমস্যার কারণ? ছবি: সংগৃহীত।
দিতিপ্রিয়া রায় এবং জীতু কমলকে নিয়ে বিতর্কের জেরে বার বার পরোক্ষ ভাবে আঙুল উঠেছে অভিনেত্রীর মায়ের দিকে। স্টুডিয়োপাড়ার একাংশের অভিযোগ, মায়ের ‘প্ররোচনা’য় অভিনেত্রী এমন ব্যবহার করেছেন, যা হয়তো কাম্য ছিল না। এই ঘটনার পরেই একটা প্রশ্ন বার বার ফিরে আসছে, শিল্পীদের সঙ্গে যদি অভিভাবকেরা আসেন তা হলে কি তা অসুবিধাজনক?
এ ক্ষেত্রে নানা জনের নানা মত। ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক শিশুশিল্পী কাজ করে, যাদের মায়েরা অনেকেই রূপটান কক্ষে বসে থাকেন। অনেক শিশুশিল্পীর মধ্যে অনেকে তো এখন বড় হয়ে গিয়েছেন। তার পরেও যে অভিভাবকেরা আসেন না, তা নয়। এ ক্ষেত্রে প্রত্যেকেই পরিস্থিতি অনুযায়ী সবটা বিচার্য বলে জানিয়েছেন।
যেমন, টলিউডে শিশুশিল্পী হিসাবেই কাজ শুরু করেন অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা সেন। তখন প্রায় সবসময়েই তাঁর মা সঙ্গে থাকতেন। এমনকি, এখনও অনেক সময় শুটিংয়ে আসেন তাঁর মা। ঐন্দ্রিলা বলেন, “ছোটবেলায় মায়েরা সঙ্গে যাবে সেটাই স্বাভাবিক। কারণ, যে কোনও শিশুকে তার মা ছাড়া কে ভাল সামলাবে? আর মা থাকা তো সুবিধার বলে মনে হয়। কারণ, কোনও কারণে আমি যদি রেগে যাই, মাথা গরম করে ফেলি, তখন কিন্তু মায়েরাই বোঝায়, সামলায়। এই সব কিছুই হয় মেকআপ রুমে। সবার আড়ালে। তবে নজরদারির জন্যই মায়েরা শুটিংয়ে থাকে, সেটা আমি মানি না। যদিও কিছু লোকের জন্য অবশ্য সেটাই দরকার।” অন্য দিকে, পরিচালক রাজেন্দ্রপ্রসাদ দাসেরও একই মত।
শুটিং সেটে এসে মায়েরা উপদ্রব করেন, ব্যাপারটা এ ভাবে দেখছেন না রাজেন্দ্রপ্রসাদ। একসময় দিতিপ্রিয়াকে পরিচালনা করেছেন তিনি। সেই নিরিখে তিনি বললেন, “অনেক শিল্পী তাঁদের সঙ্গে সেক্রেটারি, বাউন্সার নিয়ে আসেন। তখনও তা হলে সমস্যা হতে পারে। আসলে সঙ্গে কেউ আসা, মেকআপ রুমে বসে থাকলে কোনও কিছু বলার নেই। হ্যাঁ, মা বা কোনও অভিভাবক আসার জন্য যদি কাজে ব্যাঘাত ঘটে, তা হলে তা অসুবিধার। কিন্তু আমি যখন দিতিপ্রিয়াকে নিয়ে কাজ করেছি, তখন এমন কোনও অভিজ্ঞতা হয়নি।”
‘নেতাজি’ ধারাবাহিক চলাকালীন শিশুশিল্পী অঙ্কিত মজুমদারের মা ললিতা মজুমদারও স্টুডিয়োয় এসে বসে থাকতেন। কিন্তু, তিনি জানিয়েছেন ফ্লোরে যেতেন না। কারণ, মায়ের সামনে শট দিতে অসুবিধা হয় অঙ্কিতের। অভিনেত্রী সাইনা চট্টোপাধ্যায়ের মা সংযুক্তা চট্টোপাধ্যায়েরও একই মত। তিনি বলেছেন, “সারা ক্ষণ যদি মেয়ের সঙ্গে সঙ্গে থাকি, তা হলে ও তো সিদ্ধান্ত নিতেই শিখবে না। তাই সারা ক্ষণ মেয়ের সঙ্গে কাজের জায়গায় বসে থাকার পক্ষপাতী নই আমি। বরং নিজের মতো বেড়ে উঠতে দেওয়ায় বিশ্বাসী।”
লেখিকা এবং প্রযোজক লীনা গঙ্গোপাধ্যায় প্রাপ্তবয়স্ক শিল্পীর সারা ক্ষণ মাকে শুটিংয়ে নিয়ে আসার বিষয়টিকে মান্যতা দিতে রাজি নন। তিনি বলেন, “যাঁরা চাকরি করেন, তাঁরা কি অফিসে নিজেদের মাকে নিয়ে যেতে পারেন? তা হলে এ ক্ষেত্রেই বা হবে কেন? শিশুশিল্পী হলে তো অবশ্যই অভিভাবককে আসতে হবে। সেটাই নিয়ম। কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক শিল্পী হলে অভিভাবক সঙ্গে থাকবেন সারা ক্ষণ, সেটাকে মান্যতা দিতে আমি রাজি নই।” উল্লেখ্য, এই বিতর্কের পরে অভিনেত্রী দিতিপ্রিয়া বা তাঁর মায়ের তরফে কোনও উত্তর আসেনি।