Entertainment News

‘আমার গানের চেয়ে শাড়ির আঁচল নিয়ে বেশি কথা হয় আজও’

রবীন্দ্রনাথ বেচে গান গাওয়া নিয়ে ফেসবুকের ঝগড়া থেকে ইন্ডাস্ট্রিতে সফল ভাবে বেঁচে থাকার লড়াই নিয়ে অকপট ইমন চক্রবর্তী। সামনে স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়। রবীন্দ্রনাথ বেচে গান গাওয়া নিয়ে ফেসবুকের ঝগড়া থেকে ইন্ডাস্ট্রিতে সফল ভাবে বেঁচে থাকার লড়াই নিয়ে অকপট ইমন চক্রবর্তী। সামনে স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৮ ১২:১১
Share:

‘দৃষ্টিকোণ’-এর প্রিমিয়ারের পরেই অনুপম রায়ের টেক্সট আসে, ‘তোর গানটা ভাল করছে।’

সেই কাঙ্ক্ষিত অথচ করা ফোন!

Advertisement

“একটা গান গাইতে হবে। চলে আয়।”

ফোনের ও পারে অনুপম রায়। এ পারে ইমন চক্রবর্তী

Advertisement

অনুপম রায়ের ফোন এলেই আজও কেমন জানি এক পুলক জাগে তাঁর। মনে হয় আবার কিছু ঘটবে! আবার ‘স্নানের ঘরে বাষ্পে ভাস’।

সেই অজানা উদ্বেগ নিয়ে সোজা স্টুডিয়োয় পৌঁছন তিনি।

“অনুপমদা পরিষ্কার বলে দিল, এই গানটা গা, কিন্তু না-ও থাকতে পারে। ‘মানে আবার ঋতুপর্ণা, আবার প্রসেনজিৎ, আবার অনুপম রায়, ব্যথার গান। তুই টাইপকাস্ট হয়ে যাবি’, বলেছিল অনুপমদা’ সেই গান ছিল ‘আমার দুঃখগুলো’, আজ ইউটিউবে যা ট্রেন্ডিং, লাইকের সংখ্যা যার লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। অভিভূত ইমন!

প্রথমে ভেবেছিলেন গানটা হয়তো নেই। কারণ, সুরিন্দর ফিল্মসের পেজ থেকে রূপঙ্করের গান, পালোমার গান দেওয়া হয়েছে। তাঁর গান তখন সামনে আসেনি। সদ্যই ‘ঘরে অ্যান্ড বাইরে’-তেও একটা রবীন্দ্রনাথের গান ইমন রেকর্ড করেছিলেন, কিন্তু ব্যবহার করা যায়নি। সে নিয়ে তাঁর কোন অভিযোগ নেই, বরং বললেন, “অনুপমদা জানিয়ে দেয় আমায় গানটা থাকল কি না। এত পরিষ্কার এক জন মানুষ, কাজের ক্ষেত্রে খুব সুবিধা হয়,” যোগ করলেন ইমন।

তিনি জানেন, সময়টা বদলাচ্ছে। বেশির ভাগ গান এখন ব্যাকগ্রাউন্ডে ব্যবহার করা হয়। বাংলা ছবিতে লিপে গান খুব একটা থাকে না।

আরও পড়ুন, সোনমের হবু বর, কে এই আনন্দ আহুজা?

‘দৃষ্টিকোণ’-এর প্রিমিয়ারের পরেই অনুপম রায়ের টেক্সট আসে, ‘তোর গানটা ভাল করছে।’ ‘দৃষ্টিকোণ’-এর পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় ফোন করেন। কাছিমের দুঃখ তখন থেকেই সকলের দুঃখ হয়ে ফেরে। দু’দিনের মধ্যে ট্রেন্ডিং নয়ে চলে যায়।

সাফল্য আসলে কী? “ফিল্ম মিউজিকে ট্রেন্ডিং হওয়া খুব সহজ। প্রাক্তনের ‘তুমি যাকে ভালোবাস’ ইতিহাস তৈরি করেছে। আমি মেদিনীপুরে গানটা গাইলেও সকলে গায়, আবার লস অ্যাঞ্জেলেসে গাইলেও সবাই গেয়ে ওঠে। আর ‘দৃষ্টিকোণ’ এত বড় মাপের ছবি। দুর্দান্ত কাস্টিং। এটা ফিল্ম মিউজিক বলেই সম্ভব। কিন্তু প্রাইভেট মিউজিকের জায়গা আজও টেনশনের জায়গায় দাঁড়িয়ে। ওই জায়গাটা কী হবে জানি না!” গলায় চিন্তা নিয়ে বললেন ইমন।

“গুপ্তধনের সন্ধানে’-তে ‘রাঙিয়ে দিয়ে যাও’ আর ‘দৃষ্টিকোণ’, দুটো ছবিতেই তাঁর গান। সামনের দিকে তাকালে দেখা যাবে, সব বাংলা ছবিতেই তাঁর গান। এ মাসেই মুক্তি পাচ্ছে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের ‘সোনার পাহাড়’। রাজর্ষিদার ‘শুভ নববর্ষ’-তে ইন্টারেস্টিং গান গেয়েছি। জয় সরকারের সঙ্গে কাজ করেছি যেখানে শানের সঙ্গে ডুয়েট গেয়েছি। এ ছাড়াও দেবারতি গুপ্তর ‘আবার আসব ফিরে’, আর রাতুল শঙ্করের সঙ্গে কাজ করেছি।” মনে করে বললেন, ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত আর জিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ছাড়া সকলের পরিচালনায় গান গাওয়া হয়ে গিয়েছে তাঁর।


সামনের দিকে তাকালে দেখা যাবে, সব বাংলা ছবিতেই ইমনের গান।

তবুও মন খারাপ, ফ্রাস্ট্রেশন!

কেন?

“নিজের সঙ্গে নিজের লড়াই। আরও ভাল গান গাওয়ার। জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার পর দায়িত্ব অনেক বেড়ে যায়। আসল লড়াই শুরু হয়। আমার জানা অনেক কম, বেশি জানতে হবে। আমার পরিবার খুব সাধারণ, অনেক সময় বাবা-ই বুঝতে পারছে না হয়তো, কেন রাত তিনটে অবধি সাদা পাতা নিয়ে বসে আছি? আমি তখন শব্দ ফোটাতে চাইছি! আর একটা কথা, অন্য দিকে বাংলা ছবিতে গানের সংখ্যাও তো কমছে।’’

রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী থেকে মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে রাজ করা। এত পাওয়ার মধ্যে অনেক বেদনা আছে।

আপনার গানের চেয়ে পোশাক নিয়ে বেশি কথা হয়।

“জানি না কেন? অনেক লড়াই করে ওঠা। ত্রিপুরায় ‘যদি তোর ডাক শুনে’ আর ‘হরি নাম দিয়ে জগত মাতালে’ দুটো গানের সঙ্গে আমি নেচে গেয়েছিলাম। তার জন্য এক জন নাম করা নৃত্যশিল্পী আমায় বললেন, আমি নেচে নেচে রবীন্দ্রনাথ বেচে খাচ্ছি! আশ্চর্য! ফেসবুক তোলপাড় হল। রবীন্দ্রনাথকে আমরা না বড্ড আটকে রেখেছি। বা খুব এক্সপেরিমেন্ট করার নামে হয়তো মানায় না এমন গানের সঙ্গে জ্যাজ বাজিয়ে ফেলছি। এটার কোনওটাই সমর্থনযোগ্য নয়। আর আমার যা ইচ্ছে হবে তাই পরে গান গাইব। বেশ করব। আমার পোশাক নিয়ে কেউ কথা বললে মানবো না!” উত্তেজিত ইমন।

আরও পড়ুন, নাসিরুদ্দিনের জীবনের আশায় সোনু নিগমের জাদু!

নিজেই মেনে নিলেন একলা মেয়ে, আবেগের মেয়ে, জেদী মেয়ে, সাফ কথা বলার মেয়ে বলেই তাঁর গানের চেয়ে শাড়ির আঁচল তিনি কী ভাবে নেন সেই নিয়ে মানুষ আলোচনা করে বেশি! এটাও শিল্পী হিসেবে তাঁর যন্ত্রণার জায়গা।

আর শোভন? বিয়েটা কবে হবে? “আমি ছেলে বন্ধুদের সঙ্গে বেশি হোয়াটসঅ্যাপ করলে শোভন বলে, ‘এ বার থাম’। জীবনে কিছু তো প্ল্যান করে করিনি, বিয়েটাও হুট করেই হবে।’’

চুপ চারিদিক সব। “তুমি আমি মুখোমুখি নীরবতা পালনের গান।”

নিজের স্বপ্ন খুলে ফেলেন ইমন। রবীন্দ্রসদনে স্পটলাইটে গীতবিতানের পাতা উল্টে যে কোনও গান একের পর এক গেয়ে যাওয়ার স্বপ্ন!

তাঁর দুঃখগুলো ঝাপ্টায় ডানা...সুনীল আকাশের খোঁজে তিনি!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন