Amartya Roy

বান্ধবীদের সঙ্গে আমার ঝগড়ার পর রাগ ভাঙাতে মা তাদের খাওয়াতে নিয়ে যান: অমর্ত্য রায়

অভিনয়, গান, ফুটবলে অনায়াস অমর্ত্য রায় আর ‘ময়দান’-এ ‘মারাদোনার জুতো’য় পা গলিয়ে কী কী করলেন?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২১ ১৯:৫৫
Share:

অমর্ত্য রায়।

রাজনন্দিনী পালের সঙ্গে খুনসুটি। সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়কে ‘ভেজা চুমু’! অভিনয়, গান, ফুটবলে অনায়াস অমর্ত্য রায় আর ‘ময়দান’-এ ‘মারাদোনার জুতো’য় পা গলিয়ে কী কী করলেন?

প্রশ্ন: অমর্ত্য ফুটবলময়?

অমর্ত্য:
একদম। অমিত শর্মার ‘ময়দান’ ছবিতে বছর ২২-এর চুনি গোস্বামী। মৈনাক ভৌমিকের আগামী সিরিজ ‘মারাদোনার জুতো’তেও অভিনয় করছি। দুটোরই কেন্দ্রে ফুটবল।

প্রশ্ন: কোনও দিন বলে পা ছুঁইয়েছেন?

অমর্ত্য:
ছোট থেকে খেলাধুলো করতাম। দক্ষিণ কলকাতার ছেলে। লেকে অনেক স্থানীয় ক্লাব আছে। সেখানে স্কুল থেকে ফিরে খেলতে যেতাম। এখনকার বাচ্চারা খেলাধুলো তো প্রায় ভুলেই গিয়েছে।

প্রশ্ন: মোহনবাগান না ইস্টবেঙ্গল?

অমর্ত্য:
আমি মোহনবাগান সাপোর্টার। আমার মা চৈতি ঘোষাল ইস্টবেঙ্গল। ২ দলের খেলা হলে বাড়িতে এখনও ধুন্ধুমার বাধে। যদিও এই নিয়ে পাগলামি নেই। তবে বিশ্বকাপের সময় আমরা উত্তেজনায় টগবগিয়ে ফুটি। আন্তর্জাতিক স্তরে ইংলন্ডের ভক্ত। ডেভিড বেকহ্যাম বলতে অজ্ঞান। আর আমার বাবা ব্রাজিলের অন্ধ সমর্থক। ছোট বেলায় এক বার ইংলন্ড বনাম ব্রাজিলের ম্যাচ দেখছি। ব্রাজিল জিতছে। আর আমি রাগের চোটে কিচ্ছু না বুঝে বাবাকে ছোট্ট ছোট্ট মুঠিতে ঘুসি মেরেই চলেছি।

প্রশ্ন: প্রথম ছবি ‘২২ ইয়ার্ডস’। ক্রিকেট থেকে ফুটবলের দুনিয়ায় কী ভাবে?

অমর্ত্য:
আমি পুণের এইটিআই-তে পড়ছি। সেই সময় কোনও কারণে কলকাতায়। এক দিন হঠাৎ করেই মুকেশ ছাবরার টিম ফোন করে। ওঁরা ‘ময়দান’ ছবির জন্য সারা দেশ থেকেই অভিনেতা খুঁজছিলেন। আমায় জানান, ১৯৬২-র গল্প নিয়ে অজয় দেবগনের একটি ছবি হচ্ছে। সেখানে চুনি গোস্বামীর চরিত্রের জন্য আমাকে বাছা হয়েছে। আমি রাজি? অজয় দেবগন, চুনি গোস্বামী আর ফুটবল---এই ৩টে কানে আসতেই চোখকান বুজে হ্যাঁ বলে দিই। মুম্বইতে অডিশন দিয়ে পাশ করতেই হাতে স্বর্গ।

প্রশ্ন: আপনার মুখের সঙ্গে ২২ বছরের চুনি গোস্বামীর মুখের মিল আছে?

অমর্ত্য:
আমি যখন নির্বাচিত হই তখন আমার লম্বা চুল। মুখে হাল্কা দাড়ি, গোঁফ। সেই চুল কেটে ১৯৬২ সালের পোশাক, মেকআপ করিয়ে আমার ফোটশ্যুট করা হয়। তার পর ওই সময়ের কিংবদন্তি ফুটবলারের ছবি আর আমার ছবি পাশাপাশি রাখতেই ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। এত মিল আমাদের চেহারায়, নিজেরই ধারণায় ছিল না।

প্রশ্ন: বাকি ৫০ শতাংশ হতে কী করলেন?

অমর্ত্য:
ওঁর খেলার কিছুটা আয়ত্তে আনতে মু্ম্বইয়ে প্রশিক্ষণ চলেছে মাসের পর মাস। রোজ ভোর সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে ওঠা। ৭টার মধ্যে মাঠে গিয়ে ফুটবল খেলা। সন্ধেবেলায় জিমে গিয়ে শরীরচর্চা। নিয়মমাফিক খাওয়াদাওয়া, চুনি গোস্বামীর মতো বল পায়ে ড্রিবলিং করা---শিখতে হয়েছে। তা ছাড়া, পড়াশোনা তো ছিলই। প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পর দেখলাম, আমরাই এক এক জন সেমি ফুটবলার তৈরি হয়ে গিয়েছি। একটাও দৃশ্য ‘চিট’ করা হয়নি। পরিচালক অমিত শর্মা বলেই নিয়েছিলেন, শ্যুটিংয়ে পাকা ফুটবলারের মতো ৪ জন রক্ষণাত্মক খেলোয়াড়কে কাটিয়ে আমাকে গোলে বল ঢোকাতে হবে।

প্রশ্ন: স্বজনপোষণ নয়, বলিউডে জায়গা পেতে তা হলে মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয়?

অমর্ত্য:
কথাটা ১০০ শতাংশ খাঁটি। মুম্বই পরিশ্রমের দাম দেয়। তার আগে নিংড়ে নেয়। বিশাল প্রযোজনা সংস্থা। ঝাঁ চকচকে ছবি। তার নেপথ্য কাহিনি কেমন, একটা ছবি করেই বুঝে গিয়েছি। আক্ষরিক অর্থেই আমি রক্ত, ঘাম ঝরিয়েছি। শ্যুটিং করতে গিয়ে নাক ফেটে গিয়েছিল। পা মচকে গিয়েছিল। টেপ বেঁধে ফুটবল খেলেছি। আর পুরনো আমলের জুতো পরে মাঠে নামা! রোজ পায়ের পাতা ছড়ে যেত। তাও দাঁতে দাঁত চেপে করে গিয়েছি। নিখুঁত হওয়ার নেশা চেপে গিয়েছিল।

প্রশ্ন: শ্যুটের সময় এক বারও আফসোস হয়নি, বাংলার কোনও পরিচালক আজও চুনি গোস্বামীকে নিয়ে কিছু ভেবেই উঠতে পারলেন না?

অমর্ত্য:
(একটু থেমে) আমি বরং ইতিবাচক দিকটা দেখি? চুনি গোস্বামীর মতো খেলোয়াড়কে জাতীয় স্তরে পৌঁছে দেওয়া দরকার। এই ছবি সেটা দেবে। তাই কোনও আফসোস নেই। তাছাড়া, প্রযোজক ফ্রেশলাইম প্রোডাকশনসের একজন অংশীদার জয় সেনগুপ্তের মাথা থেকে এই ছবির ভাবনা এসেছে। আমিও বাঙালি। বাংলার ছোঁয়া রইলই।

প্রশ্ন: চুনি গোস্বামীর কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছিলেন?

অমর্ত্য:
ওটাই হয়নি। মুম্বইয়ে টানা থাকতে হত বলে কলকাতায় সেই সময় আসতে পারিনি। খুব ইচ্ছে ছিল, ছবি মুক্তির আগে আলাপ করব। ওঁকে নিয়ে ছবিটা দেখব। সেটাও হল না। গত বছর উনি চলে গেলেন।

প্রশ্ন: অজয় দেবগন কেমন?

অমর্ত্য:
উনি এই ছবিতে কোচ সৈয়দ আবদুল রহিমের ভূমিকায়। আমার সঙ্গে একাধিক দৃশ্যে অভিনয় করেছেন। ওঁকে চিনতে ২টো গল্প বলি? ২০১৯-র ডিসেম্বর। আমরা মুম্বইয়ের মাঠে শ্যুট করছি। খেলতে খেলতে আচমকাই আমি পড়ে যাই। হাঁটুতে বিচ্ছিরি চোট পাই। সে দিন সবার আগে অজয় দেবগন আমাকে সামলাতে ছুটে এসেছিলেন। জানতে চেয়েছিলেন, ‘‘তুই ঠিক আছিস?’’ প্রাথমিক শুশ্রূষায় সাহায্য করেছিলেন। না করলেও পারতেন এতটা। এমনিতে অজয় স্যার ভীষণ চুপচাপ, শান্ত প্রকৃতির। তবে মাঝেমধ্যে আমাদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন। হাসি-ঠাট্টাও করতেন। এই বছর একটি দৃশ্যে আমি, অজয় স্যার আর এক জন ছিলাম। খুব সংবেদনশীল দৃশ্য। সে দিন স্রেফ চোখের চাউনি দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, উনি কেন আজও সেরা। ওঁর অভিনয় দেখে আরও ভাল অভিনয়ের অনুপ্রেরণা পেয়েছি।

প্রশ্ন: এই ছবিতে অভিনয়সূত্রে অতিমারিতে বিধ্বস্ত বলিউডকেও দেখলেন?

অমর্ত্য:
গত বছর সেটা দেখতে পাইনি। চলতি বছরে দেখলাম। শ্যুট চলতে চলতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আচমকা আছড়ে পড়ল বলিউডে। ঠেকাতে বিশাল কড়াকড়ি সেট জুড়ে। অনুমতিপত্র ছাড়া ভিতরে ঢোকা যেত না। তাপমাত্রা পরীক্ষা করে স্যানিটাইজ করে তার পরে সেটে যাওয়া। প্রত্যেক বিভাগের জন্য আলাদা তাঁবু ছিল। অভিনেতাদের জন্য আলাদা তাঁবু। দুটো শটের মধ্যে মাস্ক পরে থাকতে হত। খাওয়ার আলাদা তাঁবু। তার পরেও অতিমারি ঠেকানো সম্ভব হয়নি। অগত্যা আবারও শ্যুটিং বন্ধ।

প্রশ্ন: চুনি গোস্বামী বাংলার মেয়েদের ‘ক্রাশ’ ছিলেন। অমর্ত্যও তাই?

অমর্ত্য:
(হেসে ফেলে) আমি এখনও একা। বন্ধু-বান্ধবী আছে। মা জানেন সে সব। এমনও হয়েছে, আমার সঙ্গে বান্ধবীদের ঝগড়া হয়েছে। মা তাদের রাগ ভাঙাতে সবাইকে নিয়ে রেস্তরাঁয় খেতে গিয়েছেন। তবে এখনও ‘বিশেষ কেউ’ নেই।

Advertisement

প্রশ্ন: রাজনন্দিনী আপনার প্রতিবেশী?

অমর্ত্য:
হ্যাঁ প্রতিবেশী। ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে থাকে। ‘উড়নচণ্ডী’ ছবিতে অভিনয়ের সময় থেকে খুব ভাল বন্ধু আমার। এখনও সেই বন্ধুত্বটা আছে। আমরা একে অন্যের ভীষণ পিছনে লাগি।

প্রশ্ন: এ দিকে সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়কে ভেজা চুমু খেয়ে ফেললেন!

অমর্ত্য:
(হাসতে হাসতে) পুরোটাই ‘মারাদোনার জুতো’র চিত্রনাট্যের খাতিরে। তার আগে পরিচালক মৈনাকদা সেটে এসে প্রচণ্ড মজা করেছিলেন আমাদের সঙ্গে। যাতে আড়ষ্টতা না থাকে। ওই করতে করতেই দেখলাম দৃশ্যটা হয়ে গেল (আবার হাসি)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন