ঘ্যানঘেনে পরকীয়া লিখতে পারব না

পরিবার, প্রেম নয়। রহস্যের মধ্যেই নিজের ভাবনা খেলাতে চান চিত্রনাট্যকার পদ্মনাভ দাশগুপ্ত। মুখোমুখি স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়পরিবার, প্রেম নয়। রহস্যের মধ্যেই নিজের ভাবনা খেলাতে চান চিত্রনাট্যকার পদ্মনাভ দাশগুপ্ত।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:০১
Share:

ছবি: কৌশিক সরকার।

আনন্দplus অরিন্দম শীলকে চিত্রনাট্য লিখতে বলায় আপনি নাকি বেজায় চটেছেন?

Advertisement

খামোখা চটতে যাব কেন?

Advertisement

তা হলে ফেসবুকে লিখলেন কেন অরিন্দম শীলকে এবার ‘কেটারিং’ করতে হবে?

আনন্দplus-এর সেরা পাঁচ পরিচালকের লেখাটিতে বলা হয়েছিল পরিচালক অরিন্দম শীলের এ বার চিত্রনাট্যটা লেখা উচিত। সেই মন্তব্য থেকেই মজা করে ওকে ফেসবুকে লিখেছিলাম ইন্ডাস্ট্রিতে এ বার থেকে পরিচালককেই চিত্রনাট্য লিখতে হবে। দরকার হলে গানে সুরও দিয়ে দিতে হবে।

টলিউডে দশ জন পরিচালকের মধ্যে আটজনই নিজেরা স্ক্রিপ্ট লেখেন। আপনার প্ল্যানিংটা কী?

পরিচালক আর চিত্রনাট্যকার— খুব ডেডলি কম্বিনেশন। আমার বলতে কোনও দ্বিধা নেই যে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো চিত্রনাট্যকার আমি নই। হতে পারবও না। খুব নামী চিত্রনাট্যকার হব, প্রচুর পুরস্কার পাব, এ রকম বড় কোনও স্বপ্ন কোনও দিন দেখি না।

ভূত, গোয়েন্দা ছেড়ে ইন্ডাস্ট্রিতে পরিবারের গল্পই এখন হটকেক। আপনি এ রকম পারিবারিক কিছু গল্প ভাবছেন?

(আঁতকে উঠে) ওরেব্বাবা। পরিবার আর প্রেম— এ দু’টো আমাকে দিয়ে হবে না।

কেন?

দেখুন, বনেদি পরিবারের নানা চরিত্র নিয়ে আমি লিখতে পারি। কিন্তু সেখানে ট্যুইস্টটা কী ভাবে আনব? শুধু পরিবারের গল্প বলে গেলেই তো হল না। নতুন কী দেব?

‘ওপেন টি বায়োস্কোপ’ দেখেছেন?

হ্যাঁ, ওটা একদম আমাদেরই গল্প। যেমন ‘পিকু’টা আমার বাবার গল্প।

আর ‘বেলাশেষে’? অমিতাভ বচ্চনও তো ট্যুইট করেছেন।

এখনও ছবিটা দেখা হয়নি। তবে শিবপ্রসাদ-নন্দিতা সহজ ভাবে গল্পটা বলতে পারে যেটা দর্শকের পছন্দ।

বেশ, পরিবার না-হয় বাদ দিলাম। কিন্তু প্রেম? আপনার কলমই তো খুনের মধ্যে থেকে প্রেমের রহস্য বের করে আনে...

রহস্যের মধ্যে প্রেম এলে আপত্তি নেই। কিন্তু শুধু প্রেম বেশ একটা ক্রাইসিসের ব্যাপার। একটি ছেলে একটি মেয়ের পেছনে ছুটছে। ফাইনালি ছেলেটা মেয়েটাকে পেল। তার পর কি আর একটা প্রেম? ওই ঘ্যানঘেনে পরকীয়া আমি লিখতে পারব না।

ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকতে গেলে প্রচুর স্ট্রাগল করতে হয়। ‘লড়াই’ থেকে ‘এবার শবর’— এই একটানা কাজ পাওয়ার রহস্যটা কী?

রহস্য নেই। আমার পিআর অসম্ভব খারাপ। কেমিস্ট্রি নিয়ে পড়ে সরকারি চাকরি করতে করতে কোনও দিন ভাবিনি চিত্রনাট্য লিখব। সৌমিক চট্টোপাধ্যায়ের সিরিয়ালে হঠাৎ একদিন বলা হয় দু’টো সিন লিখে দিতে। জোরাজুরিতে লিখতে হয়। খরাজদা খুব প্রশংসা করেছিলেন লেখাটার। তার পর একশো এপিসোড।

কিন্তু আপনার বাড়িতে বাইকে করে আসা এক পরিচালকের কথা বলবেন না? সেই তো আপনার জীবনের মোড়টা ঘুরিয়ে দিয়েছিল...

সেটা বেশ অদ্ভুত ছিল। একজন ভদ্রলোক বাইক থেকে নেমে বললেন, ‘‘নমস্কার, আমার নাম রাজ চক্রবর্তী। আমি ছবি করতে চাই। আপনি লিখুন।’’ আসলে রাজ চক্রবর্তী, সুদেষ্ণা রায়-অভিজিৎ গুহদের সঙ্গেই আমার প্রথম দিকের কাজ। ওঁদের সঙ্গে সঙ্গে আমিও এগিয়েছি। তাই কাজ পেতে আলাদা করে স্ট্রাগল করতে হয়নি।

‘টংলিং’-এর সাতটা ড্রাফ্ট লিখে ফেলেছেন? ছবিটা কবে হবে?

গত সাত বছর ধরে রাজের সঙ্গে প্রচুর কথা হয়েছে। কিন্তু আজও প্রযোজক পাওয়া গেল না।

পরমব্রতর কাছেও আপনার একটা চিত্রনাট্য দেওয়া আছে?

ও হ্যাঁ। ‘পলাশের বিয়ে’। এটা কিন্তু একটা পরিবারেরই গল্প।

সফল চিত্রনাট্যকার— এই সাফল্যের জার্নি সত্ত্বেও আজও আপনার কাছে তো ‘জাতিস্মর’, ‘শব্দ’-এর মতো ছবি আশা করা হয় না...

একদম ঠিক। সৃজিতের প্যাকেজিংটা দারুণ। ওর মধ্যে একটা ম্যাজিক আছে।

মেগাসিরিয়াল লিখতে গিয়েছিলেন কেন?

সত্যি, সিরিয়াল লেখায় আমি ডাহা ফ্লপ। ‘কানামাছি’টা লিখেছিলাম একটাই শর্তে। যতক্ষণ সিরিয়ালটায় রহস্যটা ছিল ততক্ষণ লিখেছি। তার পর সরে এসেছি। ওটার জন্য আলাদা কোয়ালিটি লাগে।

শবরের কি সিকোয়েল হবে?

হ্যাঁ সেটা তো হবেই। তবে আনন্দplus-এর ওই সুপার ফাইভ অ্যাক্টর, আবির, পরম, ঋত্বিক, শাশ্বত, যিশুকে নিয়ে আমি একসঙ্গে একটা ছবিতে অভিনয় করাতে চাই।

শবর আর ব্যোমকেশের বাইরে অভিনেত্রীদের নিয়ে কিছু ভাবছেন না?

ঠিক কী বলব বুঝতে পারছি না। সোহিনী সরকার ভাল কাজ করছে। অঞ্জনা বসুও।

পরিচালনা করলেও তো সাহিত্য থেকে নেবেন। কিন্তু এখন তো বাংলা সাহিত্যে ভাটা।

এটা ভাবলে স্তব্ধ হয়ে যাই। চিন্তা হয়। তবে এটাও জানি হঠাৎই একদিন ঝুপ করে আমার লেখা থেমে যাবে। আমিও ফুরিয়ে যাব। তবে থামার আগে আগাথা ক্রিস্টির রহস্যকে বাংলা সেলুলয়েডে ফিরিয়ে আনতে চাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন