Entertainment News

রণবীরের চোখেই পদ্মাবতের ক্লাইম্যাক্স

যে ছবির মুক্তি ঘিরে দেশ জুড়ে বিতর্ক সেই ছবি তৈরির নানা অজানা কথা নিয়ে মুম্বই থেকে ফোনে আনন্দবাজার ডিজিটালের সঙ্গে আড্ডা দিলেন ছবির ভিজুয়ালাইজার সুদীপ চট্টোপাধ্যায়। দীপিকা থেকে রণবীর সকলের প্রসঙ্গই উঠে এল আড্ডায়। সামনে স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়যে ছবির মুক্তি ঘিরে দেশ জুড়ে বিতর্ক সেই ছবি তৈরির নানা অজানা কথা নিয়ে মুম্বই থেকে ফোনে আনন্দবাজার ডিজিটালের সঙ্গে আড্ডা দিলেন ছবির ভিজুয়ালাইজার সুদীপ চট্ট্যোপাধ্যায়। দীপিকা থেকে রণবীর সকলের প্রসঙ্গই উঠে এল আড্ডায়। সামনে স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৮ ১৯:৪২
Share:

‘পদ্মাবত’-এর একটি দৃশ্যে রণবীর। ছবি: ইনস্টাগ্রামের সৌজন্যে।

ড্রাইভ করতে করতে স্পিকার অন করে ইন্টারভিউ দেন তিনি। ওটাই যে তাঁর নিজের সময়! বাকি সব সময়টাই আপাতত ‘পদ্মাবতী’-কে দেওয়া। পরশু ছবির কলাকুশলীদের নিয়ে ‘পদ্মাবতী’-র স্পেশাল স্ক্রিনিং হয়েছে। সকলেই ছবি দেখে আবেগতাড়িত! আর আজ ইন্ডাস্ট্রির বন্ধুদের নিয়ে ছবিটা দেখবেন বলে ঠিক করছেন। তিনি। সিনেমাটোগ্রাফার সুদীপ চট্টোপাধ্যায়। জীবনের পঁচিশ নম্বর ছবি মুক্তির দিনে সকালে মুম্বই থেকে ফোনে তাঁকে নার্ভাস লাগল! সত্যিই কি তাই?
‘‘প্রায় দুশো কুড়ি দিনের শ্যুট নিয়ে পদ্মাবতী তৈরি। এ ছাড়া প্রি-পোস্ট প্রোডাকশন তো আছেই। এটার মধ্যে ডুবে যেতে যেতে মনে হয় সকলের ছবিটা দেখার পর কেমন লাগবে? তবে এত দিন কাজ করে এটুকু বলতে পারি ছবিটা মানুষ উপভোগ করবেন।’’
‘পদ্মাবত’ নিয়ে দেশ জুড়ে বিতর্কের দিকে না গিয়ে বললেন, ‘‘ছবির নাম বদল হল। এ বার ছবিটা দেখুক সকলে। আমাদের সকলের অনেক যত্নের ছবি! ‘পদ্মাবত’-এর জন্য বিশাল সেট তৈরি হয়েছিল৷ এমনও দিন গিয়েছে যে একসঙ্গে হাজার লোক কাজ করছেন৷’’
২০১৯-এর আগে তাঁর কোনও ‘ডেট’ নেই৷ ‘পদ্মাবত’, ‘বাজিরাও-মস্তানি’, ‘ডোর’, ‘চক দে ইন্ডিয়া’, ‘গুজারিশ’, ‘কামিনে’, ‘ধুম ৩’— আরও তাবড় সব ফিল্মে রয়েছে তাঁর রং, রেখার বর্ণিল জাদু৷ আসলে রঙের মায়াজালে তিনি দৃশ্যে মুগ্ধতার জন্ম দেন।
সুদীপ জানালেন, তিনি ‘পদ্মাবতী’-কে ছোটবেলার অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘রাজকাহিনী’ দিয়ে অনুভব করেছেন তিনি। ওই টেক্সটেও তো চিতোর কী বর্ণময়!

Advertisement

‘‘অবন ঠাকুরের সেই রানি পদ্মিণীর রূপের যে ব্যাখ্যা রয়েছে তা মুগ্ধ করেছিল আমায়। দীপিকাকে যখন দেখছি ‘পদ্মাবত’-এ, মনে হয়েছে কেবলমাত্র সৌন্দর্য নয়, ওঁর শক্তি, শিক্ষা, নীরব তেজ দিয়ে ও পদ্মাবতীর ক্ষমতায়ন করেছে। দীপিকা ভীষণ জেনুইন।’’ যোগ করলেন সুদীপ।


‘পদ্মাবত’-এর ভিজুয়ালাইজার সুদীপ চট্টোপাধ্যায়

Advertisement

আত্মসম্মান, মর্যাদা আর জাতির জন্য মানুষ নিজের জীবন দিয়ে দিতে পারে— এই বিষয় তাঁকে বার বার ভাবিয়েছে। যেমন ভাবিয়েছে রণবীরের চোখ।’’ চোখ দিয়ে একটা মানুষ তাঁর লালসা, ক্রড়তা, ঈর্ষা, ঘেন্না, সব বুঝিয়ে দিচ্ছে। রণবীরের চোখে আলো ফেলতে গিয়ে বহু নতুন আলোর দিক তৈরি করতে হয়েছে আমায়। ছবির ক্লাইম্যাক্স ওর চোখে ভরা আছে। আলাউদ্দিন খিলজির চরিত্রটার মধ্যেই নানা কনফ্লিক্ট। সেগুলোই ভিসু্য়ালি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি৷ আমি প্রিপ্রোডাকশনের জন্য ছ’মাস সময় নিয়েছি৷ কী রকম লুক হবে, কাপড়ের টেক্সচার কেমন হবে, কালার প্যালেট কেমন হবে— সব খুব রিসার্চ করে বানানো৷ তাই মনে হয় দর্শকদের ভালো লাগবে৷’’ আবেগ সুদীপের গলায়। রণবীরের বৈপরীত্যে দাঁড়িয়ে শাহিদ কপূর।’’ ছবিতে ওর স্থির দৃঢ়তা, রাজপুতের জোশ আমায় অবাক করেছে।’’ গাড়ি চালাতে চালাতেই বললেন সুদীপ।

আরও পড়ুন, মুভি রিভিউ: আরও একটা ‘বিগ বাজেট’, আরও একটা ‘ম্যাগনাম ওপাস’

ভিস্যুয়াল ফ্যান্টাসি নিয়ে পরিচালক সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে তাঁর মনে হয়েছিল ইতিহাসকে ছবির বিশালতার মধ্যে নানা ধাঁচের আলোর মাঝে দেখাতে হবে। ‘‘পিরিয়ড ফিল্ম, তাই আলোর ক্ষেত্রে সে সময় প্রদীপ, মশাল, সাদা থার্মোকলে কালো কাপড় জড়িয়ে প্রাচীন আলোর এক অদ্ভূত মায়াময় পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করেছি’’, জানালেন সুদীপ। ছবি জুড়ে যেমন তাঁর গভীর আলোর হাতছানি, তেমনই নরম রঙের খেলা!
আসলে ছবি তাঁর কাছে প্রতিমা তৈরির মতোই। ‘‘সিনেমাটোগ্রাফি আর ভিএফএক্সে এখন তো আমরা শুধুমাত্র ফ্লোর ফোটোগ্রাফিতে আটকে নেই৷ আগে যা শ্যুট হত, তাই দেখানো হত৷ এখন কিন্তু তা হয় না৷ অনেক ভিস্যুয়াল এফেক্ট, কালার কারেকশন থাকে৷ অনেকেই আবার এই নিয়ে আপত্তি করেন৷ আমি কিন্তু মনে করি এটা ভাল ব্যাপার৷ কারণ সিনেমাটোগ্রাফিটাও আমি করছি আবার ভিস্যুয়াল এফেক্টটাও আমিই দিচ্ছি৷ তাই নিজেকে আর সিনেমাটোগ্রাফার না বলে ভিস্যুয়ালাইজার বলাই ভাল৷’’ খড় দিয়ে, মাটি দিয়ে, বাঁশ দিয়ে সব শেষে প্রতিমায় চক্ষুদান।


ছবির একটি দৃশ্যে দীপিকা।

‘পদ্মাবতী’-তে ধুলোর ঝড় যখন দীপিকার বুকের মাঝে তোলপাড় করে তখন সুদীপ ছবিতে মাখিয়ে দেন এক মুঠো ফ্যাকাশে হলুদ রং, দুর্যোগের মধ্যেও যা সাহসের আলো জ্বালিয়ে রাখে। পদ্মাবতী যখন হিংস্র আলাউদ্দিনের মহলে ভোর হয়ে আসেন তখন সুদীপের ক্যানভাসে চাঁদ মাখা আলো লেগে থাকে।
‘‘সঞ্জয়ের সঙ্গে কাজ করাই একটা চ্যালেঞ্জ! ও আরম্ভই করে বেস্ট-এর বেশি কিছু দিয়ে। সেখানে নিজের ভালর অতিরিক্ত কিছু দিতে হয়৷ এটা খুব শক্ত। কিন্তু এখান থেকেই নিজেকে ভাঙা যায়। অন্য কিছুর চমক আনা যায়! এই ফিল্মে অনেক সময়েই আমি রাতে আলো করে ডে-লাইট তৈরি করেছি৷ কারণ স্বাভাবিক আলোয় হয়তো নানা সমস্যা ছিল৷ সেই সময়টা কেমন ছিল, তখনকার জামাকাপড় কেমন ছিল, খাবার কেমন ছিল, কেমন বাড়িতে তারা থাকত— পুরো বিষয়টা রিক্রিয়েট করা কিন্তু সহজ নয়৷ আর সেটাই মনে হয় ফিল্মটার ইউএসপি৷’’ উচ্ছ্বসিত তিনি।
মনের মধ্যে কোথাও একটা ছবি পরিচালনা করার ইচ্ছে হয়তো রয়েছে৷’’ এখনও সময় আসেনি। সিনেমাটোগ্রাফিটাই করে যেতে চাই মন দিয়ে৷ এখনও মনে হয় তেমন কিছুই করে উঠতে পারিনি। এই তো অনুরাগ কাশ্যপ, ইমতিয়াজের সঙ্গে যখন আবার ‘পদ্মাবত’ দেখব মনে হবে ইশ্শ্ আবার যদি ছবিটা করা যেতো!’’

বলিউড-টলিউড-টেলিউডের হিট খবর জানতে চান? সাপ্তাহিক বিনোদন সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

তাঁর ফিল্মের প্রতি একটা ব্লান্ট অ্যাপ্রোচ রয়েছে৷ এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি৷ স্ক্রিপ্ট পড়ে যে ছবি দেখতে পেয়েছেন, তাই প্রথমে পরিচালক সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন। যোগ করলেন, ‘‘এতে চোখের সামনে একটা ছবি তৈরি হয়৷ তারপর সেইমতো কাজটা নিয়ে এগোই। ‘পদ্মাবত’-এর ট্রেলার খুব জনপ্রিয় হয়েছিল৷ আমার মনে হয় সিনেমাটোগ্রাফারের কাজ এটাই। একটা উত্সাহ তৈরি করা৷ দর্শক যেন ভাবেন যে এই সিনেমাটা হলে গিয়ে দেখতে হবে৷ একটা ভিস্যুয়াল ফ্যান্টাসি যেন তৈরি হয়৷ না হলে দর্শক হলে যান না৷ আজকাল অনেক অপশন রয়েছে৷ আমি নিজেও কিছু দিন পর অ্যামাজন বা নেটফ্লিক্স থেকে দেখে নিই ফিল্ম৷ আমার স্ত্রীও তাই করেন৷ কারণ এটাই সুবিধেজনক৷ টাকাও বাঁচে৷ তা-ও দর্শক হলে গিয়েই ছবি দেখেন৷ সেটাই আমাদের কাজের গুরুত্ব প্রমাণ করে৷’’ এক নিশ্বাসে বলে গেলেন সুদীপ।

সম্মান আর মৃত্যুর মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব নিয়ে সৃষ্টি ‘পদ্মাবত’ আজ সারা দেশে মুক্তি পেল।

চিত্রপট না চিত্তপট, ‘পদ্মাবত’ তাঁর কাছে কী? সেটা সময় বলবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন