kholam kuchi

সৌরভ নাম লেখালেন ঘাসফুলে, না কি অর্পিতা ঝুঁকলেন সিপিএমে? রহস্যের নাম ‘খোলাম কুচি’

শহর-মফস্‌সল, আমিষ-নিরামিষ, আস্তিক-নাস্তিকের দ্বন্দ্ব ছাড়িয়ে রাজনৈতিক পাত পেড়ে দিয়েছে ‘খোলাম কুচি’। সেখানে কে বাম কে ডান? খুলে গেল মোড়ক।

Advertisement

তিয়াস বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০২২ ১৪:৫২
Share:

দ্বন্দ্ব, দোলাচলে নিরন্তর কাটাকুটি?

আমিষ, না কি নিরামিষ? আস্তিক ভাল, না নাস্তিক? দ্বন্দ্ব, দোলাচলে নিরন্তর কাটাকুটি? শহর ছেড়ে ফরাক্কার গল্প বলা। মফস্‌সলের প্রেম। বিয়ের আগে সহবাস। আবারও দ্বন্দ্ব। সৌরভ পালোধীর ‘খোলাম কুচি’ সিরিজের জনপ্রিয়তা যতই বাড়ছে, প্রকট হচ্ছে আর এক জিজ্ঞাসা। দ্বন্দ্ব কি চরিত্রায়নেও নেই? আগাগোড়া কট্টর বামপন্থী সৌরভের সঙ্গে কাজ করছেন তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ অর্পিতা ঘোষ? কে রং বদলাচ্ছেন? সৌরভ তৃণমূলে ঝুঁকলেন, না কি অর্পিতা সিপিএম-এ? দর্শকদের অনেকেই প্রশ্নটা করেছেন পরিচালককে। যার উত্তর দিলেন সৌরভ-অর্পিতা। আনন্দবাজার অনলাইনকে জানালেন, রাজনীতি আড্ডার মাঝে ইয়ার্কির জায়গায়, সবার আগে তাঁরা শিল্পী। এবং, তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গিরও ফারাক নেই। ‘খোলাম কুচি’র নায়ক অনিন্দ্য সেনগুপ্তর ‘পিসিমা’-র চরিত্রে অনায়াসে মানিয়েছেন নাট্যকার অর্পিতা। বললেন, “সৌরভ যখন সিরিজে কাজ করানোর জন্য বায়না ধরল, চরিত্রটা শুনে তবেই রাজি হলাম। এ তো পুরো আমি!”

Advertisement

তবে নিজের বিপরীত চরিত্র হলেও কি করতেন না? অর্পিতার সাফ জবাব, “আমি ক্ষমতায় থাকলেও ক্ষমতা জাহির করার মানুষ নই। কোনও চরিত্র কী ভাবে চিন্তা করে সমাজ সম্পর্কে, মানুষ সম্পর্কে— সেটা বোঝার চেষ্টা করি। কোনও বিজেপি নেত্রীর চরিত্র করতে হলে আগ্রহ নিয়েই করব। তাঁদের দর্শনটা আরও ভাল করে বুঝে নেব সেই ফাঁকে। এ তো শিল্পীর কাজ। আমরা তো সবার আগে শিল্পী। এখানে রাজনীতি আনতে যাব কেন?”

আর সৌরভ? তিনি তো অর্পিতাকে পেয়ে আহ্লাদে আটখানা। জানালেন, অর্পিতাকে ভেবেই পিসিমার চরিত্রটা বানানো। তাঁর নাটক ছোট থেকে দেখে আসছেন। তিনি অসাধারণ অভিনেত্রী। কাজের ক্ষেত্রেও কোনও অসুবিধে হয়নি। তবে কাজ আর রাজনীতি আলাদা নয় বলেই মনে করেন সৌরভ। প্রতিটি কাজের মধ্যেই রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা প্রতিফলিত হয়। তবে কি কৃতিত্ব ‘খোলাম কুচি’র? যার দ্বন্দ্বের পরিধিতে হাত ধরার চেষ্টা করেছে ভিন্ন দুই রাজনৈতিক মেরু? প্রশ্ন রেখেছিল আনন্দবাজার অনলাইন।

Advertisement

সৌরভ বললেন, “রাজনৈতিক মতাদর্শ ভিন্ন হলেও, কাজের জায়গায় আমরা বিশ্বাস রাখি। কিন্তু ‘খোলাম কুচি’ দেখে অনেকেই আমায় ফেসবুক পেজে, ইউটিউব কমেন্ট এমনকি ইনবক্সেও জিজ্ঞেস করেছেন, সৌরভ কি এখন তৃণমূলে যাচ্ছ? নাকি অর্পিতাদি সিপিএম-ঘেঁষা হতে শুরু করল? এমন ফিডব্যাক দেখে অবাক হয়েছি।’’

সেই সঙ্গে এ-ও জানান, অর্পিতার একাধিক রাজনৈতিক পদক্ষেপের বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সৌরভ ও তাঁর দলের কর্মীরা। এই বিরুদ্ধাচার চলতেই থাকবে। একই ভাবে শৈল্পিক হৃদ্যতাও থাকবে অটুট। আগামী দিনে প্রয়োজন হলে আবারও একসঙ্গে কাজ করবেন। সৌরভের কথায়, “এক জন তৃণমূল কর্মী আমার বন্ধু হতে পারেন না? বন্ধুও হব, আবার সে আমার অপছন্দের কাজ করলে প্রতিবাদও জানাব। এই সহাবস্থানটুকুই জরুরি বলে মনে করছি। যদি ভাবতাম, অর্পিতাদি মমতা-ঘনিষ্ঠ তাই ওঁকে এই চরিত্রে ভাবব না, তবে শিল্পের ক্ষেত্রে বড় লোকসান হত। ‘খোলাম কুচি’ আমার মনের মতো হত না।” অন্য দিকে, অর্পিতা বললেন, “সৌরভ আমায় জোর করেছিল বলে রাজি হয়েছি। আমাদের দু’জনেরই এটা একসঙ্গে প্রথম কাজ এবং সিরিজ। চরিত্রটা করতে রাজি হয়েছিলাম খুব ইন্টারেস্টিং বলেই। আমার ভাইপো, এখনকার জেনারেশন। এ দিকে রোজ মন্দিরের সামনে দিয়ে যায়, আর এক বার করে প্রণাম করে। আমরা যখন বড় হয়ে উঠেছি তখন বরং আমাদের কেউ এ কাজ করলে বন্ধুরা ঠাট্টা করত। এখন যে সময়টায় এসে পড়েছি, আমি দেখি মানুষ এগোচ্ছে না, আরও পিছিয়ে যাচ্ছে। অনিন্দ্যর পিসি হয়ে আমি পুরো বিপরীত, মডার্ন। কিন্তু কিছুতেই ভাইপোকে শেখাতে পারিনি। শেষে ওই মেয়েটির সঙ্গে লিভ ইন করতে গিয়ে প্রেম। মনে হয়েছে, এই গল্প খুব প্রাসঙ্গিক। চরিত্রটা আমাদের সময়কার মনে হয়েছে।”

আপনি তো বামপন্থী নন, আবার নাস্তিকও... জিজ্ঞেস করতেই অর্পিতা হুঙ্কার দিয়ে উঠলেন, “কে বলে আমি বামপন্থী নই? আমি তৃণমূলের রাজনীতি করি বলে বামপন্থী হব না? কলেজজীবনে নকশাল করতাম। মার্ক্সিজম নিয়ে আমার ধারণা গুছিয়ে বলতে পারব। কিন্তু কারা ডান, কারা বাম, তা কি এখনকার দিনে কেউ স্পষ্ট ভাবে জানেন? ভারতের প্রেক্ষিতে, পশ্চিমবঙ্গের প্রেক্ষিতে এগুলোই তো গুলিয়ে গেছে। আমি নাস্তিক। আমি একশো ভাগ নাস্তিক। আসলে আমি আমার মতো। রাজনীতিতে এসেছিলাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ব্যক্তিগত ভাবে পছন্দ করি বলেই। তার মানে আমি ডানপন্থী হয়ে গেলাম? এগুলো সমাজ থেকে বেঁধে দেওয়া ধারণা। আমি অনেক বামপন্থীকে জানি যারা ডানপন্থীদের থেকেও বেশি ডানপন্থী।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন