জঙ্গল বুক টাইম মেশিনে চড়ে পৌঁছে যান শৈশবে

অনুগ্রহ করে নিজেদের মোবাইল বন্ধ করে দিন। সিট বেল্ট বেঁধে নিন। আর কিছু ক্ষণের মধ্যেই জঙ্গল বুক টাইম মেশিনে চড়ে পৌঁছে যাবেন আপনার ফেলে আসা শৈশবে। পরবর্তী ১০৩ মিনিট আপনি হয়ত কাটাতে চলেছেন আপনার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত...

Advertisement

সুদীপ দে

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৬ ১৩:৩২
Share:

অনুগ্রহ করে নিজেদের মোবাইল বন্ধ করে দিন। সিট বেল্ট বেঁধে নিন। আর কিছু ক্ষণের মধ্যেই জঙ্গল বুক টাইম মেশিনে চড়ে পৌঁছে যাবেন আপনার ফেলে আসা শৈশবে। পরবর্তী ১০৩ মিনিট আপনি হয়ত কাটাতে চলেছেন আপনার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত...

Advertisement

হ্যাঁ, একটুও বাড়িয়ে বলছি না আমি। নব্বইয়ের দশকে দূরদর্শনে অ্যানিমেটেড টিভি সিরিজ জঙ্গল বুক প্রতি রবিবার এক অদ্ভুত সুন্দর কল্পনার জগতে নিয়ে যেত ওই সময়ের অসংখ্য কচিকাঁচাকে। এই টিভি সিরিজেই আমার সঙ্গে প্রথম দেখা হয় এই গল্পের নায়ক খুদে মোগলির সঙ্গে। যে এক গাছ থেকে আরও এক গাছে অনায়াসে লাফিয়ে বা গাছের ডালে ঝুলতে ঝুলতে জঙ্গলের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়াত, খেলে বেড়াত। কাঁচা হাতে বানানো আদিম বুমেরাং ছুড়ে গাছের ফল পেড়ে ফেলত অবলীলায়। ওই ছোট্ট মানব শিশুটি কী করে এক পাল শেয়ালের পরিবারের সদস্য হতে পারে বা জঙ্গলের শেয়াল, ভাল্লুক বা কালো বাঘের সঙ্গে কথা বলতে পারত কখনও মনে কোনও প্রশ্ন জাগেনি দেশের লক্ষাধিক কচি ব্রিগেডের। উল্টে সে সব দেখার লোভে আগাম হোম ওয়ার্ক করে রাখা, সময় মতো অপছন্দের নানা খাবার চটপট সাবার করে একছুট্টে সাদা কালো টিভির ঢাকনা খুলে বসে পড়া চোখ খুলে স্বপ্ন দেখার জন্য। মোগলির দেখাদেখি মা-কাকিমার শাড়ি-ওড়না ঝুলিয়ে তাতে ঝুলতে গিয়ে কোনও ছোটখাটো অঘটন ঘটিয়ে নিত্যদিন বকুনি খাওয়া বা প্লাস্টিকের বুমেরাং বাড়ির ফুলদানি, জলের বোতল তাক করে ছুড়ে টিপ প্র্যাকটিশ করা...এ সব কটা বাচ্চা করেনি বলুন তো সে সময়!! বইয়ের পড়া মনে না থাকলেও আগের রোববার দেখা জঙ্গল বুক-এর গল্পের প্রায় সবকিছু একেবারে মুখস্ত। বই-খাতার মলাটে, ওয়াটার বটলে জঙ্গল বুক-এর স্টিকারে স্টিকারে ভর্তি। মোগলি, বালু, বাগিরা, কা, মোগলির শেয়াল মা রক্ষা আর হাড় কাঁপানো ভিলেন শের খান—এরাই তখন খুদে স্কুল পড়ুয়াদের গল্প-আড্ডার বিষয়।

সেই টিভি সিরিজ শেষ হয়ে গিয়েছে বহুদিন। সে সময়ের কচিকাঁচারাও আর ছোট নেই। কিন্তু বর্তমানে ৩০-৩৫-এর মনটা যেন আরও একবার সেই সময়ে ফিরে গেল, হারিয়ে গেল তাঁদের ফেলে আসা শৈশবে। কচিকাঁচাদের নিয়ে সিনেমা হলে ডিজনির সদ্যমুক্তি পাওয়া ‘দ্য জঙ্গল বুক’ দেখতে গিয়ে তাঁরাও যেন হয়ে গেলেন সেই ছোট্টটি। রুডিয়ার্ড কিপলিং-এর কালজয়ী সৃষ্টি ‘দ্য জঙ্গল বুক’ অবলম্বনে অভিনেতা-পরিচালক জন ফেবরোর সদ্য মুক্তি পাওয়া অনবদ্য ছবিটি এখন গোটা ফিল্মি দুনিয়ার বেশ প্রশংসিত। আট থেকে আশি—সব বয়সের দর্শকদেরই মন জয় করেছে মোগলি, বালু, বাগিরা, কা, রক্ষা, শের খানরা।

Advertisement

এই ছবির সিনেমাটোগ্রাফি এক কথায় অসাধারণ। ছবির অ্যানিমেশন ইম্পসিংও অনবদ্য, যে কারণে ছবিতে জঙ্গলের পরিবেশ, বাঘ-ভালুকের সঙ্গে মানুষের সহাবস্থান, সবই বাস্তবের চেহারা নিয়েছে। ছবির অ্যাকশন ও থ্রিলিং অ্যাডভেঞ্চার দর্শকদের স্বপ্নাচ্ছন্ন করেছে।

তবে যেহেতু কিপলিং-এর জঙ্গল বুক মূলত ভারতীয় পটভূমিতে রচিত হয়েছিল, সেহেতু এর প্রতি একটা নাড়ির যোগ অনুভব আমরা। হয়তো এই কথা মাথায় রেখেই ছবিটির হিন্দি ডাবিং এবং ভারতে মুক্তি নিয়েই বেশি গুরুত্ব দিয়েছে হলিউডি পরিচালক-প্রযোজক সকলেই।

গল্পের কথক কালো প্যান্থর বাগিরা। বাগিরার ডাবিংয়ে ওম পুরির তুলনা হয় না। এ ছাড়া বালুর চরিত্রে ইরফান খান এবং তাঁর পঞ্জাবি স্টাইলে অদ্ভুত ধরনের ডায়লগ ডেলিভারি দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। কা-এর চরিত্রে ভয়েস দিয়েছেন প্রিয়ঙ্কা। ছবিতে পাঁচ মিনিটেরও কম সময়ের উপস্থিতিতে প্রিয়ঙ্কার কণ্ঠস্বর দর্শকদের মনে মায়াজাল বুনতে সক্ষম হয়েছে। আর শের খানের ভয়েস নানা পটেকরের। যেমন ডায়লগ ডেলিভারি, তেমনই ভয়েস মডিউলেশন...এক কথায় পারফেক্ট ভিলেন। ছবিতে রক্ত ফুলের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। কী এই রক্ত ফুল? সঠিক ব্যবহার জানলে এই রক্ত ফুল রক্ষা কবচ হয়ে উঠতে পারে। ব্যবহার না জানলেই সর্বনাশ! জঙ্গলের সবাই, এমনকী গল্পের ভিলেন শের খানও ভয় পায় এই রক্ত ফুলকে। গল্পের ক্লাইম্যাক্সে এর একটা অসাধারণ ব্যবহার রয়েছে। তবে সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে মোগলির অভিনয় বা ছবিতে নীল শেঠির অসাধারণ কাজ। মোগলির ভূমিকায় যিনি এক কথায় অদ্বিতীয়। গল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছবিটি টানটান উত্তেজনায় ভরা।

সব শেষে বলব, সময়ের উপর তো কারুর নিয়ন্ত্রণ নেই। তাই সময়ের নিয়মেই আমাদের ফেলে আসা শৈশব আমাদের নাগালের বাইরে। তবে জন ফেবরোর ‘দ্য জঙ্গল বুক’ আমাদের পৌঁছে দিতে পারে আমাদের ফেলে আসা শৈশবে। তাই অন্তত ১০৩ মিনিটের জন্য নিজেদের ছেলেবেলাটা ফিরে পাওয়ার সুযোগ কিছুতেই হাত ছাড়া করবেন না। তবে ভারতীয় পটভূমিতে রচিত কিপলিং-এর এই অমর সৃষ্টি টিভি সিরিজ হিসেবে আমারা হিন্দিতেই প্রথম দেখেছিলাম। তাই শৈশবের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে ডিজনি প্রডাকশনের এই ছবিটি হিন্দি ভাষাতেই প্রথম দেখা উচিত বলে আমার মনে হয়। তার পর না হয় বেন কিংসলে, স্কারলেট জোহানসন দের ইংলিশ ভার্সানটাও দেখবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন