Entertainment News

এ বারের ফেস্টিভ্যালে চমকে দিল ‘দ্য হোলি ফিস’

এটি পরিচালকদ্বয়ের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘের ছবি। সাংবাদিক হিসেবে কর্ম জীবন শুরু করা বিমল একই সঙ্গে একজন ছোট গল্পকার। আর সন্দীপ টেলিভিশনের জন্য লেখেন।

Advertisement

মেঘদূত রুদ্র

শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৭ ১৮:১৭
Share:

‘দ্য হোলি ফিশ’ ছবির একটি দৃশ্য। ছবি: ইউটিউবের সৌজন্যে।

ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রত্যেক বারই একটা দুটো করে সারপ্রাইজ ফিল্ম থাকে। এ বারের সারপ্রাইজ ফিল্মটা হল সন্দীপ মিশ্র ও বিমল চন্দ পাণ্ড পরিচালিত ‘দ্য হোলি ফিস’। ফেস্টিভ্যালে ছবিটি অন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা বিভাগে পুরস্কারের দৌড়ে আছে। পুরস্কারের দৌড়ে থাকা বেশ কিছু ছবি এই কয়েক দিনে দেখা হয়েছিল। কিন্তু এই ছবিটি আমার কাছে সব থেকে পাওয়ারফুল ও কমপ্যাক্ট ছবি বলে মনে হয়েছে।

Advertisement

এটি পরিচালকদ্বয়ের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘের ছবি। সাংবাদিক হিসেবে কর্ম জীবন শুরু করা বিমল একই সঙ্গে একজন ছোট গল্পকার। আর সন্দীপ টেলিভিশনের জন্য লেখেন। দুজনেই তাদের আগের কাজ ছেড়ে এসে একসঙ্গে এই ছবিটি বানিয়েছেন। আর দুজনেই গল্পকার হওয়ার দরুন এই ছবির স্টোরি টেলিং একেবারে নিখুঁত। একটা মুহূর্তের জন্যও গল্পে কোন অসংলগ্নতা দেখা যায় না। প্রথম ছবিতে এই জিনিস করতে পারাটা খুব একটা সহজ ব্যাপার নয়। যারা এই পর্যায়টা পেরিয়ে এসেছেন তাঁরা জানেন যে কাজটা কতটা কঠিন। ছবিটির প্রেক্ষাপট এলাহাবাদের মকর সংক্রান্তির কুম্ভ মেলা। ছবিতে বিভিন্ন জাতের বিভিন্ন বয়সী কয়েকজন নারীপুরুষ এই মেলায় আসেন নিজেদের আকাঙ্ক্ষা পুরণের আশায়। তাঁদের সকলের গল্প ছবিতে প্যারালালি চলতে থাকে। একজন বৃদ্ধ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক (পরশুরাম), একজন নব বিবাহিতা তথাকথিত নিচু জাতের মহিলা (সরস্বতী) আর একজন ব্রাহ্মণ যুবক (বোধি)। এঁদের সকলের ভিন্ন ভিন্ন চাহিদা আছে। বৃদ্ধের চাহিদা মোক্ষ প্রাপ্তি। বঁধূটির স্বামী কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন। তাঁর চাহিদা শরীর ও মনের দ্বন্দ্ব থেকে মুক্তি। আর যুবকের চাহিদা সেই নব বঁধুটির প্রণয়ী হওয়া। ভাল-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, পাপ-পুণ্যের অদ্ভুত এক দোলাচল চলতে থাকে গোটা ছবির শরীর জুরে। ছবিটি আমাদের প্রাচীন ধর্মীয় বিশ্বাস, লোকগাথা আর বাস্তবের এক মহা সঙ্গমস্থল হয়ে ওঠে। প্রতিনিয়ত প্রশ্ন করতে থাকে আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিকে। জাতপাতের ভেদাভেদকেও হালকা করে ছুঁয়ে যায়। ছবিতে পৌরাণিক পবিত্র মৎসকে কেউ ছুঁতে পারে না, কিন্তু ছবিটি অনেক কিছুকেই ছুঁয়ে যায়। যে ছোঁয়া বুকের মাঝে ঢেউ তোলে।

আরও পড়ুন, পেন-এক রাতানারুয়াং— এত দিন কোথায় ছিলে গুরু!

Advertisement

আরও পড়ুন, দেশবিদেশের সিনেমা-নাবিকেরা নোঙর ফেলুক কলকাতায়

ছবিতে কুম্ভমেলার যে ডকুমেন্টেশন করা হয়েছে তা এক কথায় অনবদ্য। ছবির ভিজুয়ালের থেকেও ইন্টারেস্টিং হল তার সাউন্ডস্কেপ। এতো ডিটেইল্ড আর বাস্তব কুম্ভমেলা ছবির পর্দায় আমি আগে দেখিনি। বাংলায় কালকূটের কাহিনি অবলম্বনে দিলিপ রায় ‘অমৃত কুম্ভের সন্ধানে’ ছবি বানিয়েছিলেন। সেটিও খুবই ভাল ছবি ছিল। কিন্তু এই কুম্ভ তার থেকেও জীবন্ত। প্রায় ছুঁয়ে ফেলা যায়। ছবির অভিনেতারা এত ভাল অভিনয় করেছেন যে, তাঁরা যে আসলে অভিনেতা সেটা একবারের জন্যও বোঝা যাচ্ছিল না। বিশেষ করে বৃদ্ধ পরশুরামের ভূমিকায় অভিনয় করা ইকবাল আহমেদের এক্সপ্রেশন অপূর্ব। শেষ হওয়ার পরে নন্দন-১ এ ছবিটি স্যান্ডিং ওভেশন পেয়েছে। যেই ওভেশন অনেকটাই ছিল ইকবাল সাহেবের জন্য। আর পরিচালকদ্বয়ের কৃতিত্ব এখানেই যে, তাঁরা যে ছবিটা মনে মনে বানাতে চেয়েছিলেন, বাস্তবে কোনও কম্প্রোমাইজ না করে সেই ছবিটাই বানিয়েছেন। এত সুন্দর একটা অনুভূতি দেওয়ার জন্য টিম ‘দ্যা হোলি ফিস’-কে আমাদের তরফ থেকে টুপি খুলে সেলাম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন