সোহা আর আমার বিয়েটা হবে পরিবারের জন্য

শ্যুটিংয়ের জন্য প্রায় এক মাস কলকাতায়। তারই ফাঁকে বিয়ে, বৌদিবাজি, ফুচকা, কেরিয়ার— সব নিয়ে কথা বললেন কুনাল খেমু। শুনলেন অরিজিৎ চক্রবর্তীশ্যুটিংয়ের জন্য প্রায় এক মাস কলকাতায়। তারই ফাঁকে বিয়ে, বৌদিবাজি, ফুচকা, কেরিয়ার— সব নিয়ে আনন্দplus-এর সঙ্গে খোলামেলা আলাপচারিতায় কুনাল খেমু।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৪ ০০:০২
Share:

এই প্রথম কলকাতায় আসা। জন্মদিনটাও কাটালেন কলকাতাতেই। আর এই এক মাস কলকাতায় শ্যুট করে ইন্সটাগ্রামে ছবির সংখ্যা বাড়িয়ে ফেলেছেন দ্বিগুণ।

Advertisement

“আমি তো প্রেমে পড়ে গিয়েছি শহরটার। শ্যুটে যেখানে যেখানে গিয়েছি ছবি তুলেছি। ৪০-এর উপর তো হবেই। একটা অদ্ভুত ভিন্টেজ লুক আছে কলকাতার। খাবারগুলোও কী সুন্দর! আমি তো একদিন বেরিয়ে ফুচকাও খেয়েছি। রাতে শহরটাকে দেখে মনে হয়, যেন আটকে আছে সময়টা,” বলছিলেন কুনাল খেমু। তাঁর নতুন ছবি ‘গুড্ডু কি গান’য়ের শ্যুটিংয়ে এসেছিলেন কলকাতায়।

যদিও এ শহরের ‘ওল্ড ওয়ার্ল্ড চার্ম’য়ে সম্মোহিত হলেও গরমে কষ্ট পেয়েছেন বেশ। “উফ্, পরের বার আর গরমে আসব না,” হাজরার সুজাতা দেবী বিদ্যামন্দিরের সিঁড়িতে বসে বলছিলেন কুনাল। সামনের সুজাতা সদনে রিহার্সাল হওয়ার কথা। গত দু’দিন বৃষ্টি হওয়ায় অবশ্য ডেনিম শার্ট পরতে পেরেছেন। “ঘামে জামা-কাপড় নোংরা হলেও ক্ষতি নেই। আমি তো ডিটারজেন্ট পাউডার বিক্রি করি!” চোখ টিপে বলছিলেন ‘গুড্ডু’।

Advertisement

এই ছবিতে তিনি গুড্ডু। বিহার থেকে কলকাতায় আসা এক ডিটারজেন্ট পাউডার বিক্রেতা। বিক্রি করা তো বাহানা মাত্র। আসল উদ্দেশ্য ‘বৌদিবাজি’, যে কোনও উপায়ে মহিলাদের শোয়ার ঘরে ঢোকা। নিজে কতটা ‘বৌদিবাজ’ তিনি? প্রশ্ন শুনে হেসে ফেললেন। হাসতে হাসতেই উত্তর দিলেন, “একদম না। তবে বৌদি পটানোর কত টেকনিক শিখলাম শ্যুট করতে করতে ভাবতে পারবেন না।” এই ছবিতেই তাঁর সঙ্গে অভিনয় করেছেন পায়েল সরকার। কুনালের কেমন লাগল এই বাঙালি নায়িকাকে? “পায়েল ভীষণ ট্যালেন্টেড। এখানে এসে মনে হয়েছে বাঙালিরাই আসলে বেশ ট্যালেন্টেড। পায়েলের সঙ্গে কাজ করতে তাই খুব সুবিধা হয়েছে।”

চরিত্রের সৌজন্যে এই একমাস বাঙালি ‘বৌদি’দের সঙ্গে প্রেম করলেও সোহা আলি খানের সঙ্গে তাঁর প্রেমপর্ব কিন্তু প্রায় ছ’বছর হতে চলল। পাঁচ বছর হয়ে গেল শর্মিলা পটৌডি খানের মেয়ের সঙ্গে ‘লিভ ইন’ রিলেশনশিপে আছেন। কুনাল শ্যুটিংয়ে কলকাতায় ব্যস্ত থাকায় সোহাই এসেছিলেন শহরে। “ঘুরিয়ে দেখাল কলকাতা। আমি তো এই প্রথমবার এলাম। ও তো দু’মাসে একবার করে আসেই,” বলছিলেন কুনাল। কিন্তু তাঁদের সম্পর্ক শুরু হল কেমন করে? প্রশ্ন শুনে হেসে ফেলেন কুনাল? বললেন, “সেটা তো আমিও বুঝতে পারি না। লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট তো একেবারেই নয়। কিন্তু কী জানেন, আমাদের সম্পর্কে ‘অপোজিট অ্যাট্রাক্টস্’ কথাটা হয়তো সব থেকে বেশি মানায়। এখনও তো বাড়িতে সোহা ব্রিটিশ সিটকম দেখে। সোহা টিভি ছাড়লে আমি অ্যাকশন মুভি দেখি,” বললেন কুনাল। স্বীকার করছেন বাড়িতে টিভির রিমোট সোহারই দখলে।

টিভির রিমোট অন্য কারও হাতে থাকলেও কেরিয়ারের রিমোট কারও হাতে ছাড়েননি কুনাল খেমু। কেরিয়ারের শুরুতে ‘কলিযুগ’, ‘ট্র্যাফিক সিগনাল’য়ের মতো সিরিয়াস সিনেমা করলেও ‘গোলমাল থ্রি’ বা ‘গো গোয়া গন’য়ের মতো ‘আউট অ্যান্ড আউট’ কমেডিও করেছেন নিজের সিদ্ধান্তে। “প্রথম থেকেই ঠিক করেছিলাম কিছুতেই টাইপকাস্ট হব না,” গলায় আত্মবিশ্বাসটা ধরা পড়ে। ১৯৯৮-এ মহেশ ভট্টর ‘জখিম’য়ে অভিনয় করার জন্য বেস্ট চাইল্ড আর্টিস্টের অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তার পরে অনেক ছবিতেই তাঁর অভিনয় সমালোচকদের প্রশংসা পেলেও, সেরা অভিনেতার পুরস্কার আর পাওয়া হয়নি! সেটা মনে করে কখনও খারাপ লাগে না তাঁর? একটুও না ভেবে কুনাল বলা শুরু করেন, “প্রথমদিকে ভীষণ খারপ লাগত। ক্রিটিকদের প্রশংসা শুনে মনে হত, এ বার বেস্ট অ্যাক্টরের অ্যাওয়ার্ডটা পেয়ে যাব। কিন্তু বারেবারে আশাহত হয়েছি। পরে মনে হয়েছে, আরে, পাঁচজন বিচারকের আমাকে ভাল লাগেনি, তাই পুরস্কারটা পাইনি। ওটা ভেবে মন খারাপের মানে হয় না।”

এর মধ্যেই ‘গুড্ডু কি গান’য়ের পরিচালক শান্তনু ও শীর্ষক সে দিনের রিহার্সালের স্ক্রিপ্টটা কুনালের হাতে দিয়ে গেলেন। ২০০৯-এ তিনটে ছবি করেছেন। তারপর তিন বছরে ছবির সংখ্যা তিন। কেন? “চুজি হয়েছি বলতে পারেন,” যোগ করলেন, “সিনেমা ছাড়াও তো অনেক কিছু করার আছে আমার।” তাঁর এই অনেক কিছুর মধ্যে পড়ে ডিপ সি ডাইভিং। মলদ্বীপে গিয়ে ডাইভিংয়ের সার্টিফিকেটও নিয়েছেন। “সোহা আর আমি দু’জনেই বিচ ভালবাসি। ছুটি কাটাতেও। আর যখনই ছুটিতে যাই ডাইভিংটা মাস্ট,” বলছিলেন কুনাল। ফুটবলটাও ভীষণ প্রিয় তাঁর। ‘গুড্ডু কি গান’য়ের শ্যুটিং থাকলেও, ব্রাজিলের ম্যাচ মিস করেননি। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে যে কুনাল আর নেইমারের চেহারার মিল নিয়ে এত কথা হচ্ছে, সেটা কেমন উপভোগ করছেন? “আরে, আমাকে তো সোহা প্রথম এ কথাটা বলে। তারপর আমি দেখলাম, হ্যাঁ, সত্যি তো বেশ একরকম দেখতে। যারা যারা আমাকে এই প্রশ্নটা করছে তাদের বলছি, আমার ক্লোনকে ব্রাজিলে পাঠিয়েছি।”

প্রোডাকশন থেকে ততক্ষণে ডাকাডাকি শুরু হয়ে গিয়েছে রিহার্সালে আসার জন্য। সেখানে তো আর ক্লোন পাঠানো যায় না! অগত্যা উঠে পড়তে হল কুনালকে। যতক্ষণে জুতোর লেসটা বাঁধছিলেন, শেষ প্রশ্নটা করা হল: বছর পাঁচেক লিভ ইনের পর বিয়ের প্রয়োজনীয়তা কতটা? “এটা খুব ভাল প্রশ্ন,” বললেন সোহার পার্টনার। মাথার টুপিটা ঠিক করতে করতে বললেন, “বিয়ে নিয়ে কথা হয়েছে আমাদের মধ্যে। সে সব কথা কিন্তু পরিবার আর সমাজের কথা মাথায় রেখেই। নিজেদের জন্য নয়। সত্যিই বিয়েটা আমাদের কাছে একটা সার্টিফিকেট ছাড়া আর কিছুই না। মনে তো হয় না বিয়ের পর আমাদের সম্পর্ক কোনও ভাবে পাল্টে যাবে। আমরা যেমন ছিলাম তেমনই থাকব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন