Mamata Shankar

Mamata Shankar: উদয় শঙ্করের মেয়ে হয়েও একেবারে মাটির মানুষ, মমতা শঙ্করকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা

বাবা উদয় শঙ্কর,মা অমলা শঙ্কর ,কাকা রবি শঙ্কর হলে আমাদের যে কারও হয়ত মাটিতে পা পড়ত না। কিন্তু সেই মেয়ের পা মাটির সঙ্গেই এক মাত্র সহজ হল।

Advertisement

শৈবাল বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২২ ১১:০৭
Share:

আমার মনে হয়, বাংলার নবজাগরণের মধ্যে যে অভিজাত আত্মঅনুসন্ধান আর অতৃপ্তি ছিল, মমদি তাঁর  বিশ্বস্ত প্রতিনিধি।  —ফাইল চিত্র

একটি মেয়ে খুব ঘরোয়া। কিন্তু সে সব সময় দূরের বাঁশি শুনতে পায়। ঘর, কিন্তু খোলা দুয়ার। সরু শাঁখা তার নিটোল হাতের স্থায়ী স্টেটমেন্ট। কিন্তু কিশোরী বয়সে গায়ে শুধু একটা শাড়ি জড়িয়ে বিশ্বস্ত চরিত্র হতে তার হাত ধরেন তার শ্যামলবরণ মা। বাবা আর মা সারা বিশ্বের সেরা মননের সঙ্গ পেয়েছেন। সে মাকে দেখেছে নিম বেগুন ভাজতে ভাজতে "সামান্য ক্ষতি" আবৃত্তি করে উঠতে,কারণ ভারত সরকারের অনুরোধ, সেই কবিতা উদয় শঙ্কররকে নৃত্যে প্রকাশ করতে হবে।

"তারপর বুঝলি, আলিকাকা (উস্তাদ আলি আকবর খাঁ)এলেন, আরও সবাই এলেন। সে এক আশ্চর্য মহলা শুরু হল.."

Advertisement

বাবা উদয় শঙ্কর,মা অমলা শঙ্কর ,কাকা রবি শঙ্কর হলে আমাদের যে কারও হয়ত মাটিতে পা পড়ত না। কিন্তু সেই মেয়ের পা মাটির সঙ্গেই এক মাত্র সহজ হল।তাই জলপাইগুড়ি শহরের একটি থিয়েটার দলের পঁচিশ বছরের আড্ডায় একটি মেয়ের গান চলতে চলতে আঁচল কোমরে গুঁজে উঠে দাঁড়ান মমতা শঙ্কর। নেচে ওঠেন,'ধন্য আমি মাটির পরে...'।

সেই মেয়ের পা মাটির সঙ্গেই এক মাত্র সহজ হল। —ফাইল চিত্র

ভাদ্রের ভ্যাপসা গরম, মঞ্চে এসি নেই, দুধ সাদা বালুচরি আর হাতে দুধ রঙা শাঁখা নেচে উঠছে নিবেদনের মুদ্রায়।অনাবিল
সহজতা আর গাঢ় সবুজ আভিজাত্যের মধ্যে যে কোনও বিরোধ নেই, সেটা আলোর মত সত্যি হয়ে উঠেছে তাঁর স্বভাবে।

Advertisement

জলপাইগুড়ির মালবাজারে মাঠের মঞ্চে মমদির (আমি ওকে ওই নামেই ডাকি)শো। আটপৌরে হোটেলের ঘরে আনন্দে আছেন ওর স্বামী বাপিদা আর মমদি। (মমদি কিন্তু কর্তাটিকে 'বাপিদা " বলেই উল্লেখ করেন,এটা আমাদের অনেকেরই জানা)।

"দ্যাখ,কী লজ্জা করছে!এঁরা উৎসব উদ্বোধন করতে বলেছেন। এ দিকে আমি তো কস্টিউম এর বাইরে কোনও শাড়ি আনিনি বলে কী সুন্দর একটা নতুন শাড়ি কিনে এনেছেন..."

একটা নীল রঙের তাঁতের শাড়ি। চওড়া পাড়।

তীব্র সংবেদনশীল একটা গাছের পাতার মত মন থাকলে আর সাধন বড় গভীর থাকলে বুঝি এমন হয়।  —ফাইল চিত্র

আমি ভাবছি,আমার সামনে কি সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন-এর এতগুলি ছবির নায়িকা বসে!

এই তো সে দিন,শ্যাম নামের একটি নতুন শিল্পীর করা একটা আটপৌরে নরম খড়কে-ডুরে শাড়ি নিয়ে গিয়েছি মমদির বাড়িতে। মমদির মহলা চলছে। শাড়িটা বুকে জড়িয়ে মমদির বয়ান,"বাংলার এই শাড়িগুলিতে মা ঠাকুমার আদর মাখা আছে রে।"

আমার মনে হয়, বাংলার নবজাগরণের মধ্যে যে অভিজাত আত্মঅনুসন্ধান আর অতৃপ্তি ছিল, মমদি তাঁর বিশ্বস্ত প্রতিনিধি।

আমি নবনীতাদি(দেব সেন) ছাড়া এমন কোনও মানবী দেখিনি যার মধ্যে একই সঙ্গে দৃঢ়তা আর বালিকার মত কোমল লীলা, বিষাদ আর সমর্পণ, জড়িয়ে থাকা আর উদাস একলাটি থাকা, ভেতর থেকে নিরহংকার থেকে গহীন আত্মমর্যাদা লালন করা ,এতগুলি আপাত বিরোধ-এর সহবাস। ভেতরে তীব্র সংবেদনশীল একটা গাছের পাতার মত মন থাকলে আর সাধন বড় গভীর থাকলে বুঝি এমন হয়।

জন্মদিনের প্রণাম আর ভালোবাসা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন