বিয়ে হোক ভিন্টেজ লুক-এ

ফিনফিনে শাড়ির নীচে ফুটে ওঠা শারারা। জমকালো ব্লাউজের ইশারা। লিখছেন পরমা দাশগুপ্ত গলায় দু’তিন সারি পাথর বসানো মুক্তোর গয়না। চুলের সাজও পুরনো আমলের ধাঁচে। আলগোছে খোঁপা বা একপেশে বিনুনি

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০০:০৭
Share:

স্পোর্টি লুকে কেটেছে দিবস। ডিভা লুকে কেটেছে রজনী।

Advertisement

অতঃপর?

স্রেফ বোর!

Advertisement

তা বলে কি পার্টি-বিয়েবাড়ি কম পড়িয়াছে? মোটেই না। সাজতেও হবে যথেষ্টই। কিন্তু সাজবেনটা কী? সব ‘লুক’ই যে পুরনো হয়ে গিয়েছে!

আর সেই পুরনোতেই কি না নতুন সাজের খোঁজ!

শহরের ডিজাইনারেরা বলছেন, ‘পুরনো’ই হয়ে উঠছে নতুন হালফ্যাশন। ‘ভিন্টেজ লুক’। মানে সেকেলে সাজ যাকে বলে। আর তা যদি হয় এ দেশীয়, বা একেবারে খাঁটি বাঙালি, তবে তো কেল্লাফতে!

মিশন ডিজাইনার-চেক

একেবারে সেই ভিক্টোরিয়ান সাজ। যেমনটা এখন পেন্টিংয়ে দেখা যায়। ডিজাইনারেরা বলছেন, আন্তর্জাতিক ফ্যাশনে সেই ভিন্টেজ লুক ফিরেছে বেশ ক’দিন হল। তবে ভারতে বা এ শহরে ইতিউতি দেখা মিললেও ফ্যাশনে জাঁকিয়ে বসতে এখনও বেশ দেরি। তবে তাঁদের মতে, পশ্চিমি পোশাক শুধু নয়, এ দেশেই বা ভিন্টেজ সাজের অভাব কোথায়! নবাবি বা মুঘল আমলের মতো সাজ, এই বাংলার নিজস্ব ঠাকুরবাড়ির ফ্যাশন কিংবা ব্রিটিশ আমলের
বনেদি বাঙালির সাজগোজ— ভিন্টেজ লুকে সাজতে চাইলে অপশনও তো নেহাত কম নেই! পোশাক থেকে গয়না, ব্যাগ থেকে জুতো, সবেতেই পুরনো আমলের ছোঁয়াই আপনাকে করে তুলবে অনন্যা। জমকালো সে সাজের বনেদিয়ানায় রাত-পার্টির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতেও সময় লাগবে না।

পুরানো সেই দিনের কথা

চল্লিশের দশক থেকে ষাটের দশক। এ দেশে সে সময়ের সাজ এখন ‘ভিন্টেজ’। পিছিয়ে যাওয়া যায় ইতিহাসের পাতাতেও। ডিজাইনার অভিষেক দত্ত যেমন বলছেন, ‘‘একটু পুরনো ধাঁচের প্রিন্টেড
শাড়ি, তার সঙ্গে করসেট বা ভেলভেটের ব্লাউজে হয়ে ওঠা যায় সেকালের সুন্দরী। বাঙালিয়ানার খোঁজে ঘরোয়া চালে পরা শাড়ি কিংবা জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির মহিলাদের শাড়ির সঙ্গে সেই লেস বসানো লম্বাহাতা ব্লাউজ—নজর কাড়বে সবই। নবাবি বা মুঘল আমলের ধাঁচে এমব্রয়ডারি করা শাড়ি-ব্লাউজের যুগলবন্দিও হবে জমজমাট। আর একেবারেই পশ্চিমি সাজ চাইলে বাছা যায় চল্লিশের দশকের শর্ট ফ্ল্যাপার ড্রেসের পার্টিওয়্যারও।’’ দেশি পোশাকেই ‘ভিন্টেজ’ হয়ে উঠতে বলছেন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পলও। তাঁর কথায়, ‘‘শিফন, জর্জেট, লেস, অর্গ্যাঞ্জা বা মসলিনের সি-থ্রু শাড়িতে ছোট আঁচল। সঙ্গে ভেলভেটের ঢিলেঢালা কনুই-ছোঁয়া, শরীর ঢাকা ব্লাউজ, কাজ করা পেটিকোট। ভিন্টেজ সাজ রেডি। নবাবি বা মুঘল আমলের মতো জমকালো এমব্রয়ডারি, সোনা-রুপোর কাজও দারুণ দেখাবে সাজে। উত্তরভারতীয় রংবাহারি শিফন হোক বা হায়দরাবাদি মসলিন, কিংবা বনেদি বাঙালি জর্জেট— ফিনফিনে শাড়ির নীচে ফুটে ওঠা শারারা বা পেটিকোট, ব্লাউজে জমকালো কাজের ইশারাটুকুই তো যথেষ্ট। পার্টিতে আপনিই মোহময়ী।’’

সঙ্গে থাকুক

শাড়ি-ব্লাউজ তো হল। ভিন্টেজ লুকে চুলের কায়দা, ব্যাগের ডিজাইন কিংবা জুতোর কেতা— সবই তো হতে হবে মানানসই। অভিষেক বা অগ্নিমিত্রা দু’জনেই বলছেন, ভিন্টেজ সাজে সবচেয়ে খোলে মুক্তোর গয়না। গলায় দু’তিন সারি মুক্তোর মালা বা পাথর বসানো মুক্তোর গয়নাই বাড়তি মাত্রা জোগাবে সাজে। বাঙালি, নবাবি বা মুঘল সাজের সঙ্গে সেকেলে ডিজাইনের সোনার গয়নাও ভাল দেখাবেই। চুলের সাজও হতে হবে পুরনো আমলের ধাঁচে। আলগোছে খোঁপা, মাথার তালু থেকে একপেশে বিনুনি, সামনের দিকটা একটু ফুলিয়েফাঁপিয়ে পেতে আঁচড়ানো চুলে এক ধারে সিঁথি, জারদৌসী কাজ করা চওড়া হেয়ার ব্যান্ড কিংবা কাঠ, সোনা, রুপো, হাতির দাঁতের রকমারি কাঁটায় সাজানো নানা ধরনের খোঁপা এ ধরনের সাজে প্রায় জ্যামিতির স্বতঃসিদ্ধর মতো। জরি বা এমব্রয়ডারির কারুকাজ থাক সঙ্গের বটুয়া বা হাতের ক্লাচব্যাগেও। আর থাক কাজ করা জুতো। পয়েন্টেড ব্যালেরিনা, পাম্প শু বা নাগরা, তাতেও একটু সেকেলে ডিজাইন চাই-ই চাই। এমনকী চশমাও হোক সেকেলে ডিজাইনের বড় বাটারফ্লাই ফ্রেমে।

লাবণ্যে অনন্যা

সেকেলে সাজটাই তো জমকালো। মেক-আপও যদি জমকালো হয়, পার্টিতে আপনি কেন্দ্রবিন্দু হবেনই। ফর অল রং রিজন্‌স। অগ্নিমিত্রা বলছেন, এ সাজে চাই এক্কেবারে ন্যুড মেকআপ। মানে ফ্যাকাশে রঙের লিপস্টিক, হাল্কা রুজ। সঙ্গে চোখের কাজলে একটু লম্বা টান পড়ুক। ব্যস!

একালে সেকাল

ভিন্টেজ ‘লুক’-এ সাজবেন তো? একটা কথা মাথায় রাখা বড্ড জরুরি কিন্তু। সাজটা যেমন জমকালো, তেমনই তার বনেদিয়ানা। তাই উপলক্ষ পেলেই নয়, ভেবেচিন্তে সাজুন। বন্ধুর অ্যানিভার্সারি নয়, বিয়েবাড়ি কিংবা পার্টিই
জমিয়ে দিক সেকেলে সাজের পুরনো আমেজ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন