ভয়টা তাড়া করছে সব সময়, বলছেন মেখলা।
ভয়। এই একটা অনুভূতিই গত কয়েকদিন ধরে আমাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। এত দিন ধরে গান গাইছি, বহু দূরে দূরে অনুষ্ঠান করি। কোনও দিন এমন হয়নি। গত শনিবার দাঁতনে গিয়ে যে অভিজ্ঞতাটা হল, তা অনেকের সঙ্গেই হয়। কিন্তু আমি যেমন ফেসবুক লাইভে সবটা বলেছি, সেটা বেশির ভাগ শিল্পী বলেন না।
সাতটা থেকে সাড়ে সাতটার মধ্যে সে দিন মঞ্চ পাওয়ার কথা ছিল আমার। আমি ঠিক সময়ে পৌঁছেও যাই। কিন্তু গিয়ে দেখি ওখানে সবাই জানতে চাইছে, অনীক ধর কখন আসবে। কারণ সেই কমিটমেন্ট করেছিলেন অনুষ্ঠানের আয়োজন সুব্রত রায়। তাঁর সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে। তিনি বারবারই বলছেন, এই আসছি, এই আসছি। বেশ কিছুক্ষণ এটা চলার পর আমি নিজে অনীকদাকে ফোন করি। অনীকদা বলে, আমি মুম্বইতে আছি। এ সবের কিছুই জানি না। আসল ব্যপারটা জানতে পেরে তখনই অডিয়েন্সের মধ্যে অসন্তোষ শুরু হয়।
আমাকে স্টেজ দেওয়া হয় রাত ১০টা নাগাদ। বাঁশের ব্যারিকেডের ওপর অনেকে ত্রিপলে বসেছিলেন। অনেকে দাঁড়িয়ে ছিলেন। বাঁ দিকে কিছু দর্শক ছিলেন। যাঁদের প্রথম থেকেই দেখে ঠিক মনে হয়নি। প্রথম গান গাওয়ার পরই নাচের গানের জন্য বলতে থাকেন। হঠাত্ই বলতে শুরু করেন, ‘‘এই ওকে নামিয়ে দে তো। এ সব গান শুনতে আসিনি। অ্যাই, নাচের গান কর।’’ তার পর কয়েকটা রিদমের ফোক গান গেয়েছিলাম। ‘শিং নেই তবু নাম তার সিংহ’ গেয়েছিলাম। তখন বলে, এই সব গান চলবে না। আমি বলেছিলাম, আমাকে গাইতে দিন। নাচের গানও গাইব। সেই শুনে রাগে ফুঁসতে থাকেন ওঁরা। মাটিতে পা ঠুকতে থাকেন। জড়ানো গলায়, মদ্যপ অবস্থায় এমন করতে শুরু করেন যে আমি ভয় পেয়ে যাই।
মঞ্চে মেখলা।
আমি নাচের গানও গেয়েছিলাম। একজন অডিয়েন্স থেকে এসে ‘সুন রাহা হ্যায় না...’ গাইতে অনুরোধ করেন। ওটা গাওয়ার সময় বলতে থাকে, এই গান চলবে না। আমরা কি কীর্তন শুনতে এসেছি? আমরা কম্পিটিশন শুনতে আসিনি। তখন বাধ্য হয়ে মুখ খুলি।
আমাকে বলা হয়েছিল, গান গাইতে গাইতে স্টেজ থেকে নেমে বাঁ-দিকে রেসপেক্টেড পুলিশ অফিসারদের কাছে নাচতে নাচতে যেতে। কিন্তু কখনও এমন করি না। সে দিনও করিনি। আমি জানি না, ওঁদের মধ্যে কেউ অফিসার কিনা। তবে কনস্টেবল, সিভিক ভলান্টিয়াররা ছিলেন। তাঁরা এমন অঙ্গভঙ্গিতে আমাকে ডাকছিলেন যেন আমি ওঁদের ভাড়া করা দাসী! স্টেজে হাত জোড় করে বলেছিলাম, আমি যাতে এখান থেকে সুস্থ ভাবে ফিরতে পারি, সেটা আপনারা দেখুন। অনীকদা না আসায় আইসি আমাকে দু’ঘন্টা অনুষ্ঠান করার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু যে অসভ্যতা হচ্ছিল, আমি এক ঘণ্টা ১০ মিনিটের বেশি গান গাইতে পারিনি।
সে দিন ফেরার সময় আয়োজকরাই আমার গাড়ি দিয়েছিলেন। সেটাও আমার ভয় ছিল। কারণ অনুষ্ঠানে ওই অসভ্যতা। তার পর হাইওয়ের ওপর ওদের ঠিক করে দেওয়া গাড়ি, ড্রাইভার— মনের যা অবস্থা, যা খুশি হতে পারে বলে মনে হচ্ছিল তখন।
আরও পড়ুন, ‘জড়ানো গলায় খারাপ অঙ্গভঙ্গি করছিলেন,’ পুলিশের জলসায় ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা মেখলার
আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি, ওই আয়োজক অর্থাত্ সুব্রত রায় পুলিশের টাকা চুরি করে কী করে পালায়? আমারও পারিশ্রমিক পুরো দেননি। আমি কোনও লিখিত অভিযোগ করিনি। কারণ, দু’বছর আগে আমাদের বাড়িতে চুরি হয়েছিল। তখন অভিযোগ করেছিলাম। আজ অবধি সুরাহা হয়নি। কী হবে অভিযোগ করে? নির্ভয়া কাণ্ডের কত দিন পর বিচার হল? আর আমার অভিযোগে কী হবে? আমি ফেসবুক লাইভ করেছি, কারণ বহু শিল্পী এই সমস্যায় পড়েন। কিন্তু কেউ মুখ খোলেন না। সেটা সামনে আনতেই এটা করেছি।
আরও পড়ুন, অবশেষে বিয়ে নিয়ে মুখ খুললেন সুস্মিতা, বললেন...
তবে ভয়টা তাড়া করছে সব সময়। ভাবছি, কী করে বেরিয়ে এলাম ওখান থেকে। পুলিশের অনুষ্ঠানেই এই ঘটনা! অন্য কোথাও আবার হবে না তো? এখনও আমি ওই ট্রমার থেকে বেরিয়ে আসতে পারছি না।
ছবি: মেখলার ফেসবুক থেকে গৃহীত।
(হলিউড, বলিউড বা টলিউড - টিনসেল টাউনের টাটকা বাংলা খবর পড়তে চোখ রাখুন আমাদের বিনোদনের সব খবর বিভাগে।)