অসমে জ়ুবিন গার্গের জন্মদিনে জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, গরিমা গার্গ শইকীয়া। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
বিমানবন্দরে পা রেখেই বুঝলাম, জ়ুবিন গার্গ ‘অতীত’ হয়ে যায়নি। ভীষণ ভাবে ‘বর্তমান’। গোটা রাজ্য ওর ৫৪তম জন্মদিনের উদ্যাপনে মেতেছে। এ রকম জীবন ক’জন শিল্পী পান?
স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে রাজ্যের চিকিৎসকদের সংগঠন— সকলে নানা ভাবে স্মরণ করছে, শ্রদ্ধা জানাচ্ছে আমার ছোট ভাইকে। শুধুই ভাল শিল্পী বলে? একেবারেই না। মাটিতে পা রেখে চলত বলে। পড়ুয়াদের খুব ভালবাসত বলে। দরিদ্রদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে বলে। ওঁরা আজ ‘মানুষ’ জ়ুবিনকে নতুন করে ভালবাসছেন।
দিন দুই আগে হাসপাতাল থেকে বাড়ি এসেছে জ়ুবিনের স্ত্রী গরিমা গার্গ শইকীয়া। আমার ছোট বোন বা ভাইয়ের বৌ— যা বলবেন। ওরা যে আবাসনে থাকে, তার নীচে সুন্দর করে মঞ্চ সাজিয়েছে গরিমা। নীল, সাদা, সোনালি বেলুন দিয়ে সাজানো। জ়ুবিনের ছবি ফুলে ফুলে ঢাকা। কত লোক এসে সেখানে শ্রদ্ধা জানিয়ে যাচ্ছেন! গরিমা চুপচাপ সব কিছু দেখে যাচ্ছে। ওর মুখে যেন ভাষা নেই! আচমকা এত বড় আঘাত! শোকে পাথর সে।
জ়ুবিন গার্গের জন্মদিন উদ্যাপনের কিছু মুহূর্ত। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
হঠাৎ একদল শিশু সেখানে উপস্থিত। আমায় দেখে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে এল। ইশারায় বোঝাল, ওরা কথা বলতে পারে না। কিন্তু জ়ুবিনকে খুব ভালবাসে। কারণ, প্রয়াত শিল্পী ওদের খুবই ভালবাসত। তাই ওরা আজ এসেছে! পরে গরিমার ভাই জানালেন, এ রকম কত মূক-বধির শিশুর দায়িত্ব পালন করেছে আমার ছোট ভাই! কাউকে জানতে দেয়নি।
ওর জন্মদিনে অসমে এসে বুঝলাম, হৃদয়ের কতটা গভীরে জায়গা করে নিলে তবে রাজ্য মাসের পর মাস শোকে ডুবে থাকে!
সারা রাস্তায় শিল্পীর ছবি। যেতে-আসতে যিনি পারছেন, তিনিই হয় ফুল দিচ্ছেন, নয়তো মোমবাতি জ্বালছেন। জ়ুবিনের সমাধিস্থল দেখার মতো। কাতারে কাতারে কালো মাথা। ফুলে, মোমবাতিতে, জ়ুবিনের ছবিতে উপচে পড়েছে আনাচকানাচ। তিল ধারণের জায়গা নেই। তবু সকলে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছেন। তাঁরা জ়ুবিনের সমাধিস্থল পর্যন্ত পৌঁছোবেন। শ্রদ্ধা জানাবেন। তার পর ফিরবেন নিজেদের ঘরে।