‘বাজিরাও মস্তানি’-তে দীপিকা, ‘লুটেরা’-তে রণবীর, ‘এন এইচ টেন’-এ অনুষ্কা
রোম্যান্সের বাদশা, শাহরুখ খান। টানটান অ্যাকশন, সলমন খান। আর রোম্যান্স-অ্যাকশনের চিরাচরিত গণ্ডির ঊর্ধ্বে আমির খান। দীর্ঘ কেরিয়ারে সব ধরনের চরিত্র করলেও তিন খানের নামের সঙ্গে এই ট্যাগগুলো সমার্থক। এই উপাধিগুলির তাঁরা অবিসংবাদী দাবিদারও। কারণ নতুন প্রজন্মের যে ক’জন অভিনেতা প্রথম সারিতে উঠে এসেছেন, তাঁদের কেউই এই ইমেজে ভাগ বসাতে পারেননি। বোধ হয়, তাঁদের লক্ষ্যও সেটা নয়। কারণ নতুন প্রজন্ম ছক ভাঙতে ভালবাসে। তাঁরা চাইলে সব কিছুই করতে পারেন। অ্যাকশন, রোম্যান্স, লার্জার দ্যান লাইফ আবার ছাপোষা চরিত্র— কোনও কিছুতেই তাঁদের ‘না’ নেই। টাইপকাস্ট হওয়া তাঁদের ধাতে নেই। তাঁরা কোনও একটি ইমোশনের মুখ হতে চান না। বরং তাঁদের মুখেই ফুটে ওঠে এই জেনারেশনের নানা অভিব্যক্তি। সেই দলে যেমন আছে কনফিউজড প্রেমিক, সত্যনিষ্ঠ সরকারি চাকুরিজীবী। আবার আছে বাজিরাওয়ের প্রেমিকা মস্তানি, শেক্সপিয়রের হ্যামলেটের বলিউডি সংস্করণ হায়দর।
সাধারণে অসাধারণ
গত কয়েক বছরের বলিউড ট্রেন্ড ফলো করলে একটি বিষয় খুব স্পষ্ট, হিরোর সংজ্ঞা পাল্টাচ্ছে। হিরো মানেই যে সব পরিস্থিতিকে জয় করে ফেলবে, সেই চিন্তাধারায় বদল এসেছে। সাধারণ ছাপোষা মানুষ, তার ভঙ্গুরতা, তার পরাজয় নিয়েও যে ছবির মুখ্য চরিত্র হতে পারে, তা সম্ভব করে দেখিয়েছেন রণবীর কপূর। ‘রকেট সিং:সেলসম্যান অব দ্য ইয়ার’ ছবিটি রণবীরের কেরিয়ারে একটি মাইলফলক। কারণ এই ছবিতে রণবীর শুধু নিজের রোম্যান্টিক ইমেজ ছেড়ে বেরিয়ে আসেননি। পাশাপাশি হিরোর সিংহাসনে বসিয়েছিলেন একটি সাধারণ মানুষকে যে, দুর্নীতির সঙ্গে আপসে রাজি নয়।
রাজকুমার রাও-ও সেই পথেই হাঁটছেন। তাঁর ‘ট্র্যাপড’, ‘নিউটন’-এ মুখ্য চরিত্রে উঠে এসেছে কমন ম্যান। যদিও শাহরুখের মুখেই ‘কমন ম্যান’কে নিয়ে হিট সংলাপ রয়েছে, এই প্রজন্মের কমন ম্যানের তকমা কিন্তু রাজকুমারই দাবি করতে পারেন। হনসল মেটার ‘ওমের্তা’-তেও অন্য রকম চরিত্র করছেন তিনি।
‘হয়দর’-এ শাহিদ এবং ‘নিউটন’-এ রাজকুমার
হিরোসুলভ নয়
মেনস্ট্রিম হিরো নেগেটিভ চরিত্র করার আগে দু’বার ভাবে। কিন্তু সেই চরিত্রে অভিনয় করে সে যদি ছবির হিরো হয়ে ওঠে, তবে তা নিয়ে কথা বলতেই হয়। রণবীর সিংহের কেরিয়ারে সবচেয়ে চর্চিত চরিত্র আলাউদ্দিন খিলজির। এর আগেও অবশ্য ‘লুটেরা’ ছবিতে ধূসর চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। রণবীরের ইউএসপি তাঁর অফুরান এনার্জি। সেই এনার্জিকেই শুধু ক্যাসানোভা ইমেজের চরিত্রে বন্দি না রেখে রণবীর পাখা মেলছেন। তাঁর ঝুলিতে রয়েছে কপিল দেবের বায়োপিকও।
শাহিদ কপূরের শুরুটাও ছিল রোম্যান্টিক। কিন্তু বয়স ও অভিজ্ঞতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনিও হাত পাকাচ্ছেন ভিন্নধর্মী চরিত্রে। বিশাল ভরদ্বাজের ছত্রচ্ছায়ায় কখনও তিনি হয়দর, কখনও তিনি চার্লি। ‘পদ্মাবত’-এ রাজা রতন সিংহের চরিত্রের পরই শাহিদ আবার সাদামাঠা গারোয়ালির চরিত্রে তাঁর পরবর্তী ছবি ‘বাত্তি গুল মিটার চালু’তে। বক্স অফিসের সাফল্য তাঁর চয়েজকে প্রভাবিত করেনি।
অনন্যা আলিয়া
হিরোর সংজ্ঞা যেমন বদলাচ্ছে, পাল্টেছে হিরোইনের সংজ্ঞাও। আর এ ক্ষেত্রে ট্রেন্ডসেটার অবশ্যই আলিয়া ভট্ট। ‘স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার’ দিয়ে ডেবিউ করে দ্বিতীয় ছবি হিসেবে ‘হাইওয়ে’কে নির্বাচন তাঁর কেরিয়ারের দিশা যেমন ঘুরিয়ে দেয়, তেমন ভাবেই বদলে যায় হিরোইনদের দেখার দৃষ্টিভঙ্গিও। কমার্শিয়াল দুলহনিয়া হওয়ার পাশাপাশি তিনি করেছেন মেরি জেনের (উড়তা পঞ্জাব) মতো নির্যাতিতার চরিত্রও। ‘গাল্লি বয়’ বা ‘রাজি’তেও তিনি যে দর্শককে নতুন চমক দেবেন, তা সহজেই অনুমেয়।
‘রকেট সিং...’-এ রণবীর এবং ‘হাইওয়ে’-তে আলিয়া
আলিয়ার চেয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে সিনিয়র দীপিকা পাড়ুকোন ও অনুষ্কা শর্মা। শাহরুখের সঙ্গে রোম্যান্স করেই তাঁদের পথচলা শুরু। সেই রোম্যান্স গ্ল্যামারের হাতছানি উপেক্ষা করে অন্য ধরনের চরিত্র খুঁজতে সময় লেগেছে দু’জনেরই। এখন তাঁরা কেরিয়ারের যে পর্যায়ে, সেখানে প্রতিটি ছবিতেই নিজেদের ভাঙতে চাইছেন। অনুষ্কার ‘পরি’ আর ‘সুই ধাগা’য় তাঁর লুকই সে আভাস দিচ্ছে। সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর তিনটি ছবির ‘মিউস’ দীপিকা বিশাল ভরদ্বাজের পরের ছবিতে মাফিয়া কুইন সপনা দিদির চরিত্রে।
শাহরুখ-সলমনের সমসাময়িক একমাত্র অক্ষয়কুমারই আছেন, যিনি অ্যাকশন-কমেডির জঁর ছেড়ে নতুন জঁরের ছবি একের পর এক করে চলেছেন। তাঁর অনুপ্রেরণা কি এই প্রজন্মের অভিনেতারা? তা অবশ্য জানা নেই। তবে এই জেনারেশনের প্রত্যেকেই গর্ব করে বলতে পারেন, হম কিসি সে কম নেহি।