• আজকাল নায়করাও গায়ক। সলমন খানও প্লে ব্যাক করেন। গান গাওয়াটা কি তা হলে এতই সহজ? আর নাম কেনাটাও। রেওয়াজ বা সঙ্গীত শিক্ষার কি তা হলে কোনও মূল্য নেই? সেটা কি তা হলে শুধুই সেল্ফ স্যাটিসফ্যাকশনের জন্য?
মিমি দাশগুপ্ত, গড়িয়া
রাশিদ খান: না, গান গাওয়া মোটেই এতটা সহজ নয়। সাধনার বিষয়। তবে হ্যাঁ, কারও প্যাশন ফর মিউজিক থাকতেই পারে। সে গান নিয়ে নানান রকম এক্সপেরিমেন্ট করতে পারে। সলমন হয়তো সে কারণেই গেয়েছেন। সেটা তাঁর নিজস্ব ব্যাপার। সলমনের গান এখনও শোনা হয়ে ওঠেনি আমার।
এখানে একটা কথা বলি। সঙ্গীত শিক্ষা বা রেওয়াজের অবশ্যই মূল্য আছে। কিন্তু আজকালকার বাবা-মায়েদের কি সেই বিশ্বাস ও ধৈর্য আছে? যে তাদের ছেলেমেয়েরা গানটাকে পেশা হিসেবে নেবে? বেশির ভাগই ছেলেমেয়েদের ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার বা এমবিএ পড়াতে চান। অবশ্য ব্যতিক্রমও আছে। আমার ছাত্রছাত্রীদের শেখাতে গিয়ে বুঝেছি, অনেকেই একলব্যের মতো একাগ্রতা নিয়ে গানে ডুবে আছে। সে ক্ষেত্রে হয়তো চটজলদি ফল পাওয়া যায় না। কিন্তু যেটা শেখে সেটার গভীরতা অনেক বেশি হয়। গান শুনলে সেই ফারাকটা বোঝা যায়।
• দীর্ঘদিন ধরে গানের তালিম নেওয়া ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ কী? রিয়্যালিটি শো তাদের অ্যাকসেপ্ট করে না। এই সব শোয়ের প্রো়ডিউসাররা আনকোরা স্টুডেন্টদের ট্রেইনড করতে চান। তা হলে ট্রেইনড স্টুডেন্টরা কোথায় যাবে?
চন্দ্রাবলী রুদ্র দত্ত, যোধপুর পার্ক
রাশিদ খান: রিয়্যালিটি শো-এ পারফর্মারদের খুব শর্টকার্ট মেথডে বাছাই করা হয়। ওদের প্রোডাক্ট বাজারে বিক্রি করার এটা একটা কৌশল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত অনেকেই বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন যে সহজে সাফল্য পাওয়ার একটাই রাস্তা। উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি কয়েক জন শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী রিয়্যালিটি শো-তে অসফল হয়েছেন। কিন্তু তাঁরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে খুবই সফল। দীর্ঘদিন ধরে মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে রয়েছেন। উল্টো দিকে রিয়্যালিটি শো-য়ে জায়গা পেয়েও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই হারিয়ে গেছেন, এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে। আপনার প্রশ্নের উত্তরে আরও একটা কথা বলি, এই সব রিয়্যালিটি শো-গুলোতে ট্রেইনড প্রোডিউসারের খুব অভাব। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এমন ট্রেইনড প্রোডিউসার নেই যাঁরা ট্রেইনড ছাত্রছাত্রীদের হ্যান্ডেল করতে পারবেন। ফলে সিঙ্গারদের ট্রেনিং দেওয়ার আগে প্রোডিউসারদের ট্রেনিং দেওয়া উচিত বলে আমার মনে হয়।
• স্কাইপে কি রবীন্দ্রনাথের গান শেখা যায়? আপনাকে বললে আপনি কি শেখাবেন?
নন্দিনী দত্তগুপ্ত, অশোকনগর, হাবড়া
শ্রাবণী: আমি স্কাইপ কেন কম্পিউটারেও অভ্যস্ত নই। তবে আজকাল অনেকেই এ ভাবে গান শিখছেন। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত মতামত যদি চাও তা হলে বলি রবীন্দ্রনাথের গান অনেকটাই গুরুমুখী বিদ্যা। বহু খুঁটিনাটি থাকে যেগুলি দূর থেকে যন্ত্রের মাধ্যমে শেখানো বা বোঝানো যায় না।
• গায়কের পরিবারে জন্মেও অনেকে শিল্পী হতে পারেননি। কিন্তু আপনি সেখানে সফল একজন শিল্পী। পরিবারের জন্যই কি আপনার শিল্পী হয়ে ওঠা?
কোয়েল পাল, উত্তরপাড়া
শ্রাবণী: একেবারেই না, পরিবারকে কাজে লাগালে অনেক দিন আগেই আমি শিল্পী হতে পারতাম। সেটা হয়নি। আমি অনেক পরে গানবাজনার জগতে এসেছি। প্রচুর স্ট্রাগল করেছি। এইচএমভি-র পরীক্ষায় প্রথমবার ফেল করেছিলাম। আবার রবীন্দ্রসদনেও প্রথম পরীক্ষায় ফেল করেছিলাম। কিন্তু তার পরেও গান ছাড়িনি। এক দিন সেই এইচএমভি থেকে আমি অ্যালবাম করার অনুরোধ পেয়েছি। এই পাওয়ার আনন্দই আলাদা। গানের জগতে যাঁরা আছেন, তাঁদের জন্য বলি, ধৈর্য ধরতে হবে। লেগে থাকতে হবে। পরিবারের কেউ আছে কী নেই, তাতে কিছু যায় আসে না। হতাশ হলে চলবে না।
• শ্যামল মিত্রের গাওয়া একটা গান নিজে রেকর্ড করে পাঠালাম। আমার বয়স একুশ। পণ্ডিত অমিয়রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ক্লাসিক্যাল শিখি। দমের সমস্যা হয়, কী ভাবে সেটা ওভারকাম করব? আর পিন পয়েন্টে সুর লাগাব কী ভাবে?
অনুরাগ ঘোষ, সল্টলেক
রূপঙ্কর: শ্যামল মিত্রের গান শুনলেই মনে পড়ে যায় তাঁর বেশ কিছু গানের কথা। ‘স্মৃতি তুমি বেদনার’, ‘যদি কিছু আমারে শুধাও’, ‘এ যেন অজানা এক পথ’— কোনটা ছেড়ে কোনটার কথা বলব। তাঁর গলায় একটা রোম্যান্টিসিজম ছিল, উচ্চারণ স্টাইলটাও ছিল একদম আলাদা। আপনি ভাল গেয়েছেন। তবে গানের মাঝে চোরা দম কী ভাবে নেবেন সেটা আপনার শিক্ষক ভাল বলতে পারবেন। দম বাড়ানোর জন্য স্ট্যান্ডিং নোট প্র্যাকটিস করতে হবে। যে স্কেলে গান গাইছেন সেই স্কেলের ‘সা’ ধরে প্রতিদিন রেওয়াজ করে যান দশ থেকে পনেরো মিনিট।
চার সদস্যের গুরুকুলই এ বার সরাসরি সমস্যা সমাধানের জন্য হাজির। লিখুন notationplus@gmail.com য়ে। এক মিনিটের ভিডিয়ো-ও পাঠাতে পারেন। পরের পর্বে পরামর্শ দেবেন উস্তাদ রাশিদ খান, রূপঙ্কর এবং শ্রাবণী সেন।