অনুপম রায়ের সকালের সেই ফোনটা, তা হলে আপনার জীবনটা বদলে দিল?
পুরোটা বদলেছে কি না জানি না। তবে সৃজিত মুখোপাধ্যায় যখন আমার নামে টুইট করেছে দেখলাম, তখন প্লে ব্যাকে হিট হওয়ার ইমপ্যাক্টটা বুঝতে পারছি। আগে সৃজিত মুখোপাধ্যায় ভাবতাম, এখন সৃজিতদা বলার জায়গাটা পেলাম এখান থেকেই।
‘প্রাক্তন’ ছবির এই গান ‘তুমি যাকে ভালবাস’ এখন লোকের মুখে মুখে, ইন্ডাস্ট্রির আর কেউ কিছু বললেন?
একজন সাধারণ মেয়ে হিসেবে যখন দেখছি জয়দা (সরকার), ইন্দ্রদীপ (দাশগুপ্ত)-এর মতো সঙ্গীত পরিচালক, সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার গান নিয়ে লিখছেন, সাধারণ মানুষ ফেসবুকে গান শেয়ার করছেন, আমার কিন্তু হেভি লাগছে। তবে আর্টিস্ট ইমন চক্রবর্তী হিসেবে মনে হচ্ছে এবার দায়িত্ব বেড়ে গেল। বিশেষ করে রাত জাগাটা এবার বন্ধ করতে হবে।
আপনি তো প্রায় সারা রাত ফেসবুকে আড্ডা মারেন, প্রচুর মুগ্ধ পুরুষ বন্ধু আপনার, অ্যাট্রাকটিভ ছবি পোস্ট করেন…..
(একগাল হেসে) সে সব তো থাকবেই। তবে আগেই বলে রাখি এখন বিয়ে করার কোনও প্ল্যান নেই। আমার সবরকম দুষ্টুমি মেনে নিতে পারবে এমন পুরুষের দেখা এখনও পাইনি। অনেক ল়়ড়াই করে পৌঁছেছি এখানে। আমি যেখানে থাকি সেখানে একসময় রেওয়াজ করতে বসলে পাড়াপড়শিদের থেকে শুনতাম ‘তুই কি লতা মঙ্গেশকর হবি না কি? এত গলা সাধার কী আছে? আমাদের ঘুমের বারোটা বাজছে।’ কলকাতায় গান শিখতে আসতাম লোকাল ট্রেনে চেপে, লোকের ধাক্কা খেতে খেতে, তখন গাড়িও ছিল না। তবে ওই ধাক্কাটাই ধৈর্য ধরতে শিখিয়েছে।
আচ্ছা এবার আপনি লিলুয়া ছাড়বেন তো?
না! গাড়িতে আমার বাড়ি থেকে কলকাতা কুড়ি মিনিট। কেন ছাড়ব বলুন তো?
শোনা যাচ্ছে আপনার পিআর নাকি দারুণ! জীবনের প্রথম প্লেব্যাক করছেন নন্দিতা রায় আর শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মতো বিখ্যাত পরিচালকের ছবিতে। তাও আবার ঋতুপর্ণা-প্রসেনজিৎ জুটির ১৪ বছরের কামব্যাকের ছবি, সঙ্গে সঙ্গীত পরিচালক অনুপম রায়!
বিশ্বাস করুন অনুপমদা বা শিবুদাকে কিন্তু বলিনি আমাকে দিয়ে গাওয়াও!
কিন্তু শিবপ্রসাদকে তো আপনি চিনতেন।
চিনি তো অনেককেই। তাতে কী হয়? অনুপমদা হঠাৎই একদিন ফোন করে বলে তোকে ওরিজিনালস গাইতে হবে। কী ছবি তখনও জানি না। একটু ভয়- ভয় করছিল। আমি তো রবীন্দ্রসঙ্গীত, লোকগীতি গাই, ওরিজিনালস তো গাইনি। তবে অনুপমদা গাইয়ে নিল। আর এখন এটা ভেবে খুব ভাল লাগছে মঞ্চে উঠে এ বার বলতে পারব ‘তুমি যাকে ভালবাস’ গানটা আমারই।
লোকে বলে আপনি খুব স্নব, নিজেকে বিরাট কিছু ভাবেন?
(ভীষণ হেসে) আসলে সেই ছোটবেলা থেকেই আমাকে স্নব স্নব দেখতে! কী করব বলুন তো!
শাড়ি ছাড়াও অন্য পোশাক পরে শো করেন, হল্টার পরেও রবীন্দ্রসঙ্গীত গান...
শুনুন, এখন যুগ বদলের সময়। গান একটা প্রেজেন্টেশন। কতটা ভাল গাইলাম মানুষ সেটাই দেখে। আজ ‘প্রাক্তন’য়ের গানটা হিট, তার মানেই আমি কি প্রচুর প্লেব্যাকের অফার পাব? একটা গানে স্টার হওয়া যায় না। আমায় একটানা ভাল গান গাইতে হবে। তখন লোকে নিশ্চয়ই ডাকবে। ডাক পাবই... এই আত্মবিশ্বাস আছে। তবে একটা কথা বলতে চাই...
বলুন না…
একবার আনন্দplus-এই গান নিয়ে সাক্ষাৎকারে এক প্রথিতযশা শিল্পী বলেছিলেন, লোপামুদ্রা-শুভমিতার পর বাংলায় আর গায়িকা নেই। এটা পড়ে খুব মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল! কত আর্টিস্ট ছড়িয়ে আছেন যাঁদের কথা আমরা জানি না... এ সব বলে আমাদের শুধু দুঃখ দেওয়া কেন?
সিনিয়রদের কাছ থেকে কি শুধু দুঃখ পেয়েছেন?
না! তা কেন, মা চলে যাওয়ার পর আমার গুরু স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত যেভাবে আমার পাশে ছিলেন, লোপাদি (লোপামুদ্রা মিত্র) সিকিম থেকে যেভাবে আমায় মানসিক জোর দিয়েছেন, কোনও দিন ভুলব না।
এত যে প্রাক্তনের গানের কথা নিয়ে বলছিলেন, আচ্ছা আপনার ‘প্রাক্তন’ আছে?
আছে। জানেন যখন এই গানটা রেকর্ড করি তখন আমার প্রাক্তনের সঙ্গে মন কষাকষি চলছে। আজ এই সাক্ষাৎকারে ওকে ধন্যবাদ দিতে চাই। ওর কাছ থেকে যে ব্যথা পেয়েছি সেটা থেকেই বোধহয় মনখারাপের গানটা সকলের মন ছুঁয়ে গেছে।
আপনি তো আপনার প্রাক্তনের নাম কিছুতেই বলবেন না, কিন্তু এটুকু বলুন, তিনি কি এই গান শুনেছেন?
হ্যাঁ, ও ফোন করেছিল, বলল খুব ভাল লেগেছে গানটা। আমি একটাও কথা বলিনি, থ্যাঙ্ক ইউ বলে ফোন কেটে দিয়েছি।