‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’ ছবিতে দিব্যজ্যোতি দত্তের ঠোঁটে গাইলেন পদ্মপলাশ হালদার। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
ঠাকুরদা কানাইলাল হালদার কবিগানের মুখ্য গায়ক। ছোট থেকে তাঁর হাত ধরে আসরে যাওয়া। কীর্তন শোনা। বিশেষ ধারার সেই গান আজ তাঁর পরিচয়। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’ ছবিতে নেপথ্যকণ্ঠী হিসাবে প্রথম আত্মপ্রকাশ করলেন পদ্মপলাশ হালদার।
ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তের সুরে জয়তী চক্রবর্তীর সঙ্গে দ্বৈত গান ছাড়াও দু’টি একক কীর্তন গেয়েছেন পদ্মপলাশ। সোমবার প্রকাশ্যে এসেছে রানা সরকার এবং এসভিএফ প্রযোজিত ছবির দ্বিতীয় গান ‘জগন্নাথ স্বামী নয়নপথগামী’। গানে চৈতন্যদেবের ভাবাবস্থা পরিচালক নটী বিনোদিনীর মঞ্চাভিনয়ের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন। একই ভাবে তাই গানেও জয়তী এবং পদ্মপলাশের কণ্ঠ মিলেমিশে একাকার! আনন্দবাজার ডট কম সে প্রসঙ্গ তুলতেই গায়ক বললেন, “ইন্দ্রদীপদা আমাদের দু’জনকে একই আবেগে একটি অংশ গাইতে বলেছিলেন। গানমুক্তির পর দেখলাম, সুরকার নিপুণ দক্ষতায় আমাদের কণ্ঠ মিলিয়ে দিয়েছেন গানের একটি পংক্তিতেই। এই বৈশিষ্ট্য খুব কম গানে শোনা যায়।”
কীর্তন গানের কথা উঠলেই এখনও শ্রোতাদের বড় অংশের ধারণা, ভক্তিমূলক ছবি, প্রার্থনাসভা ছাড়া এই গান শুনবে কে? কীর্তনকে আঁকড়ে ধরার আগে পদ্মপলাশও কি দ্বিতীয় বার ভেবেছিলেন? গায়কের কথায়, “তখন আমার বয়স মাত্র সাত। দাদুর কল্যাণে আমার মধ্যে ভক্তিভাব জেগেছে ওই বয়সেই। অত বিচারবুদ্ধির বয়সও নয় ওটা। শুধু এটুকু বুঝেছিলাম, আমি কীর্তন গাইব বলেই জন্মেছি।” একটু থেমে যোগ করেছেন, “ইশ্বরের ইচ্ছাতেই তাই আমার প্রথম নেপথ্যগান কীর্তন দিয়েই হল।” গায়কের ঠাকুরদাও বোধহয় দূরদর্শী ছিলেন। নাতির নামকরণ করেছিলেন তাই ‘পদ্মপলাশ’। শ্রীকৃষ্ণকে ভালবেসে বৈষ্ণবধর্মও গ্রহণ করেন। কীর্তনের পাশাপাশি গায়ক যে অন্য ধারার গানও শোনান, জানাতে ভোলেননি। তাই ঝুলিতে তাঁর অন্য পরিচয়। ২০২৩-এর ‘সারেগামাপা’ বিজেতা পদ্মপলাশ। সেই জয় এসেছে কীর্তনের হাত ধরেই।
সেই প্রসঙ্গেই গায়ক বললেন, “রিয়্যালিটি শোয়ে কীর্তন ছাড়াও অন্যান্য গান গাইতে হয়েছে। আমার ভক্তিমূলক গানের শিক্ষাগুরু সুমন ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের শিক্ষাগুরু অজয় চক্রবর্তী সব ধারার গান শুনতে, শিখতে এবং গাইতে বলেছেন। আমি সেটাই করি।” পদ্মপলাশের কণ্ঠে তাই শ্রোতারা রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলগীতি যেমন শুনেছেন, তেমনই শুনেছেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, কিশোরকুমার, মহম্মদ রফির গান। “যে কোনও রোম্যান্টিক গান বা বিরহের গান আমায় খুব টানে। যেমন, মান্নাবাবুর গাওয়া ‘যদি কাগজে লেখো নাম’-এর মতো গানও অনুষ্ঠানে শ্রোতা আমার থেকে শুনতে চান।”
কীর্তন তাঁর প্রথম প্রেম। বৈষ্ণবধর্ম গ্রহণ করেছেন ঈশ্বরকে ভালবেসে। রোম্যান্টিক, বিরহের গান বেশি পছন্দের। পদ্মপলাশ কি তা হলে খুবই রোম্যান্টিক? বাস্তবে তাঁরও কি ‘রাধা’ আছেন, যাঁর অনুপ্রেরণায় কীর্তনের প্রতি তাঁর আগ্রহ আরও বেড়েছে?
একটু সময় নিয়ে জবাব দিয়েছেন গায়ক। মৃদু হেসে স্বীকার করেছেন, তাঁরও রাধা আছে। পদ্মপলাশের কথায়, “সব শিল্পীর জীবনেই কোনও না কোনও অনুপ্রেরণাদাত্রী থাকেন। আমারও তেমন কেউ আছেন। তাঁর আগ্রহে কীর্তনের প্রতি ভালবাসা বলুন বা আগ্রহ, গাঢ় হয়েছে।” আরও যোগ করেছেন, তিনি নিজের মধ্যেও ‘রাধাভাব’ অনুভব করেন। “শ্রীরাধার প্রেম, ভালবাসাকে অনুভব করতে পারি আমি। ওঁর সত্তা যেন আমার মধ্যেও মিশে রয়েছে।”
অদিতি মুন্সীও কীর্তনাঙ্গের গান শোনান। তিনিও ‘সারেগামাপা’তে যোগ দিয়েছিলেন। পাশাপাশি, অদিতি রাজনীতিতেও এসেছেন। পদ্মপলাশ কবে আসবেন? এ বার গায়ক হাঁ-হাঁ করে উঠেছেন। বলেছেন, “আর কিছু করি বা না করি, রাজনীতিতে কোনও দিন নয়।” তিনি গান লিখছেন, সুর দিচ্ছেন। গায়কের পাশাপাশি এই ধরনের শিল্পধর্মী কাজে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান পদ্মপলাশ।