Entertainment News

স্বরার শর সামলাতে সত্যজিত্, ঋত্বিকদের ঢাল করলেন ভন্সালী

ওয়েব নিউজ পোর্টাল দ্য কুইন্টকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে আত্মপক্ষ সমর্থনে তিনি টেনে এনেছেন তিন বাঙালি পরিচালকের ছবির কথা। সত্যজিত্ রায়, ঋত্বিক ঘটক এবং হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

মুম্বই শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৮ ১৮:৫২
Share:

স্বরাকে জবাব দিলেন সঞ্জয়।

‘পদ্মাবত’ ছবিতে জহর ব্রত এবং সতী প্রথায় কার্যত তিনি মহত্ত্ব আরোপ করেছেন— তীক্ষ্ণ সমালোচনা ধেয়ে আসার তিন দিন পর এ নিয়ে মুখ খুললেন পরিচালক সঞ্জয় লীলা ভন্সালী। তবে যে অভিনেত্রীর সমালোচনা ঘিরে হইচই আর বিতর্ক দানা বেঁধেছে দেশ জুড়ে, সেই স্বরা ভাস্করের নাম তিনি এক বারও উল্লেখ করেননি। বা পাল্টা আক্রমণেও যাননি পদ্মাবত-পরিচালক। জবাব দিয়েছেন সংক্ষেপে, মেপে, সংযত ভঙ্গিতে।

Advertisement

ওয়েব নিউজ পোর্টাল দ্য কুইন্টকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে আত্মপক্ষ সমর্থনে তিনি টেনে এনেছেন তিন বাঙালি পরিচালকের ছবির কথা। সত্যজিত্ রায়, ঋত্বিক ঘটক এবং হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়। পদ্মাবতের শেষ দৃশ্যে জহর ব্রত দেখানোর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘সেই সাহসী মহিলারা আক্রমণকারীর কাছে নতিস্বীকার না করে নিজেদের বিনাশ চেয়েছিলেন... এই গোটা অধ্যায়টায় আমি কোথাও জহর ব্রতকে সমর্থন করিনি। সত্যজিত্ রায়ের দেবী ছবিতেও তো শর্মিলা ঠাকুরকে অন্ধ ধর্মীয় বিশ্বাসের শিকার হিসেবে দেখানো হয়েছিল। তার মানে তো এই না যে মানিকদা (সত্যজিত্ রায়) ওই অন্ধ বিশ্বাসের প্রচার করেছিলেন।’’

জহর ব্রতর গুণকীর্তন করার অভিযোগ উড়িয়ে সঞ্জয় আরও বলেছেন, ‘‘বিষয়টা অনেকটা মেঘে ঢাকা তারার নায়িকা টিবি রোগাক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন মানে ঋত্বিক ঘটক সেটির প্রচার করেছিলেন... অথবা হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায় আনন্দ ছবিতে প্রচার করেছিলেন ক্যান্সারের। আসলে এটাই তো কাহিনি। এটাই হয়েছিল তখন। কোনও ছবিতে দেখানো প্রতিটি বিষয়ের সামাজিক-রাজনৈতিক ব্যাখ্যা সব সময় এক জন ফিল্ম নির্মাতাকে দিতে হবে কেন?’’

Advertisement

পদ্মাবত দেখার পর একটি ওয়েব পোর্টালে এই ছবি (সুনির্দিষ্ট ভাবে এর শেষ দৃশ্য) নিয়ে গুরুতর অভিযোগ তুলেছিলেন অভিনেত্রী স্বরা ভাস্কর। ভন্সালীকে লেখা তাঁর খোলা চিঠির ভাষা ছিল খুবই আক্রমণাত্মক।

বলিউড-টলিউড-টেলিউডের হিট খবর জানতে চান? সাপ্তাহিক বিনোদন সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

স্বরা লিখেছিলেন, ‘কাউকে সতী বনানো আর কাউকে ধর্ষণ করা একই মানসিকতার এ পিঠ ও পিঠ। এক জন ধর্ষক চেষ্টা করে মহিলাটির জননাঙ্গে আঘাত করতে, জোর করে পেনিট্রেট করতে, ছিন্নভিন্ন করে নিজের ক্ষমতা দেখাতে অথবা তাকে মেরে ফেলতে। সতী-জহরের সমর্থকরা একজন নারীকে মেরে ফেলতে চায় কারণ তাঁর যৌনাঙ্গের পুরুষ মালিকটি আর নেই। দুটো ক্ষেত্রেই চেষ্টা এবং ভাবনাটা হল, মেয়েদের শুধু যৌনাঙ্গের যোগফলে নামিয়ে রাখা।’

‘পদ্মাবত’ ছবির শেষ দৃশ্যে দীপিকা। ছবি: ইউটিউবের সৌজন্যে।

তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘উনিশ শতকে মার্কিন দেশে কালো চামড়ার মানুষদের সাদা চামড়ার মানুষরা পিটিয়ে মারত। সেই বিষয়টা আজকের কোনও ছবিতে এলে তা কি পরিচালকের মতামত নিরপেক্ষ ভাবে দেখানো সম্ভব, না উচিত্? স্বরা লিখেছেন, ‘আপনার ছবির শেষটা দেখে খুব অস্বস্তি হচ্ছিল। যেখানে এক জন অন্তঃসত্ত্বা এবং একটি বাচ্চা মেয়ে আগুনে ঝাঁপ দিচ্ছেন। ...আপনার মনে রাখা উচিত ছিল পাওয়ার অব সিনেমা কী!... দর্শককে এই দৃশ্য আবেগতাড়িত করলেও আমার মনে হয়, কোনও ক্রিটিক ছাড়া এমন দৃশ্য দেখানো সেই ঘটনাতে মহত্ত্ব আরোপ ছাড়া আর কিছু নয়। জহর বা সতীর সমর্থন ছাড়া এটা আর কী বা হতে পারে।...’

ছবির শেষ দেখার পর কী অনুভূতি তাঁর, বলতে গিয়ে স্বরা লিখেছেন, ‘‘আপনার ম্যাগনাম ওপাস দেখার শেষে আমার নিজেকে যোনি বলে মনে হল। আমি যেন সঙ্কুচিত হতে হতে শুধু যোনি-সর্বস্বতে পরিণত হয়েছি। আমার মনে হল বছরের পর বছর ধরে নারী আন্দোলন যে সব ‘ছোটখাটো’ অধিকার অর্জন করেছে— যেমন ভোটাধিকার, সম্পত্তির অধিকার, শিক্ষার অধিকার, সমান আয়ের অধিকার, মাতৃত্বকালীন ছুটি, বিশাখা জাজমেন্ট, দত্তক নেওয়ার অধিকার... এ সব যেন কিছুই হয়নি, কারণ আমরা আবার গোড়ায় পৌঁছে গিয়েছি।’’

আরও পড়ুন, ‘পদ্মাবত দেখে মনে হল, যোনিটাই যেন আমার সব’

আরও পড়ুন, পদ্মাবত বনাম স্বরা: পুরুষতান্ত্রিক মুখ কি বেরিয়ে আসছে বলিউডের

স্বরার এই খোলা চিঠির পরই তাঁকে সোশ্যাল মিডিয়ায় পাল্টা আক্রমণ করেন বলিউডের একাংশ। কোনও কোনও ক্ষেত্রে তা মূল বিতর্ক এড়িয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণের পর্যায়েও পৌঁছে যায়। ভন্সালী অবশ্য তাঁর ছবি নিয়ে এই ধরণের খোলামেলা আলোচনা, সমালোচনাকে সমর্থনই করেছেন। বলেছেন, ‘‘সব সময় সব সমালোচনা ইতিবাচক হয় না। কিন্তু তাতে কী! গণতন্ত্রের অংশ হিসেবে একটা সুস্থ তর্ক-বিতর্ক তো হতেই পারে। আমার ছবি মানুষকে ভাববার একটা অবকাশ তো করে দিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন